মালদা, 26 নভেম্বর: ফুল দিয়ে সাজানো অ্যাম্বুল্যান্স ৷ বাজছে ডিজে ৷ শোভাযাত্রা করে সদ্যোজাত কন্যাকে ঘরে নিয়ে গেলেন শেখ নুর হোসেন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ৷ কোনও চকচকে শহর নয়, এই ছবি মালদার এক প্রত্যন্ত গ্রামের ৷ রাত দখলের লড়াইয়ে এ এক অন্য ছবি ৷ ঘর আলো করে এসেছে মেয়ে ৷ তাকে পরিবারে স্বাগত জানাতে রীতিমতো এলাহি আয়োজন ৷ এক গ্রামীণ পরিবারের এই মানসিকতাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে গোটা জেলা ৷
হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লক একেবারে মালদা জেলার সীমানায় এই ঘটনা ঘটেছে ৷ এই ব্লকের সীমান্তে সুলতাননগর ৷ পাশের গ্রামটিই বিহারে ৷ এমন একটি জায়গার সামাজিক ব্যবস্থায় এখনও মেয়েদের জায়গাটা টলমল ৷ কিন্তু সেই গ্রামেই উন্নত মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন শেখ নুর হোসেন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ৷
বছর দেড়েক আগে সুলতাননগর গ্রামের ইয়াসমিন খাতুনের বিয়ে হয়েছিল ওই গ্রামেরই ইলিয়াস শেখের সঙ্গে ৷ ইলিয়াস পেশায় রংমিস্ত্রি ৷ মূলত ভিনরাজ্যে কাজ করেন ৷ বর্তমানে দিল্লিতে রয়েছেন ৷ গর্ভবতী স্ত্রীকে বাড়িতে রেখে কাজে গিয়েছিলেন তিনি ৷ তীব্র প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে বৃহস্পতিবার ইয়াসমিনকে হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৷ সেখানে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি ৷
শনিবার সন্ধের মুখে হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় ৷ তখনই নবজাত কন্যাকে অভ্যর্থনা জানানোর এলাহি আয়োজন দেখতে পান এলাকার মানুষজন ৷ অ্যাম্বুল্যান্স সাজিয়ে, ডিজে বাজিয়ে রীতিমতো শোভাযাত্রা করে নাতনিকে বরণ করে ঘরে নিয়ে যান দাদু নুর ৷
শেখ নুর হোসেনের বক্তব্য, "আমার বাড়িতে মেয়ে এসেছে ৷ আমি গর্বিত ৷ খুব খুশি ৷ নাতনিকে ঘরে নিয়ে যেতে আমি অ্যাম্বুল্যান্স সাজিয়ে নিয়ে এসেছি ৷ ডিজে বাজিয়ে ওকে ঘরে নিয়ে যাব ৷ আমার সঙ্গে গ্রামের আরও অনেকে এসেছেন ৷ সবাই মিলে শোভাযাত্রা করেই নাতনিকে ঘরে বরণ করব ৷ আজকের দিনে মেয়ের জন্ম হলে অনেকেরই মন খারাপ হয়ে যায় ৷ অনেকে সদ্যোজাত কন্যাকে বাইরে ফেলে দিয়ে যায় ৷ কেউ তো আবার পেটেই কন্যাভ্রূণ মেরে ফেলে ৷ এসব একদম ঠিক নয় ৷ ছেলেই হোক কিংবা মেয়ে, পরিবারে নতুন সদস্যের আগমনে সবারই খুশি হওয়া উচিত ৷ নাতনির জন্ম হওয়ায় আমরা খুব খুশি ৷"
বেজায় খুশি সদ্যোজাতের দিদা আসমানি বিবিও ৷ তিনি বলেন, "নাতনিকে নিয়ে আমাদের বাড়ির প্রত্যেকেই খুব আনন্দে রয়েছে ৷ খুশিতে ওর দাদু সবকিছু সাজিয়ে ওকে ঘরে নিয়ে যাচ্ছে ৷ ঢাকঢোল বাজিয়ে ওকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে ৷ বর্তমান সময়ে মেয়েদের সবাই অবহেলা করে ৷ আমরা সেই মানসিকতায় বিশ্বাস করি না ৷"
ক'দিন আগেই আরজি করের নৃশংসতা দেখেছে দেশ ৷ তার আগে-পরেও তেমন অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে ৷ ঘটছেও ৷ কোনও কোনও ঘটনা সংবাদমাধ্যমে উঠে এলেও নারী নিগ্রহের কত উদাহরণ যে আড়ালে থেকে যাচ্ছে তার কোনও ইয়ত্তা নেই ৷ সেই আবহে প্রত্যন্ত একটি গ্রামের এক পরিবারের এমন মানসিকতাকে স্যালুট জানাচ্ছে প্রত্যেকেই ৷