কলকাতা, 31 অক্টোবর: শহর থেকে ক্রমেই কমছে বাস। অফিস টাইম বা অফিস থেকে ফেরার সময় রাস্তায় নেমে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের ৷ কারণ, রাস্তায় পর্যাপ্ত বাস না থাকা। এর মধ্যে অবশ্যই রয়েছে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যার বেসরকারি বাস। কিন্তু, কেন এমন ঘটছে ? কারণ খুঁজতে গিয়ে একটা বড় সমস্যা চোখে পড়ছে। জানা গিয়েছে, হাইকোর্টের নির্দেশে 15 বছর পার করে যাওয়া বাস বসে যাওয়ার কারণেই মূলত এমন সমস্যা দেখা যাচ্ছে রাস্তায়।
এই মুহূর্তে পরিবহণ দফতরের হাতে যে তথ্য রয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি মাসের শেষে গিয়ে প্রায় 750টি বাস বসে যেতে চলেছে। বছরের শেষে সেই সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়াবে 1500 কাছাকাছি। এই জায়গা থেকেই প্রশ্ন উঠছে সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার ও বাস সংগঠনগুলির ভূমিকা কী ?
এই নিয়ে জয়েন্ট কাউন্সিল অফ পাস সিন্ডিকেটের অন্যতম নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছে ইটিভি ভারত। তিনি বর্তমান এই অবস্থার জন্য রাজ্য সরকারকে পুরোপুরি দায়ী করছেন। তিনি বলন, "গত সাত বছর ধরে যে রাজ্যে বেসরকারি বাসের ভাড়া বাড়ে না। যেখানে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে ৷ এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বাস চালানো রীতিমতো চ্যালেঞ্জের বিষয়। হাইকোর্টের নির্দেশে 15 বছরের মেয়াদ উত্তীর্ণ বাস বসে যাবে, এটা সকলেরই জানা ছিল। আমরা সরকারকে বারবার অনুরোধ করেছিলাম, করোনার কারণে দু'বছর যে বাস চলেনি এই অবস্থায় সেই বাসগুলিকে আরও কিছুটা সময় চালানোর অনুমতি দেওয়া হোক। কিন্তু, রাজ্য সরকার আমাদের বিষয়টি বিবেচনা করেনি। এই অবস্থায় আমরা বাস মালিক সংগঠনগুলি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি। এই মুহূর্তে উৎসবের মরশুম চলছে । আশা করছি, আদালত খুললেই আমাদের সেই আবেদনের শুনানি হবে ।"
তিনি আরও বলেন, "প্রশ্ন হল, যদি আদালতে শেষ পর্যন্ত আমরা হেরে যাই, তখন আমাদের কাছে কোনও উপায় থাকবে না । বিষয়টি নিয়ে আমরা সরকার পক্ষের সঙ্গেও কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম ৷"
এ বিষয়ে পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, "গোটা বিষয়টি আদালতের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে আমরা। মূলত, আদালতে এর জবাব খোঁজা ছাড়া এই মুহূর্তে আর অন্য কোনও উপায় আমাদের কাছে নেই। কারণ, 15 বছরের বাস বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। সেই জায়গা থেকে আমাদের বিষয়টি নিয়ে অপেক্ষা করতেই হবে ।"
এদিকে, এই মুহূর্তে পরিবহণ দফতর সূত্রে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে করোনার আগে আমাদের মহানগরে 4840টি বেসরকারি বাস ও 2064টি মিনিবাস চলাচল করত প্রতিদিন। এখন শহরের রাস্তায় নামে 3615টি বেসরকারি বাস। মিনি বাসের সংখ্যাও এই মুহূর্তে কমতে কমতে এসে দাঁড়িয়েছে 1498-এ। এরপরও এই অগস্ট মাস থেকে বাস বাতিলের ধাক্কা তো চলছে। মার্চ মাসে গিয়ে বাস এবং মিনিবাস নিলে প্রায় 1500টি বাস শহর থেকে বসে যাবে। আর শেষ পর্যন্ত এটা বাস্তবায়িত হলে সমস্যা বাড়বে সাধারণ মানুষের।
একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাবে। এতদিন পর্যন্ত বালি থেকে ধর্মতলার মধ্যে চলাচল করতো 50টি বাস। এই মুহূর্তে সেই বাসের সংখ্যা কমতে কমতে এসে দাঁড়িয়েছে 17-তে। যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে ডিসেম্বর মাসের 22 তারিখে এর থেকে আরও 7টি বাস বসে যাবে। ফলে ওই এলাকার মানুষদের কী ধরনের দুর্ভোগ হতে চলেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সমস্যা যে শুধুমাত্র বালি-হাওড়া বা ধর্মতলা রুটেই, এমনটা নয়। শহর কলকাতার একাধিক রুটে ছবিটা কম-বেশি একই। আর সেই জায়গা থেকেই বাড়ছে চরম সঙ্কটের আশঙ্কা !