মালদা, 19 নভেম্বর: সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া মালদা জেলা ছাড়তেই অকাল ভাঙন ৷ গঙ্গায় তলিয়ে গেল একাধিক দোকান-সহ বাড়ি ৷ মানিকচকের ঘটনা ৷
সোমবার জেলায় এসেছিলেন সেচমন্ত্রী ৷ সপার্ষদে পরিদর্শন করেছিলেন রতুয়া 1 নম্বর এবং মানিকচক ব্লকের গঙ্গা ভাঙন পরিস্থিতি ৷ ফিরে যাওয়ার সময় গঙ্গাপাড়ের মানুষকে নদীর গ্রাস থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন ৷ তিনি জেলা ছাড়তেই মাঝরাত থেকে তাণ্ডব শুরু হয়েছে গঙ্গার ৷
মানিকচক ঘাট এলাকায় গঙ্গার গ্রাসে চলে গিয়েছে প্রায় আড়াইশো মিটার পাড় ৷ জলে মিলিয়ে গিয়েছে 10 থেকে 12টি দোকান-সহ কয়েকটি বাড়িও ৷ মঙ্গলবার সকাল থেকেই সেখানে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয়েছে বাড়িঘর খুলে নেওয়ার কাজ ৷ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে বিদ্যুৎ সংযোগও ৷ সকালেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বিডিও ৷ পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৈরি রয়েছে সেচ দফতর ৷
সাধারণত নভেম্বরে গঙ্গা ভাঙন দেখা যায় না ৷ সাম্প্রতিক অতীতেও সেই উদাহরণ মনে করতে পারছেন না নদীপাড়ের বাসিন্দারা ৷ তবে সোমবার রাত দেড়টা নাগাদ অকাল ভাঙন শুরু হয় মানিকচক ঘাট সংলগ্ন এলাকায় ৷ সেখানে অনেক দোকান রয়েছে ৷ রয়েছে কয়েকটি বাড়িও ৷ নিমেষের মধ্যে তলিয়ে যেতে শুরু করে দোকানঘর ও বাড়ি ৷ চারদিকে শোরগোল পড়ে যায় ৷ খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে চলে আসে মানিকচক থানার পুলিশ ৷
সেখানকার ব্যবসায়ীরা ওই রাতেই দোকান থেকে মালপত্র সরানোর চেষ্টা শুরু করেন ৷ কিন্তু নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে তাঁদের নিরস্ত করেন পুলিশকর্মীরা ৷ এ দিন সকাল থেকে বেঁচে থাকা দোকানগুলির মালপত্র সরাতে শুরু করেছেন মালিকরা ৷ ভেঙে ফেলা হচ্ছে বাড়িও ৷ অনেকেই পূর্ত দফতরের জায়গায় অস্থায়ী আস্তানা নির্মাণের পরিকল্পনা করেছেন ৷
রাতে নিজের সেলুন গঙ্গায় চলে গিয়েছে ছোটন প্রামাণিকের ৷ এ দিন সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, "তখন রাত প্রায় দুটো ৷ এখানকার লোক ফোন করে জানায়, আমার দোকান নদীতে কেটে যাচ্ছে ৷ সেই খবর পেয়ে ওই রাতেই দোকানে চলে আসি ৷ দোকান থেকে অল্প কিছু মালপত্র বের করতে পেরেছি ৷ উপস্থিত পুলিশকর্মীরা নিরাপত্তার জন্য আমাদের সরিয়ে দিচ্ছিলেন ৷ এখন গঙ্গায় স্রোতের বেগ নেই বললেই চলে ৷ তা সত্ত্বেও কেন ভাঙন হল, কিছু বুঝতে পারছি না ৷ আমাদের উপার্জনের রাস্তাটাও বন্ধ হয়ে গেল ৷ এখন কী করে সংসার চলবে জানি না ৷"
অকাল গঙ্গা ভাঙনে মেশিনারি পার্টসের দোকান হারিয়েছেন মালেক আলিও ৷ তিনি বলছেন, "রাত দেড়টা নাগাদ হঠাৎ ভাঙন শুরু হয় ৷ দেড়শো মিটার এলাকার বিভিন্ন জায়গায় মাটি ধসে গিয়েছে ৷ অনেক দোকান তলিয়ে গিয়েছে ৷ অথচ ভাঙন শুরুর মতো কোনও পরিস্থিতিই ছিল না ৷ কেউ ভাবতে পারেনি, নভেম্বরে গঙ্গার ভাঙন হতে পারে ৷ রাত দুটো নাগাদ আমি দোকান চলে যাওয়ার খবর পাই ৷ এখন কী করে খাব, সেটাই চিন্তা করছি ৷"
মানিকচকের বিডিও অনুপ চক্রবর্তী মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ৷ তিনি বলেন, "এই সময় সাধারণত গঙ্গা নদীর ভাঙন হয় না ৷ তবু গতকাল রাতে মানিকচক ঘাট সংলগ্ন এলাকায় গঙ্গা ভাঙন হয়েছে ৷ কিছু অস্থায়ী দোকান নদীতে ধসে গিয়েছে ৷ সমস্ত বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে ৷" জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়ার কথায়, "পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে ৷ সেচ দফতরকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে ৷"