ETV Bharat / state

'সুপ্রিম' নির্দেশে মিলেছে মুক্তি, রসিক মণ্ডলের 104 বছরের জন্মদিন সেলিব্রেশনের অপেক্ষায় পরিবার - RASIK CHANDRA MONDAL

1920 সালে মানিকচক ব্লকের দক্ষিণ চণ্ডীপুর পঞ্চায়েতের পশ্চিম নারায়ণপুর কলোনিতে রসিক মণ্ডলের জন্ম ৷ তবে ঠিক কবে জন্মেছিলেন তিনি, সেকথা কেউ জানে না ৷

RASIK CHANDRA MONDAL
রসিকচন্দ্র মণ্ডল (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 5, 2024, 4:04 PM IST

মালদা, 5 ডিসেম্বর: এখন শুধু দুই ছেলের ফেরার অপেক্ষা ৷ তাঁরা দিল্লি থেকে ফিরলেই জন্মদিনের আয়োজনে মেতে উঠবে 104 বছর বয়সি বৃদ্ধ রসিকচন্দ্র মণ্ডলের পরিবার ৷ কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে সেই আয়োজন করা যাবে কি না, তা নিয়ে ধন্ধে পরিবারের সকলে ৷ কারণ, যে দুই ছেলে দিল্লিতে শ্রমিকের কাজে রয়েছেন, তাঁরা 26 ডিসেম্বরের আগে বাড়ি ফিরতে পারবেন কি না, এখনও নিশ্চিত নয় ৷

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মঙ্গলবার মালদা জেলা সংশোধনাগার থেকে অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছেন খুনের আসামি রসিকচন্দ্র মণ্ডল ৷ জমি বিবাদের জেরে গুলি করে ছোট ভাই সুরেশকে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে ৷ 1988 সালের সেই ঘটনায় জেলে যান তিনি ৷ 1994 সালে বিচারক তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেন ৷ সেই সময় তাঁর বয়স ছিল 68 বছর ৷ পরবর্তীতে বয়সজনিত কারণ এবং অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে একাধিকবার তিনি জামিনের আবেদন জানান ৷ মধ্যে কয়েক বছরের জন্য প্যারোলে মুক্তিও পান ৷

কিন্তু প্যারোলের মেয়াদ শেষ হতেই পুলিশ তাঁকে ফের সংশোধনাগারে পাঠায় ৷ 2018 সালে নিম্ন আদালত তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করে দিলে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ৷ কিন্তু সেখানেও তাঁর আবেদন খারিজ হয়ে যায় ৷ শেষ পর্যন্ত 2020 সালে 99 বছর বয়সি রসিক মণ্ডল শীর্ষ আদালতে মুক্তির আবেদন জানান ৷ সেই আবেদনের ভিত্তিতে 2021 সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার স্ট্যাটাস রিপোর্ট চেয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে একটি নোটিশ পাঠায় ৷ গত শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ 104 বছর বয়সি রসিকবাবুকে অন্তবর্তী জামিন/প্যারোলে মুক্তির নির্দেশ দেয় ৷

RASIK CHANDRA MONDAL
মালদা জেলা সংশোধনাগার থেকে বের হচ্ছেন রসিকচন্দ্র মণ্ডল (ইটিভি ভারত)

কাগজপত্রের কাজ শেষ করে সোমবারই রসিকবাবুকে সংশোধনাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল মালদা জেলা সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের ৷ কিন্তু সেই কাজ মেটাতে মঙ্গলবার বিকেল হয়ে যায় ৷ অবশেষে মঙ্গলবার সন্ধের মুখে রসিক মণ্ডল সংশোধনাগার থেকে ছাড়া হয় ৷ তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে উপস্থিত ছিলেন ছোট ছেলে উত্তম মণ্ডল, দুই নাতি অপূর্ব ও প্রবীর ৷

1920 সালে মানিকচক ব্লকের দক্ষিণ চণ্ডীপুর পঞ্চায়েতের পশ্চিম নারায়ণপুর কলোনিতে রসিক মণ্ডলের জন্ম ৷ তবে ঠিক কবে জন্মেছিলেন তিনি, সেকথা কেউ জানে না ৷ এমনকি রসিক মণ্ডলের নিজেরও তা মনে নেই ৷ পরিবারের লোকজনকে তিনি জানিয়েছেন, বড়দিনের আগে বা পরের দিন তাঁর জন্ম হয়েছিল ৷ তাঁর কথা শুনে বাড়ির লোকজন 26 ডিসেম্বর জন্ম তারিখ ধরে নিয়েছে ৷

তবে 36 বছর সংশোধনাগারে কাটানোর পর বৃদ্ধ রসিক মণ্ডল এখন তেমন কিছু খেতে পারেন না ৷ মঙ্গলবার বাড়ি ফেরার পরও সেটা দেখা গিয়েছে ৷ তাঁকে দেওয়া হয়েছিল সাদা ভাত, গঙ্গার মাছ আর জমিতে ফলানো সবজির তরকারি ৷ কিন্তু খেতে পারেননি কিছুই ৷ সন্ধের মুখে সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ছেলে-নাতিরা ঠান্ডা সেভাবে পড়ার আগেই বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁকে ৷ রাতে একটা রুটি আর এক কাপ চা খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েন তিনি ৷

এদিন রসিক মণ্ডলের ছোট ছেলে উত্তম মণ্ডল জানান, “বয়সের ভারে বাবা এখন বেশ কাবু ৷ বেশি খাবারও খেতে পারেন না ৷ বেশি খেলেই পেট খারাপ হয়ে যায় ৷ যেদিন জেল থেকে বাড়ি নিয়ে এলাম, সেদিন মাছ-ভাত দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু সেসব কিছুই খাননি ৷ একটা রুটি আর এক কাপ চা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন ৷ আসলে সেদিন রাস্তার ধকলে খানিকটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন ৷ বাবা অনেকদিন ধরেই মাংস খেতে পারেন না ৷ তবে মাছ খেতে ভালোবাসেন ৷"

কিন্তু বৃদ্ধ রসিকের 104তম জন্মদিনের কী হবে ? উত্তমবাবু জানালেন, “বড়দা মারা গিয়েছে ৷ মধ্যের দুই দাদা পরিযায়ী শ্রমিক ৷ দু’জনেই দিল্লিতে আছে ৷ ওদের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে ৷ আমরা 26 ডিসেম্বর বাবার জন্মদিন ধরে নিলেও সেদিন হয়তো কিছু করা যাবে না ৷ দাদারা বাড়ি ফিরে আসলে একটা ভালো দিন দেখে বাবার জন্মদিন উদযাপন করব ৷ অবশ্যই বড়সড় আয়োজন করা হবে ৷ এখন আমরা তাঁকে আরও সুস্থ করে তোলার চেষ্টায় আছি ৷ আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যেই তিনি সুস্থ হয়ে নিজেই গ্রামে ঘুরে বেড়াতে পারবেন ৷”

মালদা, 5 ডিসেম্বর: এখন শুধু দুই ছেলের ফেরার অপেক্ষা ৷ তাঁরা দিল্লি থেকে ফিরলেই জন্মদিনের আয়োজনে মেতে উঠবে 104 বছর বয়সি বৃদ্ধ রসিকচন্দ্র মণ্ডলের পরিবার ৷ কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে সেই আয়োজন করা যাবে কি না, তা নিয়ে ধন্ধে পরিবারের সকলে ৷ কারণ, যে দুই ছেলে দিল্লিতে শ্রমিকের কাজে রয়েছেন, তাঁরা 26 ডিসেম্বরের আগে বাড়ি ফিরতে পারবেন কি না, এখনও নিশ্চিত নয় ৷

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মঙ্গলবার মালদা জেলা সংশোধনাগার থেকে অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছেন খুনের আসামি রসিকচন্দ্র মণ্ডল ৷ জমি বিবাদের জেরে গুলি করে ছোট ভাই সুরেশকে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে ৷ 1988 সালের সেই ঘটনায় জেলে যান তিনি ৷ 1994 সালে বিচারক তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেন ৷ সেই সময় তাঁর বয়স ছিল 68 বছর ৷ পরবর্তীতে বয়সজনিত কারণ এবং অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে একাধিকবার তিনি জামিনের আবেদন জানান ৷ মধ্যে কয়েক বছরের জন্য প্যারোলে মুক্তিও পান ৷

কিন্তু প্যারোলের মেয়াদ শেষ হতেই পুলিশ তাঁকে ফের সংশোধনাগারে পাঠায় ৷ 2018 সালে নিম্ন আদালত তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করে দিলে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ৷ কিন্তু সেখানেও তাঁর আবেদন খারিজ হয়ে যায় ৷ শেষ পর্যন্ত 2020 সালে 99 বছর বয়সি রসিক মণ্ডল শীর্ষ আদালতে মুক্তির আবেদন জানান ৷ সেই আবেদনের ভিত্তিতে 2021 সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার স্ট্যাটাস রিপোর্ট চেয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে একটি নোটিশ পাঠায় ৷ গত শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ 104 বছর বয়সি রসিকবাবুকে অন্তবর্তী জামিন/প্যারোলে মুক্তির নির্দেশ দেয় ৷

RASIK CHANDRA MONDAL
মালদা জেলা সংশোধনাগার থেকে বের হচ্ছেন রসিকচন্দ্র মণ্ডল (ইটিভি ভারত)

কাগজপত্রের কাজ শেষ করে সোমবারই রসিকবাবুকে সংশোধনাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল মালদা জেলা সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের ৷ কিন্তু সেই কাজ মেটাতে মঙ্গলবার বিকেল হয়ে যায় ৷ অবশেষে মঙ্গলবার সন্ধের মুখে রসিক মণ্ডল সংশোধনাগার থেকে ছাড়া হয় ৷ তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে উপস্থিত ছিলেন ছোট ছেলে উত্তম মণ্ডল, দুই নাতি অপূর্ব ও প্রবীর ৷

1920 সালে মানিকচক ব্লকের দক্ষিণ চণ্ডীপুর পঞ্চায়েতের পশ্চিম নারায়ণপুর কলোনিতে রসিক মণ্ডলের জন্ম ৷ তবে ঠিক কবে জন্মেছিলেন তিনি, সেকথা কেউ জানে না ৷ এমনকি রসিক মণ্ডলের নিজেরও তা মনে নেই ৷ পরিবারের লোকজনকে তিনি জানিয়েছেন, বড়দিনের আগে বা পরের দিন তাঁর জন্ম হয়েছিল ৷ তাঁর কথা শুনে বাড়ির লোকজন 26 ডিসেম্বর জন্ম তারিখ ধরে নিয়েছে ৷

তবে 36 বছর সংশোধনাগারে কাটানোর পর বৃদ্ধ রসিক মণ্ডল এখন তেমন কিছু খেতে পারেন না ৷ মঙ্গলবার বাড়ি ফেরার পরও সেটা দেখা গিয়েছে ৷ তাঁকে দেওয়া হয়েছিল সাদা ভাত, গঙ্গার মাছ আর জমিতে ফলানো সবজির তরকারি ৷ কিন্তু খেতে পারেননি কিছুই ৷ সন্ধের মুখে সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ছেলে-নাতিরা ঠান্ডা সেভাবে পড়ার আগেই বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁকে ৷ রাতে একটা রুটি আর এক কাপ চা খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েন তিনি ৷

এদিন রসিক মণ্ডলের ছোট ছেলে উত্তম মণ্ডল জানান, “বয়সের ভারে বাবা এখন বেশ কাবু ৷ বেশি খাবারও খেতে পারেন না ৷ বেশি খেলেই পেট খারাপ হয়ে যায় ৷ যেদিন জেল থেকে বাড়ি নিয়ে এলাম, সেদিন মাছ-ভাত দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু সেসব কিছুই খাননি ৷ একটা রুটি আর এক কাপ চা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন ৷ আসলে সেদিন রাস্তার ধকলে খানিকটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন ৷ বাবা অনেকদিন ধরেই মাংস খেতে পারেন না ৷ তবে মাছ খেতে ভালোবাসেন ৷"

কিন্তু বৃদ্ধ রসিকের 104তম জন্মদিনের কী হবে ? উত্তমবাবু জানালেন, “বড়দা মারা গিয়েছে ৷ মধ্যের দুই দাদা পরিযায়ী শ্রমিক ৷ দু’জনেই দিল্লিতে আছে ৷ ওদের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে ৷ আমরা 26 ডিসেম্বর বাবার জন্মদিন ধরে নিলেও সেদিন হয়তো কিছু করা যাবে না ৷ দাদারা বাড়ি ফিরে আসলে একটা ভালো দিন দেখে বাবার জন্মদিন উদযাপন করব ৷ অবশ্যই বড়সড় আয়োজন করা হবে ৷ এখন আমরা তাঁকে আরও সুস্থ করে তোলার চেষ্টায় আছি ৷ আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যেই তিনি সুস্থ হয়ে নিজেই গ্রামে ঘুরে বেড়াতে পারবেন ৷”

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.