বারাসত, 6 এপ্রিল: দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর অবশেষে বারাসত কেন্দ্রে বাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষিত হয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা প্রবীর ঘোষের নাম।এরপরই সময় নষ্ট না করে দলীয় নেতা,কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে ভোটের রণকৌশল ঠিক করে ফেলেন বাম প্রার্থী । বামফ্রন্টের তরফে বারাসতে প্রচার মিছিলও বের করা হয়েছে প্রার্থী প্রবীর ঘোষকে সামনে রেখে । বারাসতের মতো গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে লড়াই যে যথেষ্ট কঠিন, তা কিন্তু মেনে নিয়েছেন বাম প্রার্থী। তবে, লড়াই কঠিন হলেও বিনা যুদ্ধে তৃণমূল-বিজেপিকে জায়গা ছেড়ে দিতে রাজি নন প্রবীর ঘোষ। বরং, ভোটের ময়দানে প্রতিপক্ষের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিতে বদ্ধপরিকর তিনি। জেতার বিষয়েও যথেষ্ট প্রত্যয়ী বাম প্রার্থী।
বারাসত লোকসভা কেন্দ্রটি দীর্ঘকাল বামেদের দখলে ছিল। 1977 থেকে 1996 পর্যন্ত এই কেন্দ্র থেকেই দাপটের সঙ্গে জিতে এসেছে ফরওয়ার্ড ব্লক। বারাসত কেন্দ্র থেকেই পাঁচবারের সাংসদ ছিলেন বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের চিত্ত বসু। 1977 সালের আগে অবশ্য এই কেন্দ্রটি কখনও কংগ্রেস, আবার কখনও ছিল বামেদের দখলে। বামেদের দুর্ভেদ্য ঘাটি হিসেবেই একসময় পরিচিত ছিল বারাসত লোকসভা কেন্দ্রটি। এরপর কালক্রমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস আত্মপ্রকাশ করার পরই বামেদের হাত থেকে বারাসত কেন্দ্রটি ছিনিয়ে নেয় ঘাসফুল শিবির। তৃণমূলের হয়ে লড়াই করে প্রথমবার সাংসদ হন চিকিৎসক রঞ্জিত পাঁজা। এরপর তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে 2009 সাল থেকে টানা 15 বছর সেখান থেকেই জিতে আসছেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার। চিকিৎসক কাকলির উপর এবারও আস্থা রেখেছে তাঁর দল। এই কেন্দ্র থেকেই ফের তাঁকেই প্রার্থী করা হয়েছে।
অন্যদিকে, পদ্ম প্রার্থী হিসেবে এই কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বনগাঁ দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার। জোটসঙ্গী আইএসএফ এবং বামেরা আলাদা আলাদাভাবে লড়াই করছে বারাসত থেকে। ফলে, চতুর্মুখী লড়াই হতে চলেছে এই কেন্দ্রে। তৃণমূল-বিজেপি, দু'পক্ষই অনেক আগে তাঁদের মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করায় কিছুটা হলেও এগিয়ে রয়েছে প্রচারের ক্ষেত্রে। দু'দলের প্রার্থীই ইতিমধ্যে নেমে পড়েছে প্রচারে। সেই পরিস্থিতিতে পিছিয়ে থেকেই ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী প্রবীর ঘোষকে নামতে হচ্ছে লড়াইয়ের ময়দানে। ফলে,সেই লড়াইয়ে তিনি আদৌও কোনও প্রভাব ফেলতে পারবেন? নাকি গত নির্বাচনের মতো বাম প্রার্থীকেও খালি হাতে ফিরে আসতে হবে ভোটের ময়দান থেকে? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ফরওয়ার্ড ব্লকের অন্দরে।
যদিও, এসব মানতে নারাজ বারাসতের বাম প্রার্থী প্রবীর ঘোষ। তিনি বলেন,"প্রার্থীর নাম ঘোষণা হতে দেরি হয়েছে ঠিকই, তার মানে এই নয় যে তৃণমূল-বিজেপি প্রচারের ক্ষেত্রে এগিয়ে গিয়েছে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সকলে মিলে লড়াই করব। আমি নিশ্চিত মানুষ এবারে আমাদেরই সমর্থন করবেন। তবে,লড়াই কঠিন একথা মানছি। কিন্তু,সেই লড়াইয়ের যুদ্ধে তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থীকে প্রতিহত করে জয়ী হব আমরাই। শুধু দরকার সুষ্ঠুভাবে ভোট। গত লোকসভা নির্বাচনেও মানুষ তার ভোটাধিকার সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারেনি। ভোট লুঠ হয়েছে বিভিন্ন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে প্রার্থীদের মনোনয়ন পেশ করতে বাঁধা দেওয়া হয়েছে। এবার সেরকম কিছু হলে পাল্টা প্রতিরোধ করব আমরা। সংগঠিতভাবে প্রতিরোধ হলে পিছু হটতে বাধ্য দুর্বৃত্তরা। বারাসত কেন্দ্রটি পুনরুদ্ধার করব আমরা।"
আরও পড়ুন:
গাড়ি-শাড়িতে গোলাপি রঙে চমক ভোট প্রচারে, নারীশক্তিই হাতিয়ার বিজেপি'র শ্রীরূপার