দত্তপুকুর, 25 ডিসেম্বর: পাসপোর্ট জালিয়াতি-কাণ্ডে কলকাতা পুলিশের জালে আরও এক । ধৃতের নাম মোক্তার আলম । বুধবার ভোরে উত্তর 24 পরগনার দত্তপুকুরের ছোট জাগুলিয়ার বাড়ি থেকে পাকড়াও করা হয়েছে তাঁকে ।
পুলিশ সূত্রে খবর, মোক্তার আলম জাল পাসপোর্ট-কাণ্ডে ধৃত সমরেশ বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠ । তবে, তাঁর ঘনিষ্ঠ হলেও মোক্তার জাল পাসপোর্টের সমান্তরাল কারবার ফেঁদে বসেছিল দত্তপুকুরের ছোট জাগুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় । তাঁকে এই কারবারের চাঁই হিসেবে মনে করছে পুলিশ । ধৃতের বাড়ি থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের পাসবই এবং একাধিক এটিএম কার্ড উদ্ধার করেছে পুলিশ । সেই সঙ্গে বহু মানুষের নামে থাকা বেশ কিছু প্যান কার্ডও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ।
সম্প্রতি জাল পাসপোর্ট মামলার তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশের গুন্ডা দমন শাখা ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে । পুলিশের সন্দেহ, ভুয়ো নথিপত্রের মাধ্যমে একটি চক্র জাল পাসপোর্ট বানিয়ে দিচ্ছে । ওই চক্রের শিকড় খুঁজতে লালবাজারের গুন্ডা দমন শাখা তদন্তে নেমেছে । কলকাতার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে । সম্প্রতি উত্তর 24 পরগনার বসিরহাটে তদন্ত চালিয়ে পুলিশ বেশ কিছু জাল পাসপোর্ট উদ্ধার করেছে । সেসময় কয়েকজন ধরাও পড়ে পুলিশের হাতে ।
প্রসঙ্গত, দিন পনেরো আগে বারাসতে যশোর রোডের ধারে একটি বহুতল থেকে জাল পাসপোর্ট চক্রে জড়িত অভিযোগে সমরেশ বিশ্বাস নামে একজনকে গ্রেফতার করে লালবাজার । তাঁকে জেরা করে পুলিশ দত্তপুকুরের মোক্তার আলমের হদিস পায় । তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, এলাকায় মোক্তার সাদামাটা জীবনযাপন করত । যাতে পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে কোনও সন্দেহ তৈরি না হয় । তারই আড়ালে বাংলাদেশিদের পরিচয় বদলে দিয়ে ভুয়ো নথিপত্র বানিয়ে জাল পাসপোর্ট তৈরি করে দিতেন তিনি বলে সূত্রের খবর ।
পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, এলাকায় মোক্তার আমদানি-রফতানি ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন । আড়ালে চলত তাঁর জাল পাসপোর্টের কারবার । শুধু জাল পাসপোর্টের কারবারে হাত পাকানোই নয়, ওপার বাংলায় অবৈধভাবে লোক পারাপারের কাজেও যুক্ত ছিলেন মোক্তার ।
এই বিষয়ে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান রূপেশ কুমার ইটিভি ভারতকে বলেন, "এর আগে 2021 সালে পাসপোর্ট জালিয়াতিতে চুঁচুড়া থানার পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছিল । কয়েক মাস জেল খাটার পর জামিনে মুক্ত হয়ে ফের মোক্তার হাত পাকায় এই কারবারে । সেই মোক্তারই জাল পাসপোর্ট কাণ্ডে এবার গ্রেফতার হল কলকাতা পুলিশের হাতে ।" আর তা ঘিরে রীতিমতো হতবাক এলাকার বাসিন্দারা । এতদিন এলাকায় বসবাস করলেও তাঁরা জানতেনই না, যে মোক্তার আলম জাল পাসপোর্ট কারবারের সঙ্গে জড়িত ।
এ দিকে, হাড়োয়ার বিধায়ক তৃণমূলের শেখ রবিউল ইসলামের বাড়ি ওই এলাকাতেই । এই বিষয়ে রবিউল বলেন, "পুলিশ জাল পাসপোর্ট কাণ্ডের তদন্ত করছে বলে শুনেছি । মোক্তার আলম নামে একজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে । আমরাও চাই,পাসপোর্ট জালিয়াতি-কাণ্ডের সঠিক তদন্ত হোক । যারা জড়িত আছে, পুলিশ তাদের গ্রেফতার করুক । আইন আইনের পথেই চলবে ।"
যদিও ধৃত মোক্তার আলমের ছেলের দাবি, তাঁর বাবা জাল পাসপোর্টের কারবারের সঙ্গে যুক্ত নন । পুলিশ কেন তাঁদের বাড়িতে হানা দিল ! কেনই বা তাঁর বাবাকে গ্রেফতার করল ? তা তাঁরা কিছুই জানেন না । এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি ।
উল্লেখ্য, গত নভেম্বর মাসের শেষের দিকে পার্ক স্ট্রিটের একটি হোটেল থেকে বাংলাদেশি এক নাগরিককে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল । দু'বছর আগে তিনি বাংলাদেশ থেকে বেআইনিভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকেছিলেন বলে অভিযোগ । সেসময় তাঁর কাছ থেকে একটি পাসপোর্টও পাওয়া গিয়েছিল । পুলিশ জানিয়েছিল, ওই ব্যক্তির নাম সেলিম মাতব্বর । অথচ পাসপোর্টে তার নাম ছিল রবি শর্মা । অভিযোগ, ওই বাংলাদেশি নাম ভাঁড়িয়ে ভারতীয় পাসপোর্ট বানিয়ে পার্কস্ট্রিটের হোটেলে কাজ নিয়েছিলেন । তাই, পাসপোর্ট জালিয়াতি চক্রের জাল অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত বলে মনে করছে তদন্তকারীরা ।