জঙ্গিপুর, 23 মে: কন্যাসন্তান মা লক্ষ্মীর রূপ ৷ তাই তার ঘরে আগমনও হওয়া উচিত দেবীর মতো ৷ তেমনটাই হল ৷ 12টি গাড়িকে ফুল দিয়ে সাজিয়ে মেয়েকে বাড়িতে বরণ করে তুললেন বাবা ৷ ব্যতিক্রমী ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের এক পরিবারে ৷
একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে আজও আমরা জর্জরিত কুসংস্কারে ৷ তাই আজও কন্যা সন্তান হলে সমাজ তাকে ভালো চোখে দেখে না ৷ মেয়ে মানেই বাড়তি বোঝা ৷ সেই নিম্ন মানসিকতা থেকেই আজও সমাজে কন্যাভ্রুণ হত্যার মতো ঘটনা ঘটে ৷ শহরে থেকে গ্রামে মেয়েদের অত্যাচার ও নির্যাতনের খবরের মাঝেই মন ভালো করা দৃশ্য ধরা পড়ল এই পশ্চিমবঙ্গেই ৷ মুর্শিদাবাদে মেয়ে হওয়ায় আনন্দে আত্মহারা বাবা-সহ গোটা পরিবার ৷
জানা গিয়েছে, গত শনিবার রঘুনাথগঞ্জ থানার উমরপুরে 34 নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ইউসুফ হাসানের স্ত্রী রুকসা পারভিন । ইউসুফ ও রুকসার এটিই প্রথম সন্তান । ওই দম্পতি কন্যা সন্তানই কামনা করেছিলেন । সেই কামনা পূরণ হওয়ায় অত্যন্ত খুশি স্বামী-স্ত্রী দু'জনেই । হাসপাতাল থেকে বুধবার ছুটি দেওয়া হয় রুকসাকে । ইউসুফ নবজাতককে ঘরে নিয়ে যেতে 12টি এসইউভি গাড়ি ভাড়া করে সেগুলিকে ফুল দিয়ে সাজান এবং ওই গাড়িতে আত্মীয়-পরিজনদের নিয়ে হাজির হন হাসপাতালে । এরপর আত্মীয় পরিজনরা পুষ্পবৃষ্টির মাধ্যমে নবজাতক ও প্রসূতিকে অভ্যর্থনা জানান ।
ফুল এবং বেলুন দিয়ে মাতৃযান প্রকল্পের অ্যাম্বুল্যান্স সাজিয়ে ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মিষ্টিমুখ করিয়ে মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যান বাবা-সহ পরিবারের সকলে । জঙ্গিপুরে এমন ঘটনা কার্যত নজিরবিহীন এবং বিরল । গাড়ি সাজিয়ে সদ্যোজাতকে বরণ করে বাড়িতে তোলার পর গ্রামে মিষ্টি বিতরণও করেন ইউসুফ । মেয়ে হওয়ায় মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি থানার জোতকমলের বাসিন্দার এই কর্মকাণ্ডে অবাক সকলেই ৷ যুবকের এমন কাণ্ডে প্রশংসাও করছেন গ্রামবাসীরা ।
সদ্য বাবা হওয়া ইউসুফ হাসান বলেন, "আমার স্বপ্ন ছিল যদি সন্তান হয় তাহলে সে যেন মেয়েই হয় ৷ সেই স্বপ্নপূরণ হল আজ ৷ যখন চিকিৎসকেরা এসে বললেন আমার মেয়ে হয়েছে সেই খুশির বাঁধ ছিল না ৷ সেই আনন্দ থেকেই 12টা গাড়িকে ফুল দিয়ে সাজিয়ে মেয়েকে ঘরে নিয়ে এসেছি ৷ আমি যেন আগামী সময়ে মেয়ের ভালোভাবে দেখভাল করতে পারি তার জন্য সকলের কাছে আশীর্বাদ চাইছি ৷"
তাঁর বার্তা, "সমাজে অনেকে মন করেন মেয়ে হয়েছে মানে জীবন শেষ ৷ এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা ৷ মেয়ে হল লক্ষ্মী ৷ মেয়ের জন্ম হওয়া মানে বাড়িতে লক্ষ্মী এল ৷ কোনও মা-বাবা যেন কন্যা সন্তান হলে কষ্ট না পান ৷ ছেলের মতো মেয়েও আপনাদের পাশে দাঁড়াবেন ৷ মেয়েকে শিক্ষিত করে তুলুন ৷ দুঃখ না পেয়ে মেয়ে হলে সাদরে তাকে গ্রহণ করুন ৷ মেয়েদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রেরণা জোগান ৷ তাহলে আগামিদিনে ছবিটা বদলাবে ৷ মেয়েকে বোঝা না ভেবে সকলে ভাববে বাড়িতে লক্ষ্মী এসেছে ৷"
নাতনিকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা ঠাকুমা ও দাদু ৷ ইউসুফের মা-বাবা বলেন, "আমরা নাতনি হওয়ায় খুব খুশি হয়েছি ৷ মিষ্টি বিতরণ করেছি পাড়ায় ৷" ইউসুফের স্ত্রী রুকসা পারভিনের কথায়, "প্রচণ্ড খুশি আমরা ৷ মেয়ে হওয়ায় আমার স্বামী যেভাবে উৎসব পালন করছে সকলের সেরকম করা উচিত ৷ প্রত্যেকের এরকম মানসিকতা থাকা দরকার ৷"
অন্যদিকে শিশুটি যে বেসরকারি হাসপাতালে জন্ম নিয়েছে সেখানকার চিকিৎসক অরবিন্দ ঘোষ বলেন, "কন্যা সন্তান হওয়ায় ওই পরিবারের পাশাপাশি আমরাও প্রচণ্ড খুশি ৷ পরিবারটি যেভাবে মেয়েকে বরণ করে নিয়েছে তাতে অন্যরাও উৎসাহিত হবে বলে মনে করছি ৷ কারণ এরকম ঘটনা সচরাচর দেখা যায় না ৷ এখনও কন্যা সন্তান হলে সেটাকে সমাজে খারাপ চোখে দেখা হয় ৷"
আরও পড়ুন: