মালদা, 29 ফেব্রুয়ারি: বাঁধনা পরবে হাড়িয়ার বিরুদ্ধে অভিযানে বাড়িতে ঢুকে মহিলাদের মারধর, শ্লীলতহানি এবং গরিব গ্রামবাসীদের কাছে টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে আবগারি দফতরের আধিকারিক ও কর্মীদের বিরুদ্ধে ৷ বৃহস্পতিবারের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায় পুরাতন মালদা ব্লকের যাত্রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের রাইলাপাড়া গ্রামে ৷ ক্ষিপ্ত আদিবাসীরা আবগারি কর্মীদের আটক করে প্রবল বিক্ষোভ দেখান ৷ আটকে দেওয়া হয় সাতটি সরকারি গাড়ি ৷ শেষ পর্যন্ত মালদা থানার পুলিশের হস্তক্ষেপে দুপুর নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে ৷ গ্রাম থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন আবগারি দফতরের কর্মীরা ৷
তাঁদের দাবি, দোষী সরকারি কর্মীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে ৷ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আগামিকাল মালদা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে চলেছেন আদিবাসীরা ৷ ফলে শুক্রবারও তপ্ত হতে পারে মালদা থানা চত্বর ৷
এই সময় আদিবাসী সমাজের সবচেয়ে বড় উৎসব বাঁধনা পরব চলছে ৷ সাতদিনের এই উৎসবে মজে রয়েছেন আদিবাসীরা ৷ বাঁধনা উৎসবে প্রতিটি বাড়িতেই আত্মীয় স্বজনদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় ৷ একই ছবি রাইলাপাড়া গ্রামেও ৷ দিনভর খাওয়া আর ঘরে তৈরি হাড়িয়া পান এই উৎসবের বৈশিষ্ট্য ৷ পরব উপলক্ষে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে এখন হাড়িয়া তৈরি হচ্ছে ৷ এ দিন সেই গ্রামেই সাতটি গাড়ি নিয়ে হানা দেন আবগারি কর্মীরা ৷
অভিযোগ, গ্রামে ঢুকেই তাঁরা একের পর এক বাড়িতে চড়াও হন ৷ বাড়িতে থাকা হাড়িয়া নষ্ট করার পাশাপাশি জিনিসপত্রও ভাঙচুর করেন ৷ তাঁরা নাকি জানান, টাকা দিলে তাঁরা হাড়িয়া নষ্ট করবেন না ৷ হাড়িয়ার হাঁড়ি ভাঙতে বাধা দেওয়ায় তাঁরা গ্রামবাসীদের বেধড়ক মারধরও করেন বলে অভিযোগ ৷ ছাড় পাননি মহিলারাও ৷ সরকারি কর্মীদের মারে এক মহিলার মাথাও ফেটে যায় বলে অভিযোগ ৷ মহিলাদের শ্লীলতাহানিরও অভিযোগ উঠেছে ৷
মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে নির্যাতিতা মহিলা বলেন, "হঠাৎ আমার বাড়িতে পাঁচজন পুলিশ (খাকি উর্দিধারী আবগারি কর্মী) ঢুকে পড়েন ৷ তখন ওঁদের সঙ্গে একজনও মহিলা পুলিশ ছিল না ৷ সেই সময় বাড়িতে আমার ছেলের বউ আর ছোট ছেলে ছিল ৷ ওঁরা বাড়িতে ঢুকেই হাড়িয়ার হাঁড়ি ভাঙতে চায় ৷ আমি জানাই, আমাদের পরব চলছে ৷ ঘরে আত্মীয় স্বজন এসেছেন ৷ এই পরবে আমরা সবাই বাড়িতে হাড়িয়া বানাই ৷ আমি ওঁদের হাড়িয়ার হাঁড়ি ভাঙতে বাধা দিতেই ওঁরা আমাকে মারতে শুরু করে ৷ আমার ছেলে এ নিয়ে প্রশ্ন করলে ওঁকেও মারধর করে ৷ তখনই মেয়ে পুলিশ বাড়িতে ঢুকে আমাকে ফের মারতে শুরু করে ৷ আমার মাথা ফাটিয়ে দেয় ৷ ওঁরা আমার ছেলের কাছে টাকা চাইছিল ৷ বলে, টাকা দিলে ওরা হাড়িয়ার হাঁড়ি ভাঙবে না ৷ আমাদের মারধরও করবে না ৷ তবে আমরা ওঁদের টাকা দিইনি ৷"
এই ঘটনার কথা চাউর হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা ৷ সরকারি কর্মীদের আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা ৷ গ্রামবাসী ফুলেন সোরেনের বক্তব্য, "বাঁধনা আমাদের সবচেয়ে বড় পরব ৷ আবগারি কর্মীরা এখন কেন গ্রামে ঢুকে মারধর করবে ? ওঁরা বাড়ি বাড়ি ঢুকে হাড়িয়ার পাত্র ভেঙে দিচ্ছে ৷ গোটা বাড়ি লণ্ডভণ্ড করছে ৷ কেন করবে এসব ? বাঁধনাতে আমরা বাড়িতে হাড়িয়া রাখবই ৷ ওঁরা বলছে, পয়সা দিলে ওঁরা কোনও বাড়িতে ঢুকবে না ৷ হাড়িয়া নষ্ট করবে না, মারধরও করবে না ৷ ওঁদের এই সাহস কে দিয়েছে ? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না ডিএম ? আমরা জবাব চাই ৷"
গ্রামের বাসিন্দা রবীন টুডু জানান, এক সপ্তাহের বাঁধনা পরবে আজ সাকরাত ৷ আজ সারাদিন ধরে খাওয়া দাওয়া, হাড়িয়া পান আর নাচ-গান চলবে ৷ এই পরবে চিরদিনই হাড়িয়া পান করা হয় ৷ বিশেষ করে আজ হাড়িয়া লাগবেই ৷ প্রতিটি বাড়িতে হাড়িয়া তৈরিও হয় ৷ সে কথা প্রশাসনের সবাই জানে ৷ তবু আজ সাতটি গাড়িতে আবগারী কর্মীরা গ্রামে ঢোকেন ৷ ওঁরা একটা বাড়িতে ঢুকেই মেয়েদের উপর হামলা চালান ৷ একজন বয়স্ক মহিলার মাথা ফাটিয়ে দেন ৷ ওঁর শাড়ি-ব্লাউজ পর্যন্ত কেড়ে নেন ৷
তিনি বলেন, "এঁরা চোর না আবগারি দফতরের কর্মী জানি না ৷ এঁরা সবার কাছে টাকা চাইছে ৷ টাকা না দিলে ভাঙচুরের হুমকি দেয় ৷ আমরা অনেকদিন ধরে এসব দেখে আসছি ৷ কিন্তু আর সহ্য করব না ৷ আমরা এঁদের বিরুদ্ধে পুলিশে যাব ৷ আমরা এদের ছাড়ব না ৷" যদিও এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথা বলতে রাজি হননি অভিযুক্ত আবগারি দফতরের কর্মীরা ৷ মন্তব্য করতে চায়নি মালদা থানার পুলিশও ৷
আরও পড়ুন: