হুগলি, 4 অগস্ট: প্রবল বর্ষণে হুগলি জেলাজুড়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে । খানাকুল, বলাগড়, পাণ্ডুয়া, পোলবা, আরামবাগ ও গোঘাট-সহ একাধিক ব্লক জলমগ্ন । তার মধ্যে একাধিক মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে । শতাধিক মানুষ গৃহহীন । বলাগড় ব্লকের একতারপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কিছু গ্রাম ও জিরাট খামারগাছির চাষের জমি জলের তলায় । ডিভিসি জল ছাড়ার ফলে ব্লকগুলি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ৷ এই নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসন ।
শনিবার খানাকুলে এই নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করেন জেলাশাসক, মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়করা । পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে । বিভিন্ন ব্লকের স্কুলগুলিতে ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে । ব্লক প্রসাশনের তরফে ত্রিপল ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে ক্যাম্পে থাকা মানুষদের জন্য । একতারপুরের মানুষ আশ্রয় নিয়েছে রাস্তার ধারে উঁচু জায়গায় । ডহর তিওরনই, মাজদিয়া ও সারেন্দা-সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম জলমগ্ন । ডিভিসি আরও জল ছাড়লে প্লাবনের আশঙ্কা । বাড়ির ভিতরে জল ঢুকে যাওয়ার জন্য সাপের আতঙ্কে ভুগছেন গ্রামবাসীরা । ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়ার পাশাপাশি রাস্তার পাশে তাঁবু খাটিয়েও রয়েছেন কিছুজন ।
অন্যদিকে, পোলবার বরুনানে জল নিকাশি না থাকার জন্য জলমগ্ন জমি ও বাড়ি । ডিভিসির ছাড়া জলে সোয়াখাল ভরে গিয়েছে । জল সেচ দফতর কাজ শুরু করেছে নিকাশি ব্যবস্থা ভালো করার জন্য । যদি এভাবে বৃষ্টি চলতে থাকে ও ডিভিসি জল ছাড়লে বন্যার সম্ভবনা প্রবল । এই বিষয়ে চুঁচুড়া সদর মহকুমা শাসক স্মিতা সান্যাল শুক্লা জানিয়েছেন,পান্ডুয়া, বলাগড় ও পোলবা-সহ যে সব জায়গায় জলমগ্ন সেখানে শিবির খোলা হয়েছে স্কুলে ।পরিস্থিতি বুঝে সেখানে যেতে বলা হয়েছে । তবে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে সব রকম ব্যবস্থা নিয়ে রাখা হয়েছে ।
গোঘাট-1 ও গোঘাট-2 ব্লকে মৌজার পর মৌজা চাষের জমি জলের তলায় । মাথায় হাত চাষিদের । চরম দুশ্চিন্তায় রাত কাটছে গোঘাটের সাতবড়িয়া ও সুনিয়া-সহ বেশ কয়েকটি এলাকার ধান চাষিদের । টানা বৃষ্টিতে খানাকুল 2 ব্লকের অন্তর্গত পোল 1 গ্রাম পঞ্চায়েতের রায়বার এলাকায় একটি মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে । গৃহহীন শিশু-সহ পরিবারের 20 জন সদস্য । তাদের দাবি, এলাকার সমস্ত রাস্তা পাকা হয়ে যাওয়ার ফলে জল নিকাশির কোনও ব্যবস্থা নেই । যার ফলে টানা বৃষ্টিতে ভেঙে পড়েছে বাড়িটি । ওই পরিবারের একটি শিশু শেখ নইম এই দুর্ঘটনায় আহত হয় । বাড়ি ভাঙার 24 ঘণ্টা কেটে গেলেও প্রশাসনের তরফ থেকে কোনও সাহায্য পাননি বলেই দাবি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের । এদিন পোল 1 গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিডিওকে জানিয়ে 5টি ত্রিপল ও 2টি কিটের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন । শিশুদের নিয়ে রাস্তায় দিন কাটাচ্ছে ওই পরিবার ।
গোঘাটের কামারপুকুর থেকে বদনগঞ্জ রাস্তার সাতবেড়িয়া এলাকায় রাস্তার উপর দিয়ে বইছে জল । তার জেরে বৃহস্পতিবার রাত থেকে ওই রাস্তায় বন্ধ যান চলাচল । এর ফলে বিচ্ছিন্ন হয়েছে কামারপুকুর, বদনগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থা । মূলত, দামোদর খালের জল বাড়তে থাকার কারণেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে । রাস্তার দু'ধারেই ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রেখেছে প্রশাসন ৷ ঘটনাস্থলে রয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা । বৃহস্পতিবার রাত থেকেই চলছে নজরদারি । সেদিন রাত থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যান চলাচল ।
এদিকে, জলের চাপে ভেঙে যাচ্ছে একের পর এক বাঁশের সেতু । খেয়ার মাধ্যমে চলছে ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত । হুগলি ও মেদিনীপুর জেলার সংযোগকারী দুটি বাঁশের সেতুই ভেঙে গিয়েছে । শনিবার পানশিউলি ও কৈঝুড়ির মধ্যস্থিত বাঁশের সেতুটি এবং শুক্রবার গড়েরঘাট ও যতকানুরামগড় সেতুটি ভেঙে যায় । দুটিই ছিল হুগলি ও মেদিনীপুর জেলার সংযোগকারী সেতু । এর ফলে দুই জেলার যোগাযোগ অনেকাংশেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে । সঠিক মেরামতির অভাবেই বারংবার সেতুগুলি ভেঙে যাচ্ছে বলে দাবি স্থানীয়দের । বারবার কংক্রিটের সেতু বানানোর আবেদন জানালেও শোনা হচ্ছে না তাঁদের কথা । এর জেরে বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ সকলকেই ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার করতে হচ্ছে ।
অন্যদিকে, দফায় দফায় বিভিন্ন ব্যারেজ থেকে ছাড়া হয়েছে জল । তার ফলে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে আরামবাগের সমস্ত নদীর জল । পরিদর্শনের পর বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় খানাকুলের ঘোষপুর পঞ্চায়েতের ময়াল এলাকায় প্রশাসনিক বৈঠক করেন রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না-সহ প্রশাসনিক আধিকারিকরা । এই বৈঠক থেকেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে কেন্দ্রকে নিশানা করেন রাজ্যের তিনি । পাশাপাশি কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগ তোলেন । তাঁর অভিযোগ, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে বারবার কেন্দ্রকে জানানো হলেও কেন্দ্র কোনও উদ্যোগ নেয়নি । তার জেরে এই সমস্যা । তবে রাজ্য নিজে থেকে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে উদ্যোগী হয়েছে, তার ফলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে জানান মন্ত্রী । এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না-সহ জেলাশাসক মুক্তা আর্য, হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি, সহ-সভাধিপতি, সাংসদ মিতালী বাগ, বিধায়ক রামেন্দু সিংহ রায় থেকে শুরু করে মহকুমা শাসক ও একাধিক প্রশাসনিক আধিকারিকরা ।