কলকাতা, 27 জুলাই: নীতি আয়োগের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাজির হওয়া আসলে প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রতি সদর্থক বার্তা দেওয়া, বললেন প্রবীণ বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী ৷ আরেকদিকে প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ অধীরের কটাক্ষ তৃণমূল সুপ্রিমো 'আসলে উনি শ্যামও রাখছেন, কুলও রাখছেন' ৷
শনিবার মাইক বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ৷ তিনি অভিযোগ করেন, বাংলা নিয়ে বঞ্চনার কথা বলছিলেন তিনি ৷ 5 মিনিট হতে না হতেই তৃণমূল সুপ্রিমোর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয় ৷ যেখানে অন্য বিজেপি-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা অনেক বেশি সময় পেয়েছেন ৷ এই ঘটনায় কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি আগেই জানিয়েছে, প্রচার পেতে তৃণমূল নেত্রী এই সব অভিযোগ করছেন ৷ অন্যদিকে, রাজ্যের বাম-কংগ্রেসের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর এই আচরণকে 'দুর্বল চিত্রনাট্য' বলে কটাক্ষ করা হয়েছে ৷
বহরমপুরের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী কটাক্ষ করে বলেন, "তিনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) মনে প্রাণে মনে করছেন তিনি জাতীয় নেত্রী ৷ তাই কে কী করল, কে কী বলল, তা না করে তিনি নিজেই নিজের মতো করে এই সমস্তটা করছেন ৷ বাইরে বলছেন ইন্ডিয়া জোটে আছি, ভিতরে আবার মশারির মধ্যে মশারি টাঙাচ্ছেন ৷ আসলে উনি শ্যামও রাখছেন, কুলও রাখছেন ৷"
মমতাকে শীর্ষ আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বঙ্গ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা বলেন, "এসব করে ঢপের রাজনীতি শুরু করেছেন মমতা ৷ তিনি যদি রাজ্যপালের বিরুদ্ধে একাধিক বিষয়ে মামলা করতে পারেন, তাহলে নীতি আয়োগ-এর বৈঠকে যদি ওনার মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে হাত বাড়ালেই দিল্লিতে সুপ্রিম কোর্ট আছে ৷ তিনি এখানে থেকেও কোনও মামলা করছেন না ? আসলে পশ্চিমবঙ্গকে উনি নাটকের একটা মঞ্চ খাড়া করেছেন, তারই একটি রেপ্লিকা এখানে করার চেষ্টা করছেন ৷"
অন্যদিকে, সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "চন্দ্রবাবু নাইডুকে 20 মিনিট বলার সুযোগ দিলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে নীতি আয়োগে বেশি বলতে দেওয়া হয়নি কেন ? এর তীব্র প্রতিবাদ করছি ৷ যদিও এরাজ্যে কোনও প্রশাসনিক সভাতেই তিনি বিরোধীদের ডাকেননি, তবুও উনি দিল্লিতে আরও বেশি গুরুত্ব দাবি করতেই পারেন ! এটা একান্তই তাঁর হক !"
সুজন আরও বলেন, "যাব অথবা কেন যাব, বরাবরের মতোই এই দোলাচলে মমতা ৷ না গেলে মোদিজিকে অমান্য করা হবে। আবার গেলে, ইন্ডিয়া শরিকদের কাছে মমতার দ্বিচারিতা ধরা পড়ে যাবে ৷ এবার নীতি আয়োগে মমতার হাজিরা, আসলে মোদিজিকে সদর্থক বার্তা দেওয়ার জন্যই ৷ কোনওভাবেই রাজ্যের স্বার্থের সঙ্গে এটা সংশ্লিষ্ট নয় ৷"
শনিবার দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বের নীতি আয়োগ-এর বৈঠক হয়। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সাত জন মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় বাজেটে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে বৈঠক বয়কট করলেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাইজিনায় হাজির ছিলেন। কিন্তু, বৈঠক শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি ৷
আর মমতা অভিযোগ করেন, "কয়েক জনকে 20 মিনিটের বেশি বলার সুযোগ দেওয়া হলেও আমাকে পাঁচ মিনিটও বলতে দেওয়া হয়নি। তার আগেই মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই বঞ্চনার প্রতিবাদে আমি বৈঠক ছেড়ে চলে এসেছি।" আর এই বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, "কলকাতা থেকে দিল্লিতে আসার আগেই স্ক্রিপ্ট তৈরি ছিল। সেই স্ক্রিপ্ট মেনেই একটার পর একটা প্লট চলছে শুধু। এমনকী স্ক্রিপ্ট আগেও জানিয়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আসলেই ঈর্ষার থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমস্ত করছেন। জাতীয় স্তরে রাহুল গান্ধির উত্থান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেনে নিতে পারছেন না। এই কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনে প্রাণে অদ্ভুত ঈর্ষার জন্ম নিয়েছে।"