কলকাতা, 27 জুলাই: নয়াদিল্লিতে একদফা তোপ দেগেছিলেন ৷ তার পর কলকাতায় ফিরে আরও একবার নীতি আয়োগের বৈঠক নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ তাঁর দাবি, কেন্দ্রের মোদি সরকার বাংলার বঞ্চনার কথা শুনতে চায় না ৷
উল্লেখ্য, শনিবার নীতি আয়োগের বৈঠক ছিল নয়াদিল্লিতে ৷ সেই বৈঠকে যোগ দিতেই শুক্রবার নয়াদিল্লি গিয়েছিলেন বাংলার মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ কিন্তু মাঝপথেই তিনি বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন ৷ বাইরে এসে তিনি অভিযোগ করেন যে তাঁকে 5 মিনিটের বেশি বলতে দেওয়া হয়নি ৷ তাঁকে থামিয়ে দেওয়া হয় ৷ এই নিয়ে তিনি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন ৷
ফলে সকাল থেকেই এই ইস্যুতে সরগরম হয়েছে রাজনীতি ৷ এই নিয়ে ‘ইন্ডিয়া’র শরিকরা মমতার পাশে দাঁড়িয়েছে ৷ পালটা জবাব দিয়েছে বিজেপি ৷ স্বয়ং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন খারিজ করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ ৷ এই পরিস্থিতিতে কলকাতায় ফিরে বিমানবন্দরের বাইরে দাঁড়িয়ে আরও একবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ৷
মমতার কথায়, সহযোগিতামূলক সাংবিধানিক কাঠামোকে রক্ষা করতে গেলে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সমন্বয় থাকা উচিত এবং রাজ্যের ভাগ রাজ্যকে দিতে হয় ৷ তিনি বলেন, ‘‘আর উন্নয়নের বিষয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাজ না করে, সবার জন্য উন্নয়ন করা উচিত ৷’’
মুখ্যমন্ত্রী জানান, যেহেতু বিরোধীরা সবাই বয়কট করেছে, তাই তিনি অন্য রাজ্যগুলির জন্য সরব হতে চেয়েছিলেন বৈঠকে ৷ তিন-চার মিনিট সময়ের মধ্যে তাই তিনি বাংলার বঞ্চনা থেকে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির সঙ্গে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ নিয়ে সরব হন ৷ পাশাপাশি বাজেটে এনডিএ শাসিত রাজ্যগুলির উপর বেশি বরাদ্দ করার বিষয়টি তুলে ধরেন ৷
কিন্তু কোনও রাজ্যকে বেশি দেওয়া নিয়ে তাঁর কোনও আপত্তি নেই বলেই জানান মমতা ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের আপত্তি নেই যদি কাউকে বেশি টাকা দেয় ৷ কিন্তু কেউ খাবে, আর কেউ খাবে না, সেটা তো হতে পারে না ৷’’ মমতা দাবি করেন যে বৈঠকে তিনি কেন্দ্রকে জানিয়েছেন যে দিল্লি থেকে শুধু নির্দেশ দেওয়া হয় ৷ আসলে কাজ তো করতে হয় রাজ্যগুলিকে ৷
এর প্রেক্ষিতেই মমতা বলেন, ‘‘রাজ্যগুলোকে যদি আপনারা পঙ্গু করে দেন, তাহলে কেন্দ্রও তো আগামিদিনে পঙ্গু হয়ে যাবে ৷ এই বিষয়ের গুরুত্বটা বোঝা উচিত ৷’’ এর পরই তিনি বাংলার বঞ্চনার কথা উল্লেখ করেছেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী ৷ কেন্দ্রের কাছে বকেয়া অর্থের বিষয়টি তিনি তুলে ধরেন বলে জানান মমতা ৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই কথাগুলো বলছিলাম, দেখলাম বারবার বেল বাজাচ্ছে ৷ রাজনাথ সিং সভাপতিত্ব করছিলেন ৷ একপাশে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী ৷ অন্যপাশে ছিলেন অমিত শাহ ৷ মনে হয় বলে দিয়েছিলেন ৷ ... আমার বক্তব্য যেই পাঁচ মিনিট হবে, তখনই থামতে বলা হয় ৷ আমি বলি, ঠিকাছে থামছি ৷ আপনারা শুনতে চান না তো ৷ চললাম ৷ আমি বয়কট করে চলে এসেছি ৷ তার কারণ হচ্ছে তুমি বাংলার বঞ্চনার কথা শুনতে চাও না ৷’’
এছাড়া ভারত-ভূটান ও ভারত-বাংলাদেশের সঙ্গে কিছু চুক্তির বিষয়ে সরব হন মমতা ৷ ওই চুক্তিতে তাঁর আপত্তি নেই বলেই মমতা জানিয়েছেন ৷ কিন্তু তিনি প্রশ্ন তুলেছেন যে কেন রাজ্য না জানিয়ে কেন এই কাজগুলি কেন্দ্রীয় সরকার করছে ? তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘‘এই কথাগুলো বলতে যাওয়া কি অপরাধ ?’’
মমতার আরও দাবি, বিরোধীদের থেকে তিনি একা ছিলেন, তাই তাঁকে অন্তত আধঘণ্টা বলতে দেওয়া উচিত ছিল ৷ তিনি বলেন, ‘‘বয়কট করে ঠিক করেছি ৷ বাংলার মানুষের মাথা নিচু হতে দিই না ৷ বঞ্চনা মানছি না, মানব না ৷’’ ভবিষ্যতে কেন্দ্রের ডাকা বৈঠকে যাবেন কি না ভাববেন ৷ নির্মলা সীতারমনের বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন মমতা ৷