ETV Bharat / state

বউবাজারে পিটিয়ে হত্যা ! উদয়ন হস্টেল থেকে নমুনা সংগ্রহ ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের - Bowbazar Lynching Incident

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jul 1, 2024, 7:58 PM IST

Bowbazar Lynching Incident: উদয়ন হস্টেলে 'পিটিয়ে' হত্যার ঘটনার তদন্তে সোমবার সেখানে আসেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ৷ তাঁরা রক্তের নমুনা-সহ ব্যাট সংগ্রহ করে নিয়ে যান ৷ অভিযুক্তদের জেরা করে পুলিশের হাতে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে ৷

Bowbazar Lynching Incident
উদয়ন হোস্টেলে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা (নিজস্ব ছবি)

কলকাতা, 1 জুলাই: যুবককে 'পিটিয়ে' হত্যার ঘটনায় উদয়ন হস্টেল থেকে নমুনা সংগ্রহ করলেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা । সোমবার দুপুর দেড়টা নাগাদ তাঁরা ওই ছাত্রাবাসে আসেন । ফরেন্সিক দলের সঙ্গে ছিল বউবাজার ও মুচিপাড়া থানার পুলিশ । মূলত একাধিক জিনিসপত্র নিয়ে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ছাত্রাবাসের ভিতরে ঢোকেন । সেখান থেকে একাধিক সামগ্রী তাঁরা সংগ্রহ করেন ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ইরশাদ আলমকে যে জায়গায় মারধর করা হয়েছিল সেখানে এখনও রক্তের দাগ রয়েছে ৷ সেগুলি থেকে ফরেন্সিক দল নমুনা সংগ্রহ করে এ দিন । এছাড়াও ছাত্রাবাসের ভিতরে ছাত্রদের ব্যবহার করা বিছানার চাদর থেকে একাধিক ক্রিকেট ব্যাট ও রক্ত মাখা লাঠি সংগ্রহ করে নিয়ে যান তাঁরা ।

গত শুক্রবার মোবাইল চোর সন্দেহে এক যুবককে বউবাজারের নির্মলচন্দ্র স্ট্রিটের উদয়ন হস্টেলে ঢুকিয়ে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ ওঠে কয়েকজন পড়ুয়ার বিরুদ্ধে । বেলগাছিয়ার বাসিন্দা মৃত যুবক ইরশাদ আলম পেশায় টিভি মেকানিক ছিলেন ৷ গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ 14 জন অভিযুক্তকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করেছে ।

ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন কাকদ্বীপ থানার ফটিকপুরের বাসিন্দা দুধকুমার মণ্ডল (26) । পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দুধকুমার অভাবী পরিবারের সন্তান । দুধকুমারের বাবা পেশায় কৃষক । চাষবাস করেই কোনওক্রমে সংসার চলে তাঁদের । অভাবের সংসারের আর্থিক অনটনকে সঙ্গী করেই উচ্চশিক্ষার জন্য কয়েক বছর আগে কলকাতায় পাড়ি দিয়েছিলেন দুধকুমার ।

ছোট থেকে পড়াশোনায় মেধাবী ছিলেন এই যুবক । 2018 সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃত নিয়ে এমএ পাশ করেন তিনি । তারপর হস্টেলে থেকেই চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছিলেন । দুধকুমার অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির ছেলে বলে দাবি পরিবারের । গণপিটুনিতে তাঁর নাম জড়ানোয় হতবাক পরিবার । তবে বউবাজারের হস্টেলে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় দুধকুমার কোনওভাবে জড়িয়ে থাকতে পারে না বলে দাবি পরিবারের সদস্যদের । ছেলের সুবিচারের জন্য আইনের প্রতি আস্থা রাখছেন তাঁরা ।

এই গণপিটুনির ঘটনার অভিযুক্তদের জেরা করে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে লালবাজারের হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দাদের হাতে । জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন সংশ্লিষ্ট ছাত্রাবাসের এক আবাসিকের ফোন চুরি হয়ে গিয়েছিল । তদন্তে নেমে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে তদন্তকারীরা দেখতে পান যে, ওই দিন কালো রঙের জামা পরে এক ব্যক্তি ছাত্রাবাসের ভিতরে ঢুকছেন এবং 15 মিনিট পর কালো জামা পরে এক ব্যক্তি হস্টেল থেকে বাইরে বেরিয়ে আসছেন । হস্টেল থেকে বেরিয়ে আসা ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা যুবকের গঠনের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন তদন্তকারীরা ।

পুলিশ সূত্রে খবর, হস্টেল থেকে বেরিয়ে আসা ব্যক্তির চেহারা অনেকটা রোগা ছিপছিপে । অথচ হস্টেলের ভিতরে ঢোকা কালো রঙের জামা পরা ওই ব্যক্তির চেহারা অনেকটা মোটাসোটা । ফলে তদন্তকারীদের অনুমান, ইরশাদ আলমকে শুধুমাত্র মোবাইল চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে । তিনি হস্টেলে ঢুকেছিলেন কিন্তু আদতে মোবাইল চুরি করেননি । যদিও এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, "গোটাটাই সন্দেহ এবং অনুমানের উপর ভিত্তি করে তদন্ত চলছে ।"

লালবাজারের তরফে জানা গিয়েছে, ওই দিন ঘটনাটি যখন ঘটেছিল সেই সময় সংশ্লিষ্ট হস্টেলে সুপার সেখানে উপস্থিত ছিলেন না । তিনি সেই সময় কোথায় ছিলেন এবং গোটা বিষয়টি তিনি কীভাবে জানতে পারলেন, তা জানার জন্য এবার চলতি সপ্তাহেই তাঁকে স্থানীয় মুচিপাড়া থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে । মূলত এই ঘটনার তদন্তে নেমে অভিযুক্ত পড়ুয়াদের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে । রেকর্ড করা বয়ানের উপর ভিত্তি করে সংশ্লিষ্ট হস্টেলের সুপারকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন এবং প্রয়োজনে তাঁরও বয়ান রেকর্ড করবেন তদন্তকারীরা ।

পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের জেরা করে তদন্তকারীরা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন, ঘটনার দিন ইরশাদ আলমকে হস্টেলের বাইরে থেকে মোবাইল চোর সন্দেহে 2 পড়ুয়া প্রথমে মারতে মারতে হস্টেলের ভিতরে ঢোকায় । পরে ক্রিকেট খেলার একাধিক ব্যাট দিয়ে প্রথমে তাঁর কোমরে বারবার আঘাত করা হয় । এতে মাটিতে পড়ে যান তিনি ৷ এরপর তাঁকে তুলে দাঁড় করিয়ে ফের প্রহার করা হয় ৷ তখন তাঁর ডান পায়ে মারা হয় ৷ যার ফলে পা ভেঙে যায় যুবকের ৷ তারপর হাতে ও মাথায় গুরুতর আঘাত করা হয় ইরশাদের ৷

এই নির্মম অত্যাচারের পরেই টিভি মেকানিক ওই যুবককে পড়ুয়ারা নির্দেশ দেন যে, নিকটবর্তী যে দোকানে তিনি কাজ করেন সেখানকার মালিককে ফোন করে দশ হাজার টাকা তখনই যেন নিয়ে আসতে বলা হয় । কিন্তু ততক্ষণে শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে নিস্তেজ হয়ে পড়ে যুবক । দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকির পর অবশেষে পুলিশ তাঁকে সেখান থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় ৷ তবে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন ।

কলকাতা, 1 জুলাই: যুবককে 'পিটিয়ে' হত্যার ঘটনায় উদয়ন হস্টেল থেকে নমুনা সংগ্রহ করলেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা । সোমবার দুপুর দেড়টা নাগাদ তাঁরা ওই ছাত্রাবাসে আসেন । ফরেন্সিক দলের সঙ্গে ছিল বউবাজার ও মুচিপাড়া থানার পুলিশ । মূলত একাধিক জিনিসপত্র নিয়ে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ছাত্রাবাসের ভিতরে ঢোকেন । সেখান থেকে একাধিক সামগ্রী তাঁরা সংগ্রহ করেন ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ইরশাদ আলমকে যে জায়গায় মারধর করা হয়েছিল সেখানে এখনও রক্তের দাগ রয়েছে ৷ সেগুলি থেকে ফরেন্সিক দল নমুনা সংগ্রহ করে এ দিন । এছাড়াও ছাত্রাবাসের ভিতরে ছাত্রদের ব্যবহার করা বিছানার চাদর থেকে একাধিক ক্রিকেট ব্যাট ও রক্ত মাখা লাঠি সংগ্রহ করে নিয়ে যান তাঁরা ।

গত শুক্রবার মোবাইল চোর সন্দেহে এক যুবককে বউবাজারের নির্মলচন্দ্র স্ট্রিটের উদয়ন হস্টেলে ঢুকিয়ে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ ওঠে কয়েকজন পড়ুয়ার বিরুদ্ধে । বেলগাছিয়ার বাসিন্দা মৃত যুবক ইরশাদ আলম পেশায় টিভি মেকানিক ছিলেন ৷ গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ 14 জন অভিযুক্তকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করেছে ।

ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন কাকদ্বীপ থানার ফটিকপুরের বাসিন্দা দুধকুমার মণ্ডল (26) । পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দুধকুমার অভাবী পরিবারের সন্তান । দুধকুমারের বাবা পেশায় কৃষক । চাষবাস করেই কোনওক্রমে সংসার চলে তাঁদের । অভাবের সংসারের আর্থিক অনটনকে সঙ্গী করেই উচ্চশিক্ষার জন্য কয়েক বছর আগে কলকাতায় পাড়ি দিয়েছিলেন দুধকুমার ।

ছোট থেকে পড়াশোনায় মেধাবী ছিলেন এই যুবক । 2018 সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃত নিয়ে এমএ পাশ করেন তিনি । তারপর হস্টেলে থেকেই চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছিলেন । দুধকুমার অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির ছেলে বলে দাবি পরিবারের । গণপিটুনিতে তাঁর নাম জড়ানোয় হতবাক পরিবার । তবে বউবাজারের হস্টেলে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় দুধকুমার কোনওভাবে জড়িয়ে থাকতে পারে না বলে দাবি পরিবারের সদস্যদের । ছেলের সুবিচারের জন্য আইনের প্রতি আস্থা রাখছেন তাঁরা ।

এই গণপিটুনির ঘটনার অভিযুক্তদের জেরা করে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে লালবাজারের হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দাদের হাতে । জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন সংশ্লিষ্ট ছাত্রাবাসের এক আবাসিকের ফোন চুরি হয়ে গিয়েছিল । তদন্তে নেমে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে তদন্তকারীরা দেখতে পান যে, ওই দিন কালো রঙের জামা পরে এক ব্যক্তি ছাত্রাবাসের ভিতরে ঢুকছেন এবং 15 মিনিট পর কালো জামা পরে এক ব্যক্তি হস্টেল থেকে বাইরে বেরিয়ে আসছেন । হস্টেল থেকে বেরিয়ে আসা ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা যুবকের গঠনের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন তদন্তকারীরা ।

পুলিশ সূত্রে খবর, হস্টেল থেকে বেরিয়ে আসা ব্যক্তির চেহারা অনেকটা রোগা ছিপছিপে । অথচ হস্টেলের ভিতরে ঢোকা কালো রঙের জামা পরা ওই ব্যক্তির চেহারা অনেকটা মোটাসোটা । ফলে তদন্তকারীদের অনুমান, ইরশাদ আলমকে শুধুমাত্র মোবাইল চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে । তিনি হস্টেলে ঢুকেছিলেন কিন্তু আদতে মোবাইল চুরি করেননি । যদিও এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, "গোটাটাই সন্দেহ এবং অনুমানের উপর ভিত্তি করে তদন্ত চলছে ।"

লালবাজারের তরফে জানা গিয়েছে, ওই দিন ঘটনাটি যখন ঘটেছিল সেই সময় সংশ্লিষ্ট হস্টেলে সুপার সেখানে উপস্থিত ছিলেন না । তিনি সেই সময় কোথায় ছিলেন এবং গোটা বিষয়টি তিনি কীভাবে জানতে পারলেন, তা জানার জন্য এবার চলতি সপ্তাহেই তাঁকে স্থানীয় মুচিপাড়া থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে । মূলত এই ঘটনার তদন্তে নেমে অভিযুক্ত পড়ুয়াদের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে । রেকর্ড করা বয়ানের উপর ভিত্তি করে সংশ্লিষ্ট হস্টেলের সুপারকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন এবং প্রয়োজনে তাঁরও বয়ান রেকর্ড করবেন তদন্তকারীরা ।

পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের জেরা করে তদন্তকারীরা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন, ঘটনার দিন ইরশাদ আলমকে হস্টেলের বাইরে থেকে মোবাইল চোর সন্দেহে 2 পড়ুয়া প্রথমে মারতে মারতে হস্টেলের ভিতরে ঢোকায় । পরে ক্রিকেট খেলার একাধিক ব্যাট দিয়ে প্রথমে তাঁর কোমরে বারবার আঘাত করা হয় । এতে মাটিতে পড়ে যান তিনি ৷ এরপর তাঁকে তুলে দাঁড় করিয়ে ফের প্রহার করা হয় ৷ তখন তাঁর ডান পায়ে মারা হয় ৷ যার ফলে পা ভেঙে যায় যুবকের ৷ তারপর হাতে ও মাথায় গুরুতর আঘাত করা হয় ইরশাদের ৷

এই নির্মম অত্যাচারের পরেই টিভি মেকানিক ওই যুবককে পড়ুয়ারা নির্দেশ দেন যে, নিকটবর্তী যে দোকানে তিনি কাজ করেন সেখানকার মালিককে ফোন করে দশ হাজার টাকা তখনই যেন নিয়ে আসতে বলা হয় । কিন্তু ততক্ষণে শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে নিস্তেজ হয়ে পড়ে যুবক । দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকির পর অবশেষে পুলিশ তাঁকে সেখান থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় ৷ তবে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.