জয়নগর, 25 সেপ্টেম্বর: দক্ষিণ 24 পরগনার বেশ কয়েকটি প্রাচীন বনেদি বাড়ি দুর্গাপুজোর মধ্যে অন্যতম হল জয়নগরের দত্তবাড়ির পুজো ৷ অনেকেই আবার একে সাদা দত্তবাড়ির দুর্গাপুজো বলে জানেন ৷ 1675 সালে জমিদার রামচন্দ্র দত্ত কলকাতা থেকে সুন্দরবনে এসে নিজের জমিদারি আধিপত্য স্থাপন করেন ।
এরপর মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ পেয়ে শুরু করেন পুজো । তৎকালীন পুজোয় দশ দিন ধরে দত্তবাড়িতে অনুষ্ঠান লেগে থাকত ৷ মহালয়ার পরের দিন শুরু হত দেবীর বোধন ৷ এরপর টানা 10 দিন পুজো শুরুর সময় বন্দুকের গুলির আওয়াজ করে পুজোয় বসতেন পুরোহিতরা । তবে জমিদারি প্রথা অবলুপ্ত হলেও দত্তবাড়িতে এখনও টানা 10 দিন ধরে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে দেবীর আরাধনা করা হয় । পরিবারের সদস্যরা সকলেই কর্মসূত্রে দূরদূরান্তে থাকেন ৷ তবে পুজোর সময় তাঁরা বাড়ি ফেরেন ৷ এখনও প্রথা মেনেই রথযাত্রার দিন কাঠামো পুজো হয় ৷ বংশপরম্পরায় মৃৎশিল্পী, পুরোহিত ও ঢাকিরা এই বাড়িতে পুজোয় সামিল হন ।
বলি প্রথা এখনও রয়েছে ৷ তবে বন্দুকের গুলির আওয়াজের বদলে এখন আতশবাজি জ্বালিয়ে পুজো শুরু করা হয় ৷ দত্তবাড়ির পুজো এ বছর 349 বছরে পড়ল ৷ শোনা যায়, বারুইপুরের ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালীন দত্তবাড়িতে আনাগোনা ছিল সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের । তিনি প্রায়ই এখানে এসে ছুটি কাটাতেন এবং দত্তবাড়ির দুর্গাপুজোয় সামিল হতেন । জয়নগরের এই দত্তবাড়িতে বসেই তিনি লিখেছিলেন বিষবৃক্ষ উপন্যাস । এছাড়াও তাঁর বেশ কয়েকটি উপন্যাসে এই দত্তবাড়ির উল্লেখ রয়েছে ।
এ বিষয়ে পরিবারের এক সদস্য শিবেন্দ্র নারায়ণ দত্ত বলেন, "তৎকালীন বারুইপুরের ম্যাজিস্ট্রেট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দত্তবাড়ির ছেলে যোগেন্দ্র নারায়ণ দত্তের বাল্যবন্ধু হওয়ার সুবাদে এই বাড়িতে তাঁর আনাগোনা ছিল ৷ ছুটির দিনগুলি ও দুর্গাপুজোয় দত্তবাড়িতে আসতেন সাহিত্য সম্রাট ৷ এই দত্তবাড়ির সঙ্গে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুরও নিবিড় টান ছিল । দত্তবাড়ির সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল । ছোট ঠাকুমার সম্পর্কে দাদা ছিলেন তিনি ৷ সেই সুবাদে সুভাষচন্দ্র বসু স্বাধীনতা আন্দোলনের বেশ কয়েকটি সভা এই দত্তবাড়ির সামনের মাঠেই করেছিলেন । এখনও পর্যন্ত নেতাজির বাড়িতে দত্তবাড়ির দুর্গাপুজোর প্রসাদ পাঠানো হয় । স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিল দত্তবাড়ি ৷"