কলকাতা, 2 অক্টোবর: জুনিয়র ডাক্তারদের পুনরায় পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু হতেই, সিনিয়র চিকিৎসকদের মধ্যে দু’টি ভাগ তৈরি হয়ে গিয়েছে ৷ যেখানে একপক্ষ নিরাপত্তার দাবিতে ফের কর্মবিরতিকে সমর্থন করছেন ৷ আর সিনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ আবার এই কর্মবিরতির বিপক্ষে ৷ তবে, তাতে কিছু যায় আসে না আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্টের ৷ যতদিন না কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা এবং অন্যান্য দাবিগুলি সুনিশ্চিত হচ্ছে, ততদিন এই কর্মবিরতি জারি থাকবে বলে জানালেন জুনিয়র ডাক্তাররা ৷
আজ দেবীপক্ষের সূচনায় কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মহামিছিলের ডাক দেয় জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্ট ৷ যেখানে মূল দাবিগুলি ছিল, প্রতিটি হাসপাতালে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং রোগীদের নিরাপত্তা ৷ সেই সঙ্গে থাকতে হবে রোগী পরিষেবা সংক্রান্ত অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাগুলি ৷ আর তার থেকেও সবচেয়ে বড় দাবি আরজি কর-কাণ্ডের দ্রুত সুবিচার ৷ তাঁদের এই মিছিলে সিনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ যেমন ছিলেন, তেমনই ছিলেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ এবং একাধিক অরাজনৈতিক সংগঠন ৷
তবে, জুনিয়র ডাক্তারদের পূর্ণ কর্মবিরতিকে সমর্থন করছেন না একাংশ সিনিয়র চিকিৎসক ৷ তাঁদের মধ্যে অন্যতম চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী ৷ যিনি প্রথম দফায় কর্মবিরতির সমর্থন এবং থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন ৷ তাঁর কথায়, "আমরা যেমন সাধারণ গরিব মানুষকে পরিষেবা দিয়েই ন্যায় বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছি, আন্দোলন করছি, ঠিক তেমনই কর্মবিরতির বিকল্প হিসেবে অন্য কোনও পথ অবলম্বন করাই জুনিয়র চিকিৎসকদের পক্ষে ভালো হবে বলে মনে করি ৷" তবে, জুনিয়র ডাক্তারদের দ্বিতীয়বারের কর্মবিরতির কারণ অন্যায় নয় বলেও মেনে নিয়েছেন তিনি ৷ তবে, কর্মবিরতির বিকল্পপথ খোঁজার দাবি জানিয়েছেন তিনি ৷
এ প্রসঙ্গে জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্টের সদস্য রুমেলিকা কুমার বলেন, "আমরা বারংবার বলেছি, কাজে ফিরতে চাই ৷ কিন্তু, তার আগে আমাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে ৷ আমরা মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক এবং সেন্ট্রাল টিমের পরিদর্শনকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছিলাম ৷ তাই আমরা আংশিক কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে জরুরি পরিষেবা দেওয়া শুরু করেছিলাম ৷ কিন্তু, সুপ্রিম কোর্টের শুনানি এবং রাজ্য সরকারের ভূমিকা আমাদের হতাশ করেছে ৷ আর সাগর দত্ত মেডিক্যাল এবং বর্ধমান মেডিক্যালের ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত ৷ শুরু থেকে আমরা বলছিলাম যে, কর্মক্ষেত্রে আমরা নিরাপদ নই ৷ সেটা আবারও প্রমাণ হয়েছে ৷ কিন্তু, আমরা আবারও বলছি, মানুষের সেবায় আমরা ফিরতে চাই ৷ কিন্তু, তার আগে আমাদের নিজেদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে ৷"
এই কর্মবিরতি এবং আন্দোলন পুজোর সময়ও চলবে বলে জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্টের সদস্য সত্যদীপ সরকার ৷ তিনি বলেন, "আমাদের আন্দোলন জারি থাকবে ৷ সাধারণ মানুষের যে সমস্যা, তা নিয়ে আমরা আলোচনায় বসব ৷ সেখানে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাব ৷ অবশ্যই আমরা রোগী পরিষেবা ও তাঁদের স্বার্থকে গুরুত্ব দেব ৷ সঙ্গে নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টিকেও নিশ্চিত করতে হবে আমাদের ৷"
মোটের উপর সিনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ যতই জুনিয়র ডাক্তারদের ফের কর্মবিরতির বিরুদ্ধে যান না-কেন, জুনিয়ার ডাক্তার ফ্রন্টের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সাগর দত্ত এবং বর্ধমান মেডিক্যালের ঘটনার পর, নিজেদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত না-হলে কর্মবিরতি প্রত্যাহার হবে না ৷ তাঁদের দাবি, এই আন্দোলনের একটা বড় অংশ জুড়ে রোগী-স্বার্থ জড়িত রয়েছে ৷