সন্দেশখালি, 29 ডিসেম্বর: কথা দিয়ে কথা রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে সন্দেশখালি যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। সেই মতো সোমবার প্রশাসনিক সভায় যোগ দিতে সন্দেশখালি যাচ্ছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।
সন্দেশখালিতে মুখ্য়মন্ত্রী-
আগামিকাল দুপুর 1টা নাগাদ সন্দেশখালির কর্নখালির মিশন মাঠে প্রশাসনিক সভায় যোগ দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রশাসনিক সভা ঘিরে এখন সাজো সাজো রব সন্দেশখালিতে। তাই এদিন চলছে জোরকদমে সভার প্রস্তুতি। মুখ্যমন্ত্রী সন্দেশখালিতে আসার আগেই কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে সভাস্থল ও তার আশপাশ।
সূত্রের খবর, রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হেলিকপ্টারে যাবেন সন্দেশখালি । তার আগে রবিবার হেলিকপ্টারের মহড়া হয়। সোমবার, মুখ্যমন্ত্রী সরকারি নানা পরিষেবা প্রদান করবেন প্রশাসনিক সভা থেকে। সেকারণে একাধিক সামগ্রিক-ও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রশাসনিক সভার আগে রবিবার দুপুরে মিশন মাঠ পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা রক্ষীরা। উপস্থিত ছিলেন একাধিক উচ্চপদস্থ পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকরা।
পরিদর্শনে মন্ত্রী সুজিত
- শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে এদিন যান দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু, সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো, জেলাশাসক শরৎকুমার দ্বিবেদী-সহ শাসকদলের জনপ্রতিনিধিরা। এদিন তাঁরা সবকিছুই ভালোভাবে খতিয়ে দেখেছেন। মাঠ ও হেলিপ্যাড চত্বরে মুড়ে ফেলা হয়েছে পুলিশের কড়া নিরাপত্তায়। লোকসভা ভোটের আগে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়েছিল সন্দেশখালি। সেই কথা মাথায় রেখে মুখ্যমন্ত্রীর সভার আগে বা সভা চলাকালীন যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না-ঘটে, তার জন্য বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
- আনুমানিক প্রায় সত্তরটি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ধামাখালি, তুষখালি, সন্দেশখালি, ভোলাখালি, খুলনা-সহ প্রতিটি জেটি ঘাটে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই ওই জেটিঘাট থেকে প্রচুর মানুষ নদী পেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভায় যোগ দিতে আসবেন। তাঁদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বাইরে থেকেও নিয়ে আসা হয়েছে প্রচুর নৌকা। জলপথেও চলছে তীক্ষ্ণ নজরদারি। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের একাধিক লঞ্চ ও রিকভারি বোর্ড নিয়ে যাওয়া হয়েছে সন্দেশখালি এবং ধামাখালি জেটি ঘাটে।
- এবিষয়ে দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী কী বার্তা দেবেন, সেটা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। উনিই বলতে পারবেন। তবে, এটুকু জানি মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক সভা থেকে প্রায় 20 হাজার মানুষকে বিভিন্ন সামগ্রী প্রদান করবেন। সন্দেশখালিতে জমি কেড়ে নেওয়া নিয়ে যে বিতর্ক ছিল, সেই জমি প্রকৃত মালিকদের হাতে ইতিমধ্যে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। যদিও কেউ বাকি থেকে থাকে, সেটাও জেলাশাসক দেখছে।"
এদিকে, প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বার্তা দেন সেদিকে এখন তাকিয়ে রয়েছে সন্দেশখালির মানুষ। এমনকী, দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে তিনি কোনও কড়া বার্তা দেন কি না, তা নিয়েও তৃণমূলের অন্দরে চলছে জোর চর্চা।
সন্দেশখালি কাণ্ড-
- প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের আগে নারী নির্যাতন, জমি জবরদখল ইস্যুতে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়েছিল সন্দেশখালি। তৃণমূলের জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ (এখন প্রাক্তন) শেখ শাহজাহান ও তাঁর বাহিনীর নারকীয় অত্যাচারের বিরুদ্ধে সেসময় সোচ্চার হয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। সন্দেশখালি ইস্যু রাজ্য তথা দেশের রাজনীতিতেও ঝড় তুলেছিল। এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে লোকসভা ভোটে বাজিমাত করতে কোনও কসুর করেনি গেরুয়া শিবির। যদিও, এতকিছুর পরেও শেষ হাসি হাসেন শাসক শিবির।
- প্রয়াত সাংসদ হাজি নুরুল ইসলাম প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ ভোটে বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রকে পরাজিত করেন বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে। তবে, বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফলের নিরিখে সন্দেশখালি বিধানসভা পিছিয়ে রয়েছে শাসকদল। সেই কথা মাথায় রেখে সন্দেশখালির মাটিতে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী কোনও রাজনৈতিক বার্তা দেন কি না, সেদিকেও লক্ষ্য রয়েছে ওয়াকিবহাল মহলের।