হাড়োয়া, 23 নভেম্বর: হাড়োয়ায় মুখ থুবড়ে পড়ল আইএসএফ ও বিজেপি ৷ উত্তর 24 পরগনার হাড়োয়া বিধানসভার উপনির্বাচনে রেকর্ড ভোটে জয়লাভ করলেন তৃণমূল প্রার্থী শেখ রবিউল ইসলাম ৷ ভাঙলেন তাঁর বাবা তথা বসিরহাটের প্রয়াত সাংসদ হাজি নুরুল ইসলামের রেকর্ড ৷ 1 লক্ষ 31 হাজার 388 ভোটে জয়ী হয়েছেন রবিউল ৷
তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আইএসএফ প্রার্থী পিয়ারুল ইসলামকে হারিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী ৷ ভোট প্রচারে ব্যাপক ঝড় তুলেছিলেন পিয়ারুল ইসলাম ৷ কিন্তু, ভোট বাক্সে তার কোনও প্রতিফলনই দেখা গেল না ৷ তিনি ভোট পেয়েছেন মাত্র সাড়ে 25 হাজার ৷ বিজেপি প্রার্থী বিমল দাসের পরিস্থিতি আরও খারাপ ৷ তাঁর জামানত জব্দ হয়েছে ৷ তিনি ভোট পেয়েছেন সাড়ে 13 হাজারের কাছাকাছি ভোট ৷ এ দিন জয় নিশ্চিত বুঝতেই তৃণমূল প্রার্থী শেখ রবিউল ইসলামকে নিয়ে উল্লাসে মাতেন দলীয় কর্মী-সমর্থকরা ৷ সবুজ আবিরে মেখে শুরু হয় জয় উৎসব ৷
হাজি নুরুল ইসলাম 2016 ও 2021 সালে পরপর দু'বার হাড়োয়া থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন ৷ শেষবার বিধানসভা নির্বাচনে তিনি প্রায় 81 হাজার ভোটে জয়ী হন ৷ 2024 লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল তাঁকে বসিরহাট কেন্দ্রের প্রার্থী করে ৷ বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রকে প্রায় 3 লক্ষ 33 হাজার ভোটে হারিয়ে হাজি নুরুল সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন ৷ লোকসভা নির্বাচনে হাড়োয়া কেন্দ্র থেকে তিনি প্রায় 1 লক্ষ 11 হাজার ভোটে এগিয়েছিলেন ৷
সাংসদ নির্বাচিত হওয়ায় বিধায়ক পদে ইস্তফা দিতে হয়েছিল ৷ যদিও, সাংসদ হওয়ার কয়েকমাস পরেই মৃত্যু হয় হাজি নুরুল ইসলামের ৷ হাড়োয়া বিধানসভার উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী করে প্রয়াত হাজি নুরুলের মেজো ছেলে শেখ রবিউল ইসলামকে ৷ তাঁর বিরুদ্ধে পিয়ারুল ইসলাম আইএসএফ প্রার্থী ছিলেন ৷ বিজেপি প্রার্থী করে বিমল দাসকে ৷ ভোটপ্রচারে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আইএসএফ ও বিজেপি ব্যাপক প্রচার করেছিল ৷ কিন্তু, ভোট গণনায় দেখা গেল বিরোধীরা সেখানে দাগ কাটতেই পারল না ৷ বিজেপি এবং কংগ্রেস প্রার্থীর জামানত জব্দ হয়েছে ৷ কংগ্রেস প্রার্থী হাবিব রেজা চৌধুরী ভোট পেয়েছেন মাত্র 3 হাজার 762টি ৷
হাজি নুরুল ইসলাম 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে 81 হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন ৷ তিন বছরের মাথায় সেই জয়ের মার্জিন বেড়ে দাঁড়াল 1 লক্ষ 31 হাজার 388 ভোটে ৷ একই সঙ্গে শেখ রবিউল ইসলামের জয়ে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট যে, তাঁর প্রার্থিপদ ঘিরে তৃণমূলের অন্দরে যে গোষ্ঠী কোন্দল তৈরি হয়েছিল, তার কোনও প্রভাবই পড়েনি উপনির্বাচনে ৷
শেখ রবিউল বলেন, "হাড়োয়ার মানুষ রেকর্ড তৈরি করে ৷ আবার সেই রেকর্ড তাঁরাই ভাঙেন ৷ রেকর্ড ভাঙার পিছনে তাঁদের অবদানকে কুর্নিশ জানাচ্ছি আমি ৷ এর পিছনে আমার কোনও হাত নেই ৷ এই জয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের জয় ৷ বাবার ফেলে যাওয়া অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করাই হবে আমার প্রাধান্য ৷ এই জয় আমার বাবাকে উৎসর্গ করলাম ৷ আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে বিরোধীরা যেভাবে অপপ্রচার, কুৎসা করেছে ৷ তার জবাব দিয়েছে হাড়োয়ার মানুষ ৷ হাড়োয়ার হাসপাতালের সংস্কারের দিকে নজর দেব ৷ হাড়োয়ায় তৃণমূলের কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই ৷ তার প্রমাণ বিপুল ব্যবধানে এই জয় ৷"
এদিকে, বিরোধীরা তৃণমূল প্রার্থীর জয়কে সম্মান দিলেও, কটাক্ষ করতে ছাড়েনি ৷ এই বিষয়ে আইএসএফ প্রার্থী পিয়ারুল ইসলাম বলেন, "তৃণমূলের সন্ত্রাসের কারণে বারাসত 2 নম্বর ব্লকের অধিকাংশ বুথে আমরা কোনও এজেন্ট বসাতে পারিনি ৷ সেসব জায়গায় ভোট লুঠ হয়েছে ৷ কেন্দ্রীয় বাহিনীরও কোনও সহযোগিতা সেভাবে পাইনি ৷ তার ফল যা হওয়ার, তাই হয়েছে ৷"