কলকাতা, 30 অক্টোবর: আহা ভূত, বাহা ভূত/ কিবা ভূত, কিম্ভুত/ বাবা ভূত, ছানা ভূত/ খোঁড়া ভূত, কানা ভূত/ কাঁচা ভূত, পাকা ভূত...৷ গুপী-বাঘার এই ভূতেরা না-থাকলেও কালীপুজোর প্রাক্কালে তাদেরই 'ভায়রা-ভাই'রা সব হাজির কুমোরটুলির ভূতপট্টিতে ৷ কালীপুজোর মণ্ডপসজ্জায় তাদের বিরাট কদর ৷ ভূত চতুর্দশীর রাতে এই ভূতেদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন শিল্পীরা ৷
কুমোরটুলিতে শেষবেলায় একে একে বিকোচ্ছে দেবীমূর্তি ৷ আর দেবীর পাশাপাশি ব্যাপক বিক্রি চলছে ডাকিনী-যোগিনীদেরও ৷ নানা রূপের ভয়াল ভূতের মূর্তির চাহিদা তুঙ্গে ৷ বিজ্ঞানের অগ্রগতি হয়েছে, কুসংস্কার ঘুচেছে বহু অংশে । তবু কালীপুজোয় ভূতের মূর্তি কেনার হিড়িক এতটুকু কমেনি ৷ চাহিদা বেশি থাকায় দামও চড়াচ্ছেন বিক্রেতারা ।
কালী আরাধনার সঙ্গে চিরকাল মিলেমিশে রয়েছে এক ভৌতিক পরিবেশ । তন্ত্র সাধনার উপকরণে দেখা যায় মাথার খুলির উপস্থিতি ৷ সেসব থেকেই বিভিন্ন সময় ভৌতিক পরিবেশ তৈরি করার জন্য কালীপুজোয় মণ্ডপকে রকমারি ভূত বা রাক্ষস-রাক্ষসীর পুতুল দিয়ে তা সাজানো হয় । এমনটাই হয়ে আসছে বহুকাল ধরে । আজও সেই ক্রেজ কমেনি ৷
যত দিন যাচ্ছে, ততই বাড়ছে ভূতের মূর্তির চাহিদা ৷ প্রতিবছর কালীপুজোর আগে দম ফেলার ফুরসত পান না প্রতিমা শিল্পীরা । প্রতিমার চাহিদা এমন থাকে যে, আগের দিন পর্যন্ত তৈরি করেও রাতারাতি সেটা শুকিয়ে রং করে বিক্রি করা হয় । একইরকম চাহিদা থাকে ভূতের পুতুলেরও । মূলত প্রতিমার ফেলে দেওয়া কাঠামো দিয়েই এই ভূত পুতুল তৈরি হয় । এদিন কুমোরটুলি ভূতপট্টিতে দেখা গেল সেই পুতুল বানাতে ব্যস্ত শিল্পীরা ৷
কোনও পুতুলের বিরাট বিরাট চোখ, কোনওটার মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে, কারও হাতে দেহাংশ - এমনই ভয় পাওয়ার মতো মূর্তি তৈরি করে চলেছেন শিল্পীরা ৷ তাঁরা জানালেন, "ছোট ভূত জোড়া প্রায় 2000 টাকা, আর একটু বড় হলে তার দাম ওঠে 3500-4000 টাকা । আরও বড় হলে 5-6 হাজার টাকাও হয় ভূতের মূর্তির দাম । আজ যত রাত বাড়বে ততই আসবেন ক্রেতারা । বাড়বে ভিড় । চাহিদা বাড়লেই ভূতের দামও লাফিয়ে বাড়বে ।"
ক্রেতাদের কথায়, "ভূত বলে কিছু নেই, শিক্ষিত সমাজের এটাই বিশ্বাস ৷ অনেকেই এসব মানেন না ৷ কিন্তু কালীপুজোর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এই ভূতের মূর্তিগুলিই । ছোটবেলায় আমরাও কালীপুজো মানেই এইসব মূর্তি দেখেছি মণ্ডপে । এখনও সেই ঐতিহ্যে কোনও খামতি নেই ।"