ETV Bharat / state

বিবিহার কালীপুজোয় পুজোয় মেতে ওঠে হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়

মা বিবিহারের পুজোয় মেতে ওঠে হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষই। প্রতি বছর কার্তিক অমাবস্যার পূজিত হন মা বিবিহার ৷

KALI PUJA 2024
পুজোয় মেতে ওঠে হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায় (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Oct 30, 2024, 8:36 PM IST

বুনিয়াদপুর, 30 অক্টোবর: গ্রামের শেষ প্রান্ত ৷ এরপর থেকেই ধূ-ধূ মাঠ ৷ সেখানে একটুকরো জঙ্গল ৷ গাছগাছালির আলো-আঁধার পরিবেশটাও যেন পাল্টে দিয়েছে ৷ আনন্দের তুলনায় ভয়ের ভাগ বেশি ৷ সেখানে ছোট্ট একটি পাকা মন্দির ৷ তাতে রয়েছে পঞ্চমুণ্ডির আসন ৷ প্রতি বছর কার্তিক অমাবস্যার নিশুতি রাতে এখানেই পূজিত হন মা বিবিহার ৷

দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারী ব্লকের ধুমপাড়া গ্রামের পূর্বপ্রান্তে থাকা মন্দির ও মা বিবিহারকে ঘিরে রয়েছে না-না জনশ্রুতি ৷ এই পুজো শতাধিক বছরের পুরোনো ৷ তবে মধ্যে বেশ কিছু বছর পুজো বন্ধ ছিল ৷ 69 বছর আগে ফের পুজো চালু করেন রাজপুত বংশজাত ক্ষত্রিয়সন্তান হরিচরণ সিংহ ৷ এলাকায় থেলুবাবু নামে পরিচিত ছিলেন তিনি ৷ তন্ত্রমতে মায়ের পুজো চালু করেন তিনি ৷

পুজোয় মেতে ওঠে হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায় (ইটিভি ভারত)

সেই থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে পুজো হয়ে আসছে মায়ের ৷ এলাকাবাসীরা বলেন, এখানে মা নাকি জ্যান্ত কালী ৷ প্রচণ্ড জাগ্রত ৷ বারবার তার প্রমাণও মিলেছে ৷ মায়ের মহিমা আলোড়ন ফেলেছে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যেও ৷ তাঁরাও মায়ের পুজোয় সামিল হন ৷ উপবাস থেকে মায়ের পুজোও দেন ৷

স্থানীয় আনারুল ইসলাম বলেন, “একেবারে জিন্দা কালী ৷ যা চাওয়া হয়, মা তাই দেন ৷ তাই তো আমাদের অনেকেও মায়ের কাছে পুজো দেন ৷ মনস্কামনা পূরণ না হলে তো কেউ মায়ের পুজো দেবে না ৷” একই বক্তব্য রেহেনা বানুরও ৷ তিনি বলেন, “মা এখানে খুব জাগ্রত ৷ কত দূর থেকে লোকজন পুজো দিতে আসে ৷ আমাদের অনেকেও মায়ের পুজো দেয় ৷ বছরের এই একটা দিন মায়ের পুজোয় আমরাও আনন্দ করি ৷ প্রতি বছর মায়ের কাছে যাই ৷”

গ্রামের বাসিন্দা গমসেদ আলিও বলেন, “আমরা মুসলিম ৷ মূর্তিপুজো আমাদের মধ্যে নেই ৷ কিন্তু এই জ্যান্ত মাকে এড়িয়ে যেতে পারি না ৷ মন্দিরের সামনে দিয়ে মাঠে যাওয়ার সময় মাকে প্রণাম করে যাই ৷ ভরদুপুরে কিংবা সন্ধ্যার পর মন্দিরের ধারেকাছে যাই না ৷ কেমন একটা ভয় কাজ করে ৷ মা বিবিহারকে আমরা খুবই শ্রদ্ধা করি ৷ তিনি আমাদের সবার মা ৷ কিন্তু মায়ের মন্দিরে যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই ৷ বৈদ্যুতিক আলোও নেই ৷ পঞ্চায়েত থেকে এটুকু করে দিলে খুব ভালো হয় ৷ কারণ, দীপাণ্বিতা অমাবস্যার রাতে শুধু আমরা নই, বিভিন্ন জেলা থেকেও প্রচুর মানুষ মায়ের কাছে পুজো দিতে আসেন ৷”

থেলুবাবুর চার ছেলে এখন মা বিবিহারের পুজোর দায়িত্ব নিয়েছেন ৷ বড় ছেলে মথুর সিংহ পুরোনো নথি ঘেঁটে বলেন, “253 বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষ দশরথ সিংহ এখানে পঞ্চমুণ্ডির আসন প্রতিষ্ঠা করেন ৷ সেখানে মাটির ঘট বসিয়ে তন্ত্রসাধনা করতেন তিনি ৷ তিনি প্রয়াত হওয়ার পর তাঁর উত্তরসূরি দশরথ সিংহ এখানে প্রথমবার মায়ের মৃণ্ময়ী মূর্তির পুজো শুরু করেন ৷ সেদিন থেকে প্রতি বছর কার্তিক অমাবস্যার রাতে মা বিবিহারের পুজো হয়ে আসছে ৷” মথুরবাবুর খুড়তুতো দাদা বাবলা সিংহের কথায়, “পারিবারিক এই পুজোয় এলাকায় প্রতিটি মানুষ অংশ নিয়ে থাকেন ৷ তন্ত্রমতে মায়ের পুজো হয় ৷ পুজো করেন দৌলতপুরের মনোজ পাণ্ডে ৷ পুজোর পরদিন মন্দিরের পাশের পুকুরে মায়ের মৃণ্ময়ী মূর্তি বিসর্জন দেওয়া হয় ৷”

কালীর সঙ্গে পূজিত হন শ্রীকৃষ্ণও, কৃষ্ণকালী ঘিরে উন্মাদনা

বুনিয়াদপুর, 30 অক্টোবর: গ্রামের শেষ প্রান্ত ৷ এরপর থেকেই ধূ-ধূ মাঠ ৷ সেখানে একটুকরো জঙ্গল ৷ গাছগাছালির আলো-আঁধার পরিবেশটাও যেন পাল্টে দিয়েছে ৷ আনন্দের তুলনায় ভয়ের ভাগ বেশি ৷ সেখানে ছোট্ট একটি পাকা মন্দির ৷ তাতে রয়েছে পঞ্চমুণ্ডির আসন ৷ প্রতি বছর কার্তিক অমাবস্যার নিশুতি রাতে এখানেই পূজিত হন মা বিবিহার ৷

দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারী ব্লকের ধুমপাড়া গ্রামের পূর্বপ্রান্তে থাকা মন্দির ও মা বিবিহারকে ঘিরে রয়েছে না-না জনশ্রুতি ৷ এই পুজো শতাধিক বছরের পুরোনো ৷ তবে মধ্যে বেশ কিছু বছর পুজো বন্ধ ছিল ৷ 69 বছর আগে ফের পুজো চালু করেন রাজপুত বংশজাত ক্ষত্রিয়সন্তান হরিচরণ সিংহ ৷ এলাকায় থেলুবাবু নামে পরিচিত ছিলেন তিনি ৷ তন্ত্রমতে মায়ের পুজো চালু করেন তিনি ৷

পুজোয় মেতে ওঠে হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায় (ইটিভি ভারত)

সেই থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে পুজো হয়ে আসছে মায়ের ৷ এলাকাবাসীরা বলেন, এখানে মা নাকি জ্যান্ত কালী ৷ প্রচণ্ড জাগ্রত ৷ বারবার তার প্রমাণও মিলেছে ৷ মায়ের মহিমা আলোড়ন ফেলেছে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যেও ৷ তাঁরাও মায়ের পুজোয় সামিল হন ৷ উপবাস থেকে মায়ের পুজোও দেন ৷

স্থানীয় আনারুল ইসলাম বলেন, “একেবারে জিন্দা কালী ৷ যা চাওয়া হয়, মা তাই দেন ৷ তাই তো আমাদের অনেকেও মায়ের কাছে পুজো দেন ৷ মনস্কামনা পূরণ না হলে তো কেউ মায়ের পুজো দেবে না ৷” একই বক্তব্য রেহেনা বানুরও ৷ তিনি বলেন, “মা এখানে খুব জাগ্রত ৷ কত দূর থেকে লোকজন পুজো দিতে আসে ৷ আমাদের অনেকেও মায়ের পুজো দেয় ৷ বছরের এই একটা দিন মায়ের পুজোয় আমরাও আনন্দ করি ৷ প্রতি বছর মায়ের কাছে যাই ৷”

গ্রামের বাসিন্দা গমসেদ আলিও বলেন, “আমরা মুসলিম ৷ মূর্তিপুজো আমাদের মধ্যে নেই ৷ কিন্তু এই জ্যান্ত মাকে এড়িয়ে যেতে পারি না ৷ মন্দিরের সামনে দিয়ে মাঠে যাওয়ার সময় মাকে প্রণাম করে যাই ৷ ভরদুপুরে কিংবা সন্ধ্যার পর মন্দিরের ধারেকাছে যাই না ৷ কেমন একটা ভয় কাজ করে ৷ মা বিবিহারকে আমরা খুবই শ্রদ্ধা করি ৷ তিনি আমাদের সবার মা ৷ কিন্তু মায়ের মন্দিরে যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই ৷ বৈদ্যুতিক আলোও নেই ৷ পঞ্চায়েত থেকে এটুকু করে দিলে খুব ভালো হয় ৷ কারণ, দীপাণ্বিতা অমাবস্যার রাতে শুধু আমরা নই, বিভিন্ন জেলা থেকেও প্রচুর মানুষ মায়ের কাছে পুজো দিতে আসেন ৷”

থেলুবাবুর চার ছেলে এখন মা বিবিহারের পুজোর দায়িত্ব নিয়েছেন ৷ বড় ছেলে মথুর সিংহ পুরোনো নথি ঘেঁটে বলেন, “253 বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষ দশরথ সিংহ এখানে পঞ্চমুণ্ডির আসন প্রতিষ্ঠা করেন ৷ সেখানে মাটির ঘট বসিয়ে তন্ত্রসাধনা করতেন তিনি ৷ তিনি প্রয়াত হওয়ার পর তাঁর উত্তরসূরি দশরথ সিংহ এখানে প্রথমবার মায়ের মৃণ্ময়ী মূর্তির পুজো শুরু করেন ৷ সেদিন থেকে প্রতি বছর কার্তিক অমাবস্যার রাতে মা বিবিহারের পুজো হয়ে আসছে ৷” মথুরবাবুর খুড়তুতো দাদা বাবলা সিংহের কথায়, “পারিবারিক এই পুজোয় এলাকায় প্রতিটি মানুষ অংশ নিয়ে থাকেন ৷ তন্ত্রমতে মায়ের পুজো হয় ৷ পুজো করেন দৌলতপুরের মনোজ পাণ্ডে ৷ পুজোর পরদিন মন্দিরের পাশের পুকুরে মায়ের মৃণ্ময়ী মূর্তি বিসর্জন দেওয়া হয় ৷”

কালীর সঙ্গে পূজিত হন শ্রীকৃষ্ণও, কৃষ্ণকালী ঘিরে উন্মাদনা

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.