ETV Bharat / state

গঙ্গার ভাঙন রোধের কাজ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কিছু না-বলায় হতাশ মালদাবাসী - CM Mamata Banerjee

Ganga Erosion in Malda: মালদার প্রশাসনিক সভা থেকে গঙ্গা ভাঙন রোধের কাজ নিয়ে কোনও কথা বললেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ বরং মুর্শিদাবাদ জেলার জন্য বরাদ্দের ঘোষণা করলেন তিনি ৷ এর ফলে হতাশ হয়েছে মালদা জেলার মানুষজন ৷

Ganga Erosion
গঙ্গা ভাঙন
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 31, 2024, 6:29 PM IST

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

মালদা, 31 জানুয়ারি: জেলাবাসীর আশা ছিল, লোকসভা নির্বাচনের মুখে মালদা সফরে এসে জেলার গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ নিয়ে কিছু বলবেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান ৷ প্রতি বছর ভাঙনে সর্বস্ব হারানো মানুষজনের দাবি মেনে গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধের স্থায়ী ব্যবস্থার কিছু ঘোষণা করবেন ৷ বুধবার মালদা ডিএসএ'র সভামঞ্চ থেকে গঙ্গার ভাঙন প্রসঙ্গ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ ভাঙন রোধের কাজের জন্য অর্থ বরাদ্দের কথাও ঘোষণা করেছেন ৷ কিন্তু তার সবই মুর্শিদাবাদ জেলার জন্য ৷ তাই এ নিয়ে কিছুটা হতাশ মালদার মানুষ ৷

গঙ্গার ভাঙন মালদাবাসীর কাছে একটা অভিশাপ ৷ প্রতি বছর গঙ্গার দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকার বহু ফসলি জমি ৷ বাড়িঘর হারিয়ে সর্বহারা হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ ৷ বারবার তাঁরা দাবি করেছেন, ভাঙন রোধের স্থায়ী কোনও ব্যবস্থা করা হোক ৷ নইলে একদিন এই জেলাই অস্তিত্বের সংকটে পড়বে ৷ শুধু দুর্গতরাই নয়, একই কথা বলেছিলেন রতুয়ার ভাঙন আক্রান্ত এলাকার বাসিন্দা, সেখানকার তৃণমূল বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ও ৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তিনিও ৷

মুখ্যমন্ত্রী এদিন ভাঙন প্রসঙ্গেও কেন্দ্রীয় সরকারকে একহাত নিয়েছেন ৷ তিনি বলেন, "গঙ্গা ভাঙন মালদা ও মুর্শিদাবাদ জেলার বড় সমস্যা ৷ আমি বলেছিলাম, গঙ্গার ভাঙন রোধের কাজের জন্য 100 কোটি টাকা দেব ৷ মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের বাঁধ সংরক্ষণের জন্য ইতিমধ্যেই 86 কোটি টাকার টেন্ডার করে দেওয়া হয়েছে ৷ গত পাঁচ বছরে এই কাজে আমরা 168 কোটি টাকা খরচ করেছি ৷ আরও 10 কোটি টাকা দিচ্ছি ৷ কিন্তু সবাই মনে রাখবেন, এটা কেন্দ্রীয় সরকারের কাজ ৷ তারা এই কাজ করে না ৷ ওরা ফরাক্কায় ড্রেজিংও করে না ৷ ফরাক্কা, ধুলিয়ান, সামশেরগঞ্জে গঙ্গার ভাঙন হচ্ছে ৷ ওরা একবার তাকিয়েও দেখে না ৷ শুধু ভোটের সময় ভোট নিয়ে ওরা পালিয়ে যায় ৷ কিন্তু আমরা যেটা বলি, সেটা করি ৷"

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, "গঙ্গা-পদ্মার ভাঙন ছাড়াও মালদা ও দুই দিনাজপুরে মহানন্দা, ফুলহার, টাঙন, আত্রেয়ী ও পুনর্ভবা নদীর বন্যা ও ভাঙনও বড় সমস্যা ৷ 2017 সালে বন্যায় প্রায় পাঁচ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৷ ক্ষতির পরিমাণ 2570 কোটি টাকা ৷ এর জন্য আমরা স্কিম তৈরি করে কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছি ৷ কিন্তু ওরা তার অনুমোদন দিচ্ছে না ৷ আমি জেলাশাসক ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকদের বলব, যাদের বাড়ি গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে কিংবা তলিয়ে যেতে পারে, তাদের জন্য 10 বছরের পরিকল্পনা গ্রহণ করুন ৷ প্রয়োজনে দূরে সরকারি খাস জমিতে তাদের পাট্টা দিয়ে ঘর তৈরি করে দিন ৷ এতে গরিব মানুষ বাঁচবে ৷ তাদের জন্য আমাদের এই কাজ করতে হবে ৷"

উল্লেখ্য, প্রায় প্রতি বছরই হরিশ্চন্দ্রপুর, রতুয়া, মানিকচক, ইংরেজবাজার এবং কালিয়াচক 2 ও 3 নম্বর ব্লক গঙ্গার ভাঙনের মুখে পড়ে ৷ ভিটেহারা হয় বহু মানুষ ৷ গত বছরও রতুয়া ও কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকে অসংখ্য মানুষ গঙ্গার ভাঙনে সর্বস্ব খুইয়েছে ৷ তাদের সবাইকে নদী থেকে দূরে সরকারি খাস জমি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রশাসন দুর্গতদের সবাইকে জমি দিতে পারেনি ৷ এ নিয়ে মানুষের ক্ষোভও রয়েছে ৷ সেই ক্ষোভ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে কোনও প্রভাব ফেলবে কি না, তা অবশ্য সময়ই বলবে ৷

আরও পড়ুন:

  1. গঙ্গার গ্রাস থেকে মাত্র 300 মিটার দূরে দাঁড়িয়ে কাটাহা দিয়ারা হাইস্কুল!
  2. এক লহমায় গঙ্গায় ধসে পড়ল 30-35টি বাড়ি, কান্তটোলায় এখন শুধুই কান্নার সুর; ঘেরাও জনপ্রতিনিধিরা
  3. সামশেরগঞ্জে গঙ্গা ভাঙন, এক রাতে তলিয়ে গেল 25-30টি বাড়ি!

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

মালদা, 31 জানুয়ারি: জেলাবাসীর আশা ছিল, লোকসভা নির্বাচনের মুখে মালদা সফরে এসে জেলার গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ নিয়ে কিছু বলবেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান ৷ প্রতি বছর ভাঙনে সর্বস্ব হারানো মানুষজনের দাবি মেনে গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধের স্থায়ী ব্যবস্থার কিছু ঘোষণা করবেন ৷ বুধবার মালদা ডিএসএ'র সভামঞ্চ থেকে গঙ্গার ভাঙন প্রসঙ্গ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ ভাঙন রোধের কাজের জন্য অর্থ বরাদ্দের কথাও ঘোষণা করেছেন ৷ কিন্তু তার সবই মুর্শিদাবাদ জেলার জন্য ৷ তাই এ নিয়ে কিছুটা হতাশ মালদার মানুষ ৷

গঙ্গার ভাঙন মালদাবাসীর কাছে একটা অভিশাপ ৷ প্রতি বছর গঙ্গার দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকার বহু ফসলি জমি ৷ বাড়িঘর হারিয়ে সর্বহারা হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ ৷ বারবার তাঁরা দাবি করেছেন, ভাঙন রোধের স্থায়ী কোনও ব্যবস্থা করা হোক ৷ নইলে একদিন এই জেলাই অস্তিত্বের সংকটে পড়বে ৷ শুধু দুর্গতরাই নয়, একই কথা বলেছিলেন রতুয়ার ভাঙন আক্রান্ত এলাকার বাসিন্দা, সেখানকার তৃণমূল বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ও ৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তিনিও ৷

মুখ্যমন্ত্রী এদিন ভাঙন প্রসঙ্গেও কেন্দ্রীয় সরকারকে একহাত নিয়েছেন ৷ তিনি বলেন, "গঙ্গা ভাঙন মালদা ও মুর্শিদাবাদ জেলার বড় সমস্যা ৷ আমি বলেছিলাম, গঙ্গার ভাঙন রোধের কাজের জন্য 100 কোটি টাকা দেব ৷ মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের বাঁধ সংরক্ষণের জন্য ইতিমধ্যেই 86 কোটি টাকার টেন্ডার করে দেওয়া হয়েছে ৷ গত পাঁচ বছরে এই কাজে আমরা 168 কোটি টাকা খরচ করেছি ৷ আরও 10 কোটি টাকা দিচ্ছি ৷ কিন্তু সবাই মনে রাখবেন, এটা কেন্দ্রীয় সরকারের কাজ ৷ তারা এই কাজ করে না ৷ ওরা ফরাক্কায় ড্রেজিংও করে না ৷ ফরাক্কা, ধুলিয়ান, সামশেরগঞ্জে গঙ্গার ভাঙন হচ্ছে ৷ ওরা একবার তাকিয়েও দেখে না ৷ শুধু ভোটের সময় ভোট নিয়ে ওরা পালিয়ে যায় ৷ কিন্তু আমরা যেটা বলি, সেটা করি ৷"

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, "গঙ্গা-পদ্মার ভাঙন ছাড়াও মালদা ও দুই দিনাজপুরে মহানন্দা, ফুলহার, টাঙন, আত্রেয়ী ও পুনর্ভবা নদীর বন্যা ও ভাঙনও বড় সমস্যা ৷ 2017 সালে বন্যায় প্রায় পাঁচ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৷ ক্ষতির পরিমাণ 2570 কোটি টাকা ৷ এর জন্য আমরা স্কিম তৈরি করে কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছি ৷ কিন্তু ওরা তার অনুমোদন দিচ্ছে না ৷ আমি জেলাশাসক ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকদের বলব, যাদের বাড়ি গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে কিংবা তলিয়ে যেতে পারে, তাদের জন্য 10 বছরের পরিকল্পনা গ্রহণ করুন ৷ প্রয়োজনে দূরে সরকারি খাস জমিতে তাদের পাট্টা দিয়ে ঘর তৈরি করে দিন ৷ এতে গরিব মানুষ বাঁচবে ৷ তাদের জন্য আমাদের এই কাজ করতে হবে ৷"

উল্লেখ্য, প্রায় প্রতি বছরই হরিশ্চন্দ্রপুর, রতুয়া, মানিকচক, ইংরেজবাজার এবং কালিয়াচক 2 ও 3 নম্বর ব্লক গঙ্গার ভাঙনের মুখে পড়ে ৷ ভিটেহারা হয় বহু মানুষ ৷ গত বছরও রতুয়া ও কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকে অসংখ্য মানুষ গঙ্গার ভাঙনে সর্বস্ব খুইয়েছে ৷ তাদের সবাইকে নদী থেকে দূরে সরকারি খাস জমি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রশাসন দুর্গতদের সবাইকে জমি দিতে পারেনি ৷ এ নিয়ে মানুষের ক্ষোভও রয়েছে ৷ সেই ক্ষোভ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে কোনও প্রভাব ফেলবে কি না, তা অবশ্য সময়ই বলবে ৷

আরও পড়ুন:

  1. গঙ্গার গ্রাস থেকে মাত্র 300 মিটার দূরে দাঁড়িয়ে কাটাহা দিয়ারা হাইস্কুল!
  2. এক লহমায় গঙ্গায় ধসে পড়ল 30-35টি বাড়ি, কান্তটোলায় এখন শুধুই কান্নার সুর; ঘেরাও জনপ্রতিনিধিরা
  3. সামশেরগঞ্জে গঙ্গা ভাঙন, এক রাতে তলিয়ে গেল 25-30টি বাড়ি!
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.