কলকাতা, 15 জানুয়ারি: বিদ্যাসাগর কলোনির হেলে পড়া বাড়ির নেই কোনও কমপ্লিশন সার্টিফিকেট বা সিসি । তবে সেই বাড়ির প্রতিটি ফ্ল্যাট থেকেই কলকাতা পুরনিগম আদায় করে সম্পত্তি কর । হয়েছে মিউটেশনও । এমনই তথ্য জানা যাচ্ছে পুরনিগম সূত্রে । শুধু তাই নয়, গোটা কলোনি এলাকার উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের যে জমি রয়েছে, তাতে মাথা তুলে দাঁড়ানো 90 শতাংশেরও বেশি বহুতলেরই নেই সিসি । তবে কলকাতা পুরনিগমেরই সম্পত্তি ও কর মূল্যায়ন বিভাগ এই সমস্ত চত্বরের কমবেশি 35 হাজার করদাতার থেকে রাজস্ব আদায় করে ।
90, 91, 92, 95, 96, 97, 98, 99 অধিকাংশ ও 100 নম্বর ওয়ার্ডে নামমাত্র উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের জমি আছে । কলকাতা পুরনিগম সূত্রে খবর, সম্পত্তি কর মূল্যায়ন বিভাগের খাতায় হেলে যাওয়া বাড়ির ঠিকানা হল 69/1/3/89/1 রাজা এসসি মল্লিক রোড । সেখানে আটটি ফ্ল্যাটের মিউটেশন ও অ্যাসেসমেন্ট হয়েছে । তারা প্রত্যেকেই নিয়মিত কর প্রদানও করে । তবে বিল্ডিং বিভাগের খাতায় এই বাড়ির বিস্তারিত কিছুই নেই ৷ কারণ তারা বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন না করিয়েই সেই বাড়ি করেছে ।
গার্ডেনরিচে বাড়ি ভেঙে পড়ার পর এই ঘটনা প্রথম সামনে আসে । দেখা যায়, ভেঙে পড়া বাড়ির আশপাশে দু-একটি বাড়ি বেআইনি হিসেবে কলকাতা পুরনিগমের বিল্ডিং বিভাগ চিহ্নিত করে যে, সেগুলোর সিসি নেই । তবে সেই বাড়িগুলোর ফ্ল্যাট থেকে কলকাতা পুরনিগমের অ্যাসেমেন্ট ও কর মূল্যায়ন বিভাগ দেদার কর আদায় করছে । এর পরে সাময়িক ভাবে দুই বিভাগের সমন্বয়ের অভাব নিয়ে আলোচনা হয় । পরিকল্পনা করা হয় যে, বিল্ডিং বিভাগের ছাড়পত্র ছাড়া কোনওভাবেই বাড়িকে মিউটেশন বা কর মূল্যায়নের আওতায় আনা যাবে না । দেওয়া যাবে না নিকাশি, পানীয় জলের লাইন । তবে সে সব নিয়মই খাতায়-কলমে রয়ে গিয়েছে ।
গার্ডেনরিচের ঘটনার এক বছরের মাথাতেই বাঘাযতীনের বিদ্যাসাগর কলোনির বাড়ি হেলে পড়ার ঘটনায় ফের একই বিষয় সামনে আসছে । গার্ডেনরিচের মতো কাণ্ডের পরেও কলকাতা পুরনিগম সেই অর্থে শিক্ষা নেয়নি বলা চলে । এই বিষয়ে এক আধিকারিক বলেন, "কলকাতা পুরনিগমের নিয়ম অনুসারে, একটি নির্মাণ আইনি নাকি বেআইনি, এই সমস্ত বিষয়ে দেখাশোনা ও নজরদারি করার দায় বিল্ডিং বিভাগের । আর সেই বিল্ডিংয়ে মানুষজন যেহেতু পুরনিগমের নিকাশি পরিষেবা, পানীয় জল-সহ বিভিন্ন পরিষেবা উপভোগ করছেন, তাই তাঁদের থেকে সম্পত্তি মূল্যায়ন করে রাজস্ব আদায় করা হয়ে থাকে । এর সঙ্গে আইনি অথবা বেআইনি এই বিষয়টি নির্ভর করে না ।"
যদিও এ প্রসঙ্গে 99 নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন বাম কাউন্সিলর দেবাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, "ওনারা কি দাবি করছেন সেটাই সত্যি এমনটা নয় । বাস্তব হল যে, কলকাতা পুরনিগমের বিল্ডিং ডিপার্টমেন্ট বেআইনি কাজ করেছে বলে লোকগুলির বিরুদ্ধে এফআইআর করছে সেই কলকাতা পুরনিগম কর মূল্যায়ন বিভাগ, যারা ওই ব্যক্তিদের থেকেই বছরের পর বছর কর আদায় করছে, রাজস্ব তুলছে, এটা কীভাবে হতে পারে । মেয়র বলেছিলেন বিল্ডিং বিভাগের সিসি না মিললে অ্যাসেসমেন্ট বা মিউটেশন-সহ বিভিন্ন পরিষেবা না দিতে । তবে তার বাস্তবায়ন যে হয়নি তা বোঝা যাচ্ছে এখন । মানুষের জীবন ঝুঁকিতে ফেলছে এই সমস্ত কর্মকাণ্ড করে । কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে বেআইনি নির্মাণ করাচ্ছে, আবার কলকাতা পুরনিগমের কোটি কোটি টাকা রোজগার হচ্ছে । মাঝখান থেকে সাধারণ মানুষকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ।"