ETV Bharat / state

পুনর্জীবন পেয়েছিল মৃতপ্রায় ইসকো ! শিল্পাঞ্চলে আলো এনেছিলেন 'মসিহা' মনমোহন - MANMOHAN SINGH

আজও টাটকা স্মৃতি ৷ মনমোহন সিংয়ের জন্যই আজও বেঁচে রয়েছে ইসকো ৷ তাঁর মৃত্যুতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ তৎকালীন আন্দোলনের নেতৃত্বরা ও শ্রমিক নেতাদের ।

Manmohan Singh
2006 সালের 24 ডিসেম্বর বার্নপুরে ইসকোর আধুনিকীকরণ প্রকল্পের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন মনমোহন সিং (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 27, 2024, 8:36 PM IST

Updated : Dec 27, 2024, 9:16 PM IST

আসানসোল, 27 ডিসেম্বর: বিনা বেতনে, ভবিষ্যতহীন এক অন্ধ গহ্বরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে শ্রমিকরাও যখন ক্লান্ত, ঠিক তখনই যেন শিল্পাঞ্চলের জন্য 'মসিহা' হয়ে উঠেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। ইসকো কারাখানাকে সেইলের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত করে 18 হাজার কোটি টাকার আধুনিকীকরণ প্রকল্প বাস্তবায়িত করেছিলেন ।

আজ দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ইস্পাত উৎপাদনের কারখানা হওয়ার পথে সেইলের ইসকো স্টিল প্ল্যান্ট । কিন্তু মনমোহন সিং না থাকলে শিল্পাঞ্চলের এই আলোর দিন কখনওই আসত না । সেই স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বারবার প্রয়াত মনমোহন সিংকে নিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তৎকালীন আন্দোলনের নেতৃত্বরা ও শ্রমিক নেতারা ।

ইসকোকে নতুন প্রাণ দিয়েছিলেন মনমোহন সিং (ইটিভি ভারত)

90 দশকের গোড়া থেকেই রুগ্নপ্রায় হতে থাকে বার্নপুরের ইসকো কারখানা । উৎপাদিত লোহার মূল্যের তুলনায় বিক্রিত মূল্য ক্রমশ হ্রাস পাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে থাকে কারখানাটি । 1994 সালে কারখানাটিকে বিআইএফআর-এ পাঠানো হয় । ঠিক তখন থেকেই ইসকো বাঁচাও কমিটি তৈরি করে জোরদার আন্দোলন শুরু হয় । তৎকালীন বাম জননেতা প্রয়াত চন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায় এবং প্রয়াত বামাপদ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শুরু হয় ইসকো বাঁচাও কমিটির আন্দোলন । কিন্তু আন্দোলনেরও তেমন ফল পাওয়া যায়নি । কোনও কেন্দ্র সরকারই রুগ্নপ্রায় এই কারখানা শ্রমিকদের আর্ত আহ্বান শুনতে পাননি ।

2004 সালে ইউপিএ (1) গঠন হয় । আর সেই সময় প্রচুর সাংসদ নিয়ে বামেরাও ইউপিএ (এক) সরকারে যোগ দেয় । যার ফলে নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠা করার একটা বড় সুযোগ হয় বামেদের । আর সেই সময়কার জনপ্রিয় সংসদ বাসুদেব আচারিয়া ও কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির চেষ্টায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইসকো নিয়ে একটি বৈঠকের প্রস্তাব দেন । সেই প্রস্তাবে সাগ্রহে রাজি হয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ৷ এরপর বাসুদেব আচারিয়া-সহ আরও বেশ কয়েকজন বামেদের সাংসদ এবং ইসকো কারখানার পক্ষ থেকে শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা সরাসরি গিয়ে মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে দেখা করে ইসকো-কে বাঁচানোর জন্য আবেদন রাখেন । সেই আবেদনে সাড়া মেলে ।

Manmohan Singh
বার্নপুর এয়ারস্ট্রিপে মনমোহন সিং আনুষ্ঠানিকভাবে শিলান্যাস করেন ইসকো কারখানার আধুনিকীকরণ প্রকল্পের (ইটিভি ভারত)

2006 সালের 24 ডিসেম্বর । আসে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত । বার্নপুর এয়ারস্ট্রিপে মনমোহন সিং আনুষ্ঠানিকভাবে শিলান্যাস করেন ইসকো কারখানার আধুনিকীকরণ প্রকল্পের । তাঁর জন্যই এই প্রকল্প হয়েছিল । মনমোহন সিং ছাড়াও তৎকালীন ইস্পাত মন্ত্রী রামবিলাস পাসওয়ান, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-সহ অনেকের উপস্থিতিতে ইসকোর আধুনিকীকরণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় । মোট 18 হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প হয় । প্রোডাকশন শুরু হয় এবং সুদিন ফিরে আসে মৃতপ্রায় ইসকোয় । শিল্পাঞ্চলের এই মৃতপ্রায় কারখানাকে প্রাণ এনে দেওয়ার রূপকার হিসেবে অবশ্যই মনমোহন সিংয়ের নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে ।

বর্তমানে ইসকো কারখানায় 35 হাজার কোটি টাকা দিয়ে নতুনভাবে আধুনিকীকরণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে । কিন্তু যাঁর হাত ধরে এই অস্তমিত হয়ে যাওয়া কারখানায় নতুন আলো এসেছিল তাঁর প্রয়াণে সেই স্মৃতিচারণায় করছেন তৎকালীন শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্বরা ।

Manmohan Singh
বার্নপুরের অনুষ্ঠানে মনমোহন সিং, পিছনে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব (ইটিভি ভারত)

প্রাক্তন ইসকো কর্মী ও প্রবীণ সিটু নেতা বিমল দত্তের কথায়, "বাসুদেব আচারিয়ার নেতৃত্বে সেদিন আমরা শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্বরা মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম । সেই সাক্ষাতে ইসকো কারখানার শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্বদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলাম আমি । সেই দিনকার কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে । কী সুন্দর ব্যবহার ছিল প্রধানমন্ত্রীর । তিনি না থাকলে ইসকো কারখানা কখনওই বাঁচত না । তাই আমরা চিরকৃতজ্ঞ থাকব মনমোহন সিংয়ের কাছে । শিল্পাঞ্চলের এই যে আলোর দিন ফিরে এসেছে এটা তিনি না থাকলে হত না ।"

ইসকো কারখানার আইএনটিউসির সাধারণ সম্পাদক হরজিত সিং বলেন, "প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির তত্ত্বাবধানে আমাদের শ্রমিক আন্দোলনের প্রতিনিধিরা মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেছিলাম । তারপর 2006 সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসকো কারখানার আধুনিকীকরণের শিলান্যাস করে যান মনমোহন সিং এবং নতুন দিন আসে আমাদের শিল্পাঞ্চলের জন্য । তিনি ছিলেন তাই ইসকো কারখানা আবার পুনরায় প্রাণ ফিরে পেয়েছিল । মৃতপ্রায় শিল্পাঞ্চলে পুনরায় আর্থ সামাজিক উন্নতি হয়েছে তার হাত ধরেই ।"

আসানসোল, 27 ডিসেম্বর: বিনা বেতনে, ভবিষ্যতহীন এক অন্ধ গহ্বরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে শ্রমিকরাও যখন ক্লান্ত, ঠিক তখনই যেন শিল্পাঞ্চলের জন্য 'মসিহা' হয়ে উঠেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। ইসকো কারাখানাকে সেইলের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত করে 18 হাজার কোটি টাকার আধুনিকীকরণ প্রকল্প বাস্তবায়িত করেছিলেন ।

আজ দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ইস্পাত উৎপাদনের কারখানা হওয়ার পথে সেইলের ইসকো স্টিল প্ল্যান্ট । কিন্তু মনমোহন সিং না থাকলে শিল্পাঞ্চলের এই আলোর দিন কখনওই আসত না । সেই স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বারবার প্রয়াত মনমোহন সিংকে নিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তৎকালীন আন্দোলনের নেতৃত্বরা ও শ্রমিক নেতারা ।

ইসকোকে নতুন প্রাণ দিয়েছিলেন মনমোহন সিং (ইটিভি ভারত)

90 দশকের গোড়া থেকেই রুগ্নপ্রায় হতে থাকে বার্নপুরের ইসকো কারখানা । উৎপাদিত লোহার মূল্যের তুলনায় বিক্রিত মূল্য ক্রমশ হ্রাস পাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে থাকে কারখানাটি । 1994 সালে কারখানাটিকে বিআইএফআর-এ পাঠানো হয় । ঠিক তখন থেকেই ইসকো বাঁচাও কমিটি তৈরি করে জোরদার আন্দোলন শুরু হয় । তৎকালীন বাম জননেতা প্রয়াত চন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায় এবং প্রয়াত বামাপদ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শুরু হয় ইসকো বাঁচাও কমিটির আন্দোলন । কিন্তু আন্দোলনেরও তেমন ফল পাওয়া যায়নি । কোনও কেন্দ্র সরকারই রুগ্নপ্রায় এই কারখানা শ্রমিকদের আর্ত আহ্বান শুনতে পাননি ।

2004 সালে ইউপিএ (1) গঠন হয় । আর সেই সময় প্রচুর সাংসদ নিয়ে বামেরাও ইউপিএ (এক) সরকারে যোগ দেয় । যার ফলে নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠা করার একটা বড় সুযোগ হয় বামেদের । আর সেই সময়কার জনপ্রিয় সংসদ বাসুদেব আচারিয়া ও কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির চেষ্টায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইসকো নিয়ে একটি বৈঠকের প্রস্তাব দেন । সেই প্রস্তাবে সাগ্রহে রাজি হয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ৷ এরপর বাসুদেব আচারিয়া-সহ আরও বেশ কয়েকজন বামেদের সাংসদ এবং ইসকো কারখানার পক্ষ থেকে শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা সরাসরি গিয়ে মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে দেখা করে ইসকো-কে বাঁচানোর জন্য আবেদন রাখেন । সেই আবেদনে সাড়া মেলে ।

Manmohan Singh
বার্নপুর এয়ারস্ট্রিপে মনমোহন সিং আনুষ্ঠানিকভাবে শিলান্যাস করেন ইসকো কারখানার আধুনিকীকরণ প্রকল্পের (ইটিভি ভারত)

2006 সালের 24 ডিসেম্বর । আসে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত । বার্নপুর এয়ারস্ট্রিপে মনমোহন সিং আনুষ্ঠানিকভাবে শিলান্যাস করেন ইসকো কারখানার আধুনিকীকরণ প্রকল্পের । তাঁর জন্যই এই প্রকল্প হয়েছিল । মনমোহন সিং ছাড়াও তৎকালীন ইস্পাত মন্ত্রী রামবিলাস পাসওয়ান, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-সহ অনেকের উপস্থিতিতে ইসকোর আধুনিকীকরণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় । মোট 18 হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প হয় । প্রোডাকশন শুরু হয় এবং সুদিন ফিরে আসে মৃতপ্রায় ইসকোয় । শিল্পাঞ্চলের এই মৃতপ্রায় কারখানাকে প্রাণ এনে দেওয়ার রূপকার হিসেবে অবশ্যই মনমোহন সিংয়ের নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে ।

বর্তমানে ইসকো কারখানায় 35 হাজার কোটি টাকা দিয়ে নতুনভাবে আধুনিকীকরণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে । কিন্তু যাঁর হাত ধরে এই অস্তমিত হয়ে যাওয়া কারখানায় নতুন আলো এসেছিল তাঁর প্রয়াণে সেই স্মৃতিচারণায় করছেন তৎকালীন শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্বরা ।

Manmohan Singh
বার্নপুরের অনুষ্ঠানে মনমোহন সিং, পিছনে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব (ইটিভি ভারত)

প্রাক্তন ইসকো কর্মী ও প্রবীণ সিটু নেতা বিমল দত্তের কথায়, "বাসুদেব আচারিয়ার নেতৃত্বে সেদিন আমরা শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্বরা মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম । সেই সাক্ষাতে ইসকো কারখানার শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্বদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলাম আমি । সেই দিনকার কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে । কী সুন্দর ব্যবহার ছিল প্রধানমন্ত্রীর । তিনি না থাকলে ইসকো কারখানা কখনওই বাঁচত না । তাই আমরা চিরকৃতজ্ঞ থাকব মনমোহন সিংয়ের কাছে । শিল্পাঞ্চলের এই যে আলোর দিন ফিরে এসেছে এটা তিনি না থাকলে হত না ।"

ইসকো কারখানার আইএনটিউসির সাধারণ সম্পাদক হরজিত সিং বলেন, "প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির তত্ত্বাবধানে আমাদের শ্রমিক আন্দোলনের প্রতিনিধিরা মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেছিলাম । তারপর 2006 সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসকো কারখানার আধুনিকীকরণের শিলান্যাস করে যান মনমোহন সিং এবং নতুন দিন আসে আমাদের শিল্পাঞ্চলের জন্য । তিনি ছিলেন তাই ইসকো কারখানা আবার পুনরায় প্রাণ ফিরে পেয়েছিল । মৃতপ্রায় শিল্পাঞ্চলে পুনরায় আর্থ সামাজিক উন্নতি হয়েছে তার হাত ধরেই ।"

Last Updated : Dec 27, 2024, 9:16 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.