জলপাইগুড়ি, 1 নভেম্বর: নদীতে প্রাণহানি রুখতে এক দেবতাকে পুজা করে আসছেন স্থানীয়রা । এই পুজোর কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম বা মন্ত্র নেই । কথিত আছে, অশরীরী তাড়াতে ময়নাগুড়ির গোবিন্দনগরে কাঁইতাকূড়া নামে এই দেবতার পুজো করা হয় ৷ এখানে দুটি মন্দির রয়েছে ৷ যার একটিতে গাধার পিঠে চড়ে রয়েছেন দেবতা কাঁইতাকূড়া ৷ তার পাশে বন্দুকধারী পুলিশ যা সিপাহি নামে পরিচিত ৷ অন্য মন্দিরে রয়েছেন রাজারানি ৷ তবে এই রাজারানি বলতে কাদের বোঝানো হয় তার স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেন না স্থানীয়রাও ৷
কাঁইতাকূড়া অর্থ :
তবে নাম শুনে অবাক লাগলেও রাজবংশী ভাষায় এর অর্থ রয়েছে ৷ কাঁইতা অর্থে কাত হওয়া বা হেলে পড়া বোঝায় । আর কুড়া মানে গভীর গর্ত ।
পুজোর নেপথ্য ইতিহাস :
ময়নাগুড়ির জর্দা নদীর কাঁইতাকূড়া ঘাটে নাকি গভীর রহস্যময় গর্ত আছে । যে গর্তে পড়ে প্রতি বছর কেউ না কেউ মারা যায় ৷ সেই থেকেই স্থানীয়দের মনে বিশ্বাস জন্মায় গর্তে ভূত আছে ৷ তাই নদীতে প্রাণহানি রুখতে দীর্ঘদিন ধরে কালীপুজোর পরের দিন কাঁইতাকূড়া দেবতার পুজো হয়ে আসছে । যাকে ভূত তাড়ানোর দেবতা বলে মানেন জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির গোবিন্দনগরের বাসিন্দারা ৷
পুজোর উদ্যোক্তা :
প্রতিবছর উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ও গোবিন্দনগর ইয়ংমেন্স কালচারাল ক্লাবের উদ্যোগেই এই পুজোর আয়োজন করা হয় ।যদিও এই পুজো সম্পর্কে স্থানীয়রা জানান, মন্দিরের বাঁ পাশে জর্দা নদীতে কাঁইতাকূড়া ঘাটে স্নান, কাপড় কাচা নিয়ে ময়নাগুড়ি ব্লক প্রশাসন থেকে সাইন বোর্ড টাঙিয়ে ঘাটে যেতে নিষেধ করা হয়েছে । নদী সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয়রা নদীর উপরই নির্ভরশীল ৷ স্নান করা থেকে কাপড় কাচা ও আরও যাবতীয় কাজ করে থাকেন । সম্প্রতি এই নদীঘাট আর ব্যবহার করেন না স্থানীয়রা ৷
এলাকাবাসীর বক্তব্য :
স্থানীয় বাসিন্দা চন্দন সোম জানান, এই ঘাট প্রতি বছর কাউকে না কাউকে কুড়া অর্থাৎ গভীর গর্ত টেনে নিয়ে প্রাণে মেরেছে । স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই কুড়া বা গর্তে কোনও ভূত বা প্রেত রয়েছে । কাঁইতাকূড়ার পুজো করলেই তা থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে । এমন বিশ্বাস থেকেই পুজোর জন্ম ৷
স্থানীয়রাই মন্দির তৈরির জন্য জমি দিয়েছেন । তবে এই কাঁইতাকূড়ার পুজোর জন্য নির্দিষ্ট কোনও নিয়ম বা মন্ত্র নেই । পুজোর উপকরণ বলতে 22টি ধূপকাঠি, জল, দুধ, আতপচাল, ফুল, তিল, শুকনো চিঁড়ে, আখের গুড়, কলা নিবেদন করা হয় । ভূত-প্রেত থেকে রেহাই পেতে এই দেবতার পুজো স্থানীয়দের কাছে আজও অনেক গুরুত্ব রাখে ।