মালদা, 30 ডিসেম্বর: বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা ৷ অর্থাৎ যা অবাস্তব ৷ কিন্তু তা কি কখনও বাস্তব হতে পারে না ? ছেঁড়া কাঁথা না হলেও রেল কোয়ার্টারের দশ ফুট বাই দশ ফুট ঘরে শুয়ে তেমনই স্বপ্ন দেখেছিল চোদ্দ বছরের অনুষ্কা ৷ স্বপ্ন দেখেছিল, কোনওদিন সে মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতার মঞ্চ দাপাচ্ছে ৷ 16 বছর বয়সে তার সেই স্বপ্ন কিছুটা হলেও বাস্তব হতে চলেছে ৷ জানুয়ারিতে ইন্দোরে অনুষ্ঠিত হতে চলা জুনিয়র মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতার র্যাম্পে হাঁটার সুযোগ পেয়েছে সে ৷
মালদা শহরের ঝলঝলিয়া রেল আবাসনের কালীবাড়ি কলোনির কোয়ার্টারের বাসিন্দা অনুষ্কা শংকর ৷ সিস্টার নিবেদিতা পাবলিক স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী সে ৷ বাবা অজয় শংকর রেলের সিগন্যাল বিভাগের সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ার ৷ মা কবিতা কুমারি ঘরের কাজ সামাল দেন ৷ অনুষ্কা তাঁদের একমাত্র মেয়ে ৷ বছর দুয়েক আগে স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে তাকে মঞ্চে মহারাষ্ট্রের ফ্যাশন উপস্থাপন করার নির্দেশ দেওয়া হয় ৷ তখনই ফ্যাশন শোয়ে নিয়মিত অংশ নেওয়ার চিন্তাভাবনা অনুষ্কার মাথায় ঢুকে যায় ৷ দু'বছরে একাধিক ফ্যাশন শোয়ে অংশ নিয়েছে সে ৷ একের পর এক পুরস্কার তার লক্ষ্য এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে আরও সামনের দিকে ৷
ইটিভি ভারতকে অনুষ্কা বলে, "সামনেই আমার বোর্ড পরীক্ষা ৷ সময় ধরে আর নিয়ম মেনে দু'দিকটাই বজায় রাখছি ৷ টাইম ম্যানেজমেন্ট সত্যিই বড় বিষয় ৷ মডেলিং আমার শখ ৷ একে ছাড়তে পারব না ৷ তাই রুটিন তৈরি করে কিছু সময় মডেলিং আর কিছু সময় পড়াশোনার জন্য ভাগ করে নিয়েছি ৷ স্কুলে প্রথম মডেলিং করলেও অনলাইনে দেখে দেখে এই নেশা আমার মাথায় চেপে বসে ৷ মালদা, কলকাতা, জলপাইগুড়িতে শো করেছি ৷ দু'বার জয়পুর গিয়েছি ৷ জানুয়ারিতে ইন্দোরে যাব ৷"
দু'বছরের মডেলিং জার্নির কথাও অনুষ্কা ভাগ করে নেয় ৷ সে বলে, "প্রথমে মালদা আর কলকাতায় ফ্যাশন শোয়ে অংশ নিলেও প্রথম তিনে পৌঁছতে পারিনি ৷ তারপর প্রথমবার মিস মালদা নির্বাচিত হই ৷ জয়পুরে রয়্যাল প্রোডাকশন হাউসের তরফে মডেলিং শোয়ের আয়োজন করা হয়েছিল ৷ সেখানে প্রথম রানার আপ হই ৷ সম্প্রতি এফএসএস জয়পুরে মিস টিন ফরএভার ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল ৷ সেখানে অনলাইনে সিটি ফিনালের আয়োজন ছিল ৷ সেখানে মালদা থেকে আমি নির্বাচিত হই ৷ তারপর আমাকে জয়পুরে ডেকে পাঠানো হয় ৷ সেখানে আমি পশ্চিমবঙ্গের হয়ে মিস টিন ফরএভার ইউনিভার্স নির্বাচিত হই ৷ সেখানে মোট 65 জন প্রতিযোগী ছিলেন ৷ আমি ভবিষ্যতে প্রফেশনাল মডেল হতে চাই ৷ সেটা আমার স্বপ্ন ৷"
শংকর পরিবার আদপে বিহারের বাসিন্দা ৷ অজয় শংকরের বাড়ি পটনায় ৷ কিন্তু কর্মসূত্রে 2010 সাল থেকে তিনি মালদায় রয়েছেন ৷ এখন তাঁরা নিজেদের মালদাবাসী বলতেই পছন্দ করেন ৷ মেয়ের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বাবা-মা ৷ আগামীতে মেয়েকে সিনিয়র বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার মঞ্চে দেখার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন তাঁরা ৷
অজয় শংকরের কথায়, "আমাদের মেয়েরা এখন দেশের নাম উজ্জ্বল করছে ৷ এটা আমাদের কাছে খুব গর্বের ৷ আমার মেয়ে মিস টিন ফরএভার ইউনিভার্স ওয়েস্ট বেঙ্গল খেতাব জিতেছে ৷ এটা শুধু আমার বা আমার পরিবারের নয়, গোটা মালদা, এমনকি রাজ্যের গর্বের বিষয় ৷ আমার জন্ম বিহারে হলেও কর্মস্থল বাংলা ৷ এখান থেকে যখন আমি কিছু নিচ্ছি, তখন এই প্রদেশের সম্মান রক্ষাও আমার দায়িত্ব ৷ আমার মেয়ে যেখানে যায়, ও পশ্চিমবঙ্গরই প্রতিনিধিত্ব করে ৷"
তাঁর সংযোজন, "আমার মনে হয় না মডেলিং বা ফ্যাশন শোয়ে অংশ নেওয়ার জন্য মেয়ের লেখাপড়ায় তেমন কোনও ক্ষতি হচ্ছে ৷ শেষ প্রতিযোগিতা থেকে মেয়ে 23 ডিসেম্বর মালদায় ফিরেই বিকেলে পরীক্ষা দিতে গিয়েছে ৷ ও টাইম ম্যানেজমেন্ট করে পড়াশোনা করে ৷ তাই ওর শখ ওকে পড়াশোনাতেও পিছিয়ে রাখবে না বলে আমাদের ধারণা ৷ কারণ, জীবনে লেখাপড়া ভীষণ জরুরি ৷ তাই মেয়েকে শখের সঙ্গে পড়াশোনাকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে ৷ আমরা সবসময় ওর পাশে রয়েছি ৷ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও ওর পাশে রয়েছেন ৷ ওকে সবরকম সহায়তা করেন ৷ মাত্র দু'বছরের অভিজ্ঞতায় মেয়ে বেশ ভালোই এগিয়েছে ৷ জানুয়ারির 3 থেকে 5 তারিখ ইন্দোরে জুনিয়র মিস ইন্ডিয়ার গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত হবে ৷ অনুষ্কা সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাচ্ছে ৷"
জেলাবাসীকে স্বপ্ন দেখিয়ে মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতার মঞ্চে উঠতে চলেছে মালদার কিশোরী ৷ অনুষ্কা শংকর কতটা তাদের সেই স্বপ্নপূরণ করতে পারে সেটাই দেখার ৷
