জলপাইগুড়ি, 6 অগস্ট: বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে হৃদয়ে দিয়েছো দোলা...আদ্যন্ত প্রেমের এই গান ৷ কিন্তু সেই গন্ধেই যদি অন্নপ্রাশনের ভাত উঠে আসার জোগাড় হয়, তবে হৃদয়ে দোলা লাগা তো দূর, উলটে প্রেম, ভালোবাসা, বিয়ে সব কর্পুরের মতো উবে যায় ৷ আর ঠিক সেটাই হচ্ছে জলপাইগুড়ি পাহাড়পুর গ্রামপঞ্চায়েতের বালাপাড়ায় ৷ পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ডের যা অবস্থা, তার কারণে এই গ্রামের যুবকদের চিরকুমার থেকে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ ৷ আবর্জনার পাহাড়ের দুর্গন্ধে প্রাণ ওষ্ঠাগত স্থানীয়দের ৷ সম্বন্ধ দেখতে এলেও কেউ এই নরকযন্ত্রণা দিতে চান না বাড়ির মেয়েকে ৷ ফলে বিয়েও ভেঙে যায় ৷
পাহাড়পুর গ্রামপঞ্চায়েতের বালাপাড়ায় জলপাইগুড়ি পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ড । সেখানে খোলা জায়গায় অবৈজ্ঞানিকভাবে ফেলা হয় আবর্জনা । শুধু তাই নয়, সাধারণ মানুষের যাতায়াতের রাস্তার ধারেই পুরসভার নোংরা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ । স্থানীয়রা চাইছেন পুরসভার পক্ষ থেকে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের সীমানা নির্ধারণ করে বাউন্ডারি ওয়াল দেওয়া হোক । যাতে কিছুটা হলেও দুর্গন্ধ আসা কমে ৷ সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের জন্য শেড নির্মাণের কাজও বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয়রা । তাঁদের দাবি, আগে সীমানা প্রাচীর দিতে হবে, তারপর অন্য কাজ ।
জলপাইগুড়ি পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ডের দুর্গন্ধে এলাকায় টেকা দায় হয়ে পড়েছে । ডাম্পিং গ্রাউন্ডের দুর্গন্ধ, নোংরা আবর্জনার ফলে অতিষ্ঠ বালাপাড়ার বাসিন্দারা । পুরসভা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বৈজ্ঞানিকভাবে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে নোংরা আবর্জনা রাখা হবে । সীমানা প্রাচীর দেওয়া হবে । কিন্তু বিগত প্রায় 14 বছর ধরে জলপাইগুড়ি পুরসভা তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি । জলপাইগুড়ি পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ডের আশপাশের উত্তর বালাপাড়া ও গাঞ্জাইবাড়ি, ঘাসি পাড়া, হাকিমপাড়া এলাকায় পরপর বিয়ের সম্বন্ধ এলেও এই দুর্গন্ধের কারণে কোনও পাত্রীপক্ষই মেয়ে এই এলাকায় দিতে রাজি হচ্ছে না ৷ ভেঙে যাচ্ছে বিয়ে ৷ বিগত পাঁচ বছর ধরে বিশেষত এই সমস্যা চরমে উঠেছে ।
স্থানীয় বাসিন্দা সদোবালা রায় অভিযোগ করে বলেন, "এই ডাম্পিং গ্রাউন্ডের দুর্গন্ধে আমার ছেলের বিয়ে হচ্ছে না । কেউ মেয়ে কী করে দেবে, আপনারাও তো থাকতে পারছেন না । খেতে বসলেই দুর্গন্ধ নাকে আসে, খেতে পারি না । পাঁচ বছর ধরে 10-12 টা সম্বন্ধ এসেছিল, কিন্তু কেউ বিয়ে দিতে চাইছে না । এবার ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জায়গা একটু পরিষ্কার হলে ছেলেটার বিয়ে দিতে পারি ।"
স্থানীয় বাসিন্দা প্রবীণ রায় বলেন, ডাম্পিং গ্রাউন্ডের আশপাশেই আমরা থাকি । কোনও ছেলেমেয়ের বিয়ে দেওয়ার বিষয় এলেই আমরা সমস্যায় পড়ছি । এই রাস্তাঘাটে এলে গন্ধেই আর কেউ কোনও কথা বলতে চান না ৷ এখানে নোংরা ডাম্পিং গ্রাউন্ড তাই সবাই পিছিয়ে যায় । কেউ বিয়ের জন্য এলে পরিবেশ দেখার পর আর বিয়ে দিতে রাজি হয় না । আগে আমাদের পরিবেশ ভালো ছিল । এখন দুর্গন্ধ আর মশা । পুরসভার কাছে অনুরোধ, আমরা যাতে সুস্থ সবল থাকতে পারি ।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রবীর বসাকের অভিযোগ, "ডাম্পিং গ্রাউন্ডের সমস্যার জন্য বারবার পঞ্চায়েত প্রধানের মাধ্যমে সবাইকে জানানো হয়েছে । আমরা খেতে পর্যন্ত পারি না । এইভাবে ময়লা ফেলে গেলে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে । শুধু তাই নয়, এখানে বিয়ে দেওয়াই কঠিন হয়ে যাচ্ছে ৷ কেউ সম্বন্ধ নিয়ে এলেই ডাম্পিং গ্রাউন্ডের সমস্যা ও গন্ধের বিষয়টি উঠে আসে । বিয়েও ভেঙে যায় । ডাম্পিং গ্রাউন্ডের নোংরা জিনিস বাইরে কুকুর নিয়ে চলে আসছে । পুরসভা সীমানা প্রাচীর দিক ৷"
পাহাড়পুর গ্রামপঞ্চায়েতের সদস্য বাবলু বসাকের কথায়, "দীর্ঘদিন থেকেই ডাম্পিং গ্রাউন্ডের সীমানা প্রাচীর দেওয়ার দাবি করা হচ্ছে । কিন্তু পুরসভা কোনও পাত্তাই দিচ্ছে না । এখানে ছেলে মেয়ের বিয়ে ঠিকমতো হচ্ছে না । গন্ধে প্রাণ ওষ্ঠাগত । কোনও ছেলে বিয়ে করতে পারছে না । পাত্রীপক্ষ এসে বলে, এই দুর্গন্ধে কী করে থাকবে মেয়ে । হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের জিনিসপত্র ফেলা হচ্ছে, জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে । এলাকায় কুয়োর জল খেতে পারছে না কেউ । আমরা চাই পুরসভা ডাম্পিং গ্রাউন্ডে প্রাচীর দিয়ে নোংরা আবর্জনা ফেলুক । পুরসভা ব্যবস্থা না নিলে আমরা মুখ্যমন্ত্রী দ্বারস্থ হব । ডাম্পিং গ্রাউন্ডের কারণে অতিষ্ঠ ছোট চৌধুরীপাড়া, ঘাসিপাড়া, বিবেকানন্দপল্লি, উত্তর বালাপাড়া, দক্ষিণ বালাপাড়ার মানুষ ৷"
এদিকে, জলপাইগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলেন, "এটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বপ্নের প্রকল্প । ডাম্পিং গ্রাউন্ডের কাজটা বন্ধ করে দেওয়াটা ঠিক হয়নি । আমাদের সঙ্গে কথা বলে আলোচনা করা যেতে পারত । আমরা মানুষের ভালোর জন্যই কাজ করছি । ডাম্পিং গ্রাউন্ডের গন্ধের কারণে বিয়ে হচ্ছে না শুনলাম । বিষয়টা আমরা খতিয়ে দেখব ৷"