মালদা, 14 নভেম্বর: শিশু দিবস কী তা ওরা জানে না ৷ ওরা জানে খিদে পেলে পেটের অবস্থা কী হয় ৷ রোজগার না করলে কেউ যে দুটো ভাত দেবে না এই বয়সে তা ওরা বুঝে গিয়েছে ৷ তাই পেটের তাগিদে কেউ ইট, কেউ বা ধূপকাঠি তৈরিতে হাত পাকিয়েছে ওরা ৷ কারও বয়স ছয় কিংবা সাত, কারও বা দশ কিংবা বারো, কাজে যখন হাত লাগায় তখন ওদের বয়সের ভেদাভেদ আর থাকে না ৷ তবে ওরা পড়াশোনাও করে ৷ স্কুলে যায় ৷ তবে বছরে কয়েকদিন ৷ এভাবেই বেড়ে উঠছে গরিব ঘরের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ৷
পুরাতন মালদায় বেশ কিছু ইটভাটা রয়েছে ৷ সেসব ভাটায় শুধু স্থানীয়রাই নয়, ভিনরাজ্যের বহু শ্রমিক কাজ করেন ৷ তাঁরা নিজেদের পরিবার নিয়ে কাজে আসেন ৷ বর্ষার মুখে ভাটা বন্ধ হলে ঘরে ফিরে যান ৷ তখনই দু'এক মাস স্কুলের মুখ দেখে ছেলেমেয়েরা ৷ মঙ্গলবাড়ি এলাকায় এমনই এক ইটভাটার শ্রমিক মনোজ দাস ৷ বাড়ি বিহারের ভাগলপুরে ৷ বর্ষা শেষ হতেই স্ত্রী আর ছেলেদের নিয়ে কর্মক্ষেত্রে চলে এসেছেন ৷ স্বামী-স্ত্রী তো বটেই, তাঁদের নাবালক ছেলেরাও ইট বানাতে শিখে ফেলেছে ৷ কাজও করছে ৷ শিশু দিবসের দিনও ওদের ছুটি নেই ৷ মনোজ বলছেন, "দেশে যখন থাকি, বাচ্চারা তখন পড়াশোনা করে ৷ স্কুলে যায় ৷ এখানে যখন আসি, ওরাও ইট বানায় ৷ গরিব মানুষ আমরা ৷ সবাই মিলে কাজ না করলে খাব কী ?"
পুরাতন মালদারই পাল পাড়া এলাকায় একাধিক বাড়িতে ধূপকাঠি তৈরি হয় ৷ মূলত বাড়ির মেয়েরা এই কাজ করেন ৷ তবে তাঁদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও এই কাজে হাত পাকিয়ে ফেলেছে ৷ তারা সপ্তাহে এক থেকে দু'দিন স্কুলে যায় ৷ বাকি দিনগুলিতে ধূপকাঠির মশলা হাতে তুলে নেয় ৷ স্থানীয় আদরি বিবির কথায়, "আমি অনেকদিন ধরেই এই কাজ করি ৷ আমার দুটো মেয়েও কাজ শিখে নিয়েছে ৷ এখন ওরাও কাজ করে ৷ ওদের একজন ক্লাস নাইন, আরেকজন ক্লাস ফাইভে পড়ে ৷ পড়াশোনা আর কাজ, দুটোই একসঙ্গে চালায় ৷ সবাই কাজ না করলে খাব কোথায় থেকে ? আজ ওরা স্কুল যায়নি ৷ স্কুল থেকে প্রোজেক্ট দিয়েছে ৷ বাড়িতে বসে করবে ৷ ওরা পড়ার সময় পড়ে, বাকি সময় কাজ করে৷ ওরা কাজ না করলে সংসারটা কীভাবে চলবে ? শিশু দিবস কী, আমরা জানি না ৷"
শিশু দিবসের মানে জানে না হাতে ধূপকাঠির মশলা মাখা ক্লাস ফোরের মৌসুমি, ক্লাস নাইনের নাসিরা, ক্লাস ফোরের শর্মিলারা ৷ স্কুল বাদ দিয়ে কেন কাজ ? প্রশ্ন করতেই দৌড়ে পালিয়ে যায় ওরা ৷ পিছনে পড়ে থাকে পেট ভরানোর রসদ ৷