কলকাতা, 9 সেপ্টেম্বর: ধর্ষণে অভিযুক্তকে মৃত্যুদণ্ডের জন্য আইন তৈরিতে বিধানসভায় বিল পাস করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ইতিমধ্যে তা রাজভবন ঘুরে রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছেছে । কিন্তু, সেই 'অপরাজিতা বিল' সর্বৈবভাবে অবৈধ বলে দাবি করলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় ।
সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি বলেন, "ওই বিলের সবটা আমি দেখিনি । তবে, এই বিলে ধর্ষণ ও খুনের জন্য একমাত্র সাজা মৃত্যুদণ্ডর কথা বলা হয়েছে । সাংবাবিধানিক ভাবে যা অসিদ্ধ । 41 বছর আগের একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের 5 জন বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছিল, যে ঘটনায় একমাত্র সাজা মৃত্যদণ্ড, তা সাংবিধানিক ভাবে অবৈধ । তাহলে কেন এতদিন পর তৈরি হওয়া বিলে একমাত্র সাজা মৃত্যুদণ্ড রাখা হয়েছে ? এখানে কোনও অপশন রাখা হয়নি ।" আরজি করের মূল ঘটনা থেকে মানুষের নজর ঘোরাতে এই বিল আনা হয়েছে দাবি করেন প্রাক্তন এই বিচারপতি ৷
'অপরাজিতা বিল'-এর সাংবিধানিক অবৈধতার ব্যাখ্যাও দেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি । তিনি বলেন, "পুরোনো দণ্ডবিধির 303 ধারায় মৃত্যুদণ্ডের আইনটি ছিল । কিন্তু, সুপ্রিম কোর্টের বতর্মান প্রধান বিচারপতির বাবা, বিচারপতি থাকাকালীন একটি মামলায় সেই আইনটিকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছিলেন । তার রেকর্ড রয়েছে । তিনি বলেছিলেন, বিচারপতিদের কাছে যখন কোনও ডিস্ক্রিসন নেই অর্থাৎ সে মৃত্যুদণ্ড দেবে না যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেবে, তখন সেই সাজার নির্দেশ সংবিধানের 14 ধারা ও 21 ধারাকে লঙ্ঘন করে ।"
ভারতীয় 'ন্যায় সংহিতার' প্রসঙ্গ তুলে অশোক গঙ্গোপাধ্যায় আরও বলেন, "ন্যায় সংহিতা আইনে মৃত্যুদণ্ড এবং যাবজ্জীবন করাদণ্ড বা জরিমানার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে । উনি (মুখ্যমন্ত্রী) সেই অপশন দুটো তুলে দিয়ে নিজেকে প্রগতিশীল দেখানোর চেষ্টা করছেন । আসলে, আরজি করের ঘটনায় সাধারণ মানুষের নজর রয়েছে। সেই দৃষ্টিকে ঘোরানোর চেষ্টা হচ্ছে ।" সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, "পৃথিবীর 135টি সভ্য দেশে এখন মৃত্যুদণ্ডের সাজা নেই । মৃত্যুদণ্ড একটি সামন্ততান্ত্রিক সাজা প্রথা । সেই প্রথা ফিরিয়ে এনে নিজেকে প্রগতিশীল দেখানোর চেষ্টা করছেন ।"
এরপর মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, "এসব না করে উনি কি একবার বলুন, কোন আইনে নির্যাতিতার পরিবারকে বিপথে চালিত করা হল ? কোন আইনের বলে দু'ঘণ্টা পরও এফআইআর করতে পারল না পুলিশ ? কোন আইনের বলে পুলিশ ভুল তথ্য পরিবেশন করল ? কোন আইনের বলে নির্যাতিতার দেহ তড়িঘড়ি দাহ করে দেওয়া হল ? কোন আইনের বলে তাঁর পুলিশ নির্যাতিতার পরিবারের হাতে টাকা গুঁজে দিতে চাইল ?" রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন কোনও আইন মানে না বলে অভিযোগ সুপ্রিম কোর্টের এই প্রাক্তন বিচারপতির ৷