বর্ধমান, 30 মে: অন্য কেন্দ্রগুলির তুলনায় কিছুটা নতুন বর্ধমান পূর্ব লোকসভা ৷ 2009 সালে প্রথম বার ভোটে এখানে জয়ী হন সিপিএম প্রার্থী ৷ 2014-য় এই কেন্দ্রের দখল নেয় তৃণমূল ৷ সেই থেকে বর্ধমান পূর্ব ধরে রেখেছে তৃণমূল ৷ তবে প্রতিটি নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের হার বেড়েছে বিজেপির ৷ আর কমেছে সিপিআই(এম)-এর ৷ কেন্দ্র কি দখলে রাখতে পারবে ঘাসফুল ? নাকি বিজেপি প্রার্থী পদ্মফুল ফোটাতে পারবেন ? 13 মে চতুর্থ দফায় বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পড়েছে 82.48 শতাংশ ৷
এই কেন্দ্রে দাপট তৃণমূলেরই ৷ একুশের বিধানসভা নির্বাচনেও সাতটি বিধানসভায় জয়ী হয় তৃণমূল ৷ বর্ধমান পূর্বের সব বিধানসভাগুলি 'ধানের গোলা' পূর্ব বর্ধমান জেলায় ৷ স্বাভাবিকভাবে এই কেন্দ্রে বরাবর ভোট ফ্যাক্টর থেকেছে কৃষকরা ৷ যাদের কিছু অংশ সংখ্য়ালঘু ৷ কেন্দ্রের ভোটসমীকরণে কি ফ্যাক্টর হবে তারাই, যেখানে প্রতিটি আসনেই কম-বেশি 15 শতাংশ ভোটার সংখ্যালঘু?
বর্ধমান পূর্ব আসনে সংখ্যালঘু ভোটার 22.1 শতাংশ ৷ রায়নায় 23.9 শতাংশ, জামালপুরে 16.1 শতাংশ, কালনায় 15.8 শতাংশ, মেমারিতে 20.4 শতাংশ, পূর্বস্থলী দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে 28 শতাংশ, পূর্বস্থলী উত্তর বিধানসভায় 28.5 শতাংশ এবং কাটোয়ায় 21.8 শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছে ৷
2014 সালে তৃণমূলের সুনীল কুমার মণ্ডলের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল 43.50 শতাংশ, যা আগের থেকে প্রায় 2 শতাংশ বৃদ্ধি পায় ৷ সেবার বিজেপি প্রার্থী সন্তোষ রায় 12.93 শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল ৷ 2019-এর নির্বাচনে 44.52 শতাংশ ভোট পেয়ে কেন্দ্রে জয়ী হন সুনীল কুমার মণ্ডল ৷ আর 38.32 শতাংশ ভোট ঝুলিতে ভরে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসেন বিজেপির পরেশ চন্দ্র দাস ৷ সিপিএমের ঝুলিতে ছিল মাত্র 12 শতাংশের সামান্য বেশি ভোট ৷ অর্থাৎ প্রতিটি নির্বাচনে ধীরে ধীরে নিজের ভোট শতাংশ বাড়িয়েছে বিজেপি ৷ বোঝাই যাচ্ছে, বামের ভোটের ভাগ গিয়েছে রামের ঘরে ৷
এবার বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী শর্মিলা সরকার ৷ যিনি ভোটের রাজনীতিতে একেবারে আনকোরা ৷ তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি বিধায়ক অসীম সরকার ৷ আরেকদিকে সিপিএম প্রার্থী নীরব খাঁ ৷ তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, সংখ্যালঘু ভোট তাদের দিকেই ৷ ফলে বর্ধমান পূর্ব লোকসভা তো বটেই, বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রেও তাদের প্রার্থীর জয় কার্যত নিশ্চিত ৷ যদিও দুই লোকসভা ভোটে বাম প্রার্থীরা সংখ্যালঘু ভোটে থাবা বসিয়েছে বলে মনে করছে শাসক দল ৷ তবে প্রকাশ্যে তারা সেটা স্বীকার করছেন না ৷
বিজেপির দলীয় সূত্রে খবর, গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ঝুলিতে থাকা সংখ্যালঘু ভোটের প্রায় 5 শতাংশ ভোট বামেদের ঝুলিতে গিয়েছে। যদিও বামেদের দাবি, এমনিতে তাদের ঝুলিতে সংখ্যালঘু ভোট 11 শতাংশের বেশি ছিল। এই নির্বাচনে সেই ভোটের শতাংশ অনেকটাই বেড়ে যাবে ৷ আবার তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, এই লোকসভায় 22.1 শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটের বেশিরভাগই তাদের দিকে যাবে ৷ যার ফলে জয়ের পথ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে ৷ কারণ সংখ্যালঘু ভোটের হাত ধরেই রায়না, জামালপুর, কালনা, মেমারি, পূর্বস্থলী উত্তর, পূর্বস্থলী দক্ষিণ ও কাটোয়া বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের মার্জিন বাড়বে ৷
এই প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা সভাপতি অভিজিৎ বলেন, "ভোট পরবর্তী বিশ্লেষণ নিয়ে বিভিন্ন তথ্য দলীয় নেতৃত্বকে পাঠানো হয়েছে ৷ সেই বিষয়ে পরে আলোচনা হবে।" তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, "সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষেই গিয়েছে ৷ ফলে তৃণমূল প্রার্থীর জয় নিশ্চিত ৷" সংখ্যালঘু ভোট কাটাকাটিই কি জয়ের পার্থক্য গড়বে, তাকিয়ে তৃণমূল বিজেপি দু'দলই ৷