কলকাতা, 22 এপ্রিল: স্কুল সার্ভিস কমিশনের 2016-র সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ সোমবার এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রায় দান করে হাইকোর্ট ৷ সেই রায়ে 25,753 জনের নিয়োগ বাতিল করেছে বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ৷ একই সঙ্গে, নয়া টেন্ডার ডেকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালুরও নির্দেশ দিল স্কুল সার্ভিস কমিশনকে ৷
পাশাপাশি বেআইনিভাবে যারা চাকরি করেছেন তাদের আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট ৷ সিবিআই'কে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত চালিয়ে যাওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ পাশাপাশি সমস্ত ওএমআর শিটের কপি এসএসসি সার্ভারে আপলোড করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ পরবর্তী তদন্ত চলাকালীন নিয়োগ দুর্নীতিতে যদি রাজ্যের আরও কোনও মন্ত্রীর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাঁকে গ্রেফতার করতে পারবে সিবিআই ৷
এদিন মামলার রায়ের পর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "যাঁরা ক্ষতিগ্রস্থ হলেন তাদের বোঝা উচিত দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় আনলে কী হতে পারে ৷ আগামীদিনে আরও বড় দুর্নীতি, কেলেঙ্কারির খোঁজ সামনে আসবে ৷" অন্যদিকে, আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, "2016 সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করেছে ৷ এই নিয়োগপ্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হয়েছে ৷ এসএসসি তাদের সার্ভারের ডাটা, ওএমআরশিট সব নষ্ট করা হয়েছে ৷ চার সপ্তাহের মধ্যে এই টাকা ফেরত দিতে হবে সুদ সমেত ৷ আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে জেলাশাসক সেটা আদালতকে জানাবে ৷" পাশাপাশি আইনজীবী বিক্রম ভট্টাচার্যের কথায়, "যত নিয়োগ হয়েছে সবটাই বাতিল ৷ ব়্যাঙ্ক জাম্প হয়েছে, এসএসসি'র আসনের থেকে অতিরিক্ত নিয়োগ করেছে ৷ প্রয়োজনের থেকে যা অনেকটাই বেশি ৷ এমনকী টেন্ডার প্রসেসেও দুর্নীতি হয়েছে ৷"
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক নির্দেশনামায় কী বলেছে হাইকোর্ট-
1. পুরো প্যানেল বাতিলের নির্দেশ।
2. 17 রকমভাবে বেআইনি কাজ হয়েছে। জাল ওএমআর, এজেন্সি নিয়োগে কোনও টেন্ডার হয়নি ৷ এসএসসি আসল ওএমআর শিট নষ্ট করেছে ৷ মিরর ইমেজ নামে যা করেছে সেটা বেআইনি ৷ আসল ওএমআর শিট এখনও পাওয়া যায়নি ৷ সুপার নিউমারারি পোস্ট বেআইনিভাবে গড়া হয়েছে।
3. মানবিক কারণে সোমা দাসের চাকরি বহাল রেখেছে হাইকোর্ট।
4. যারা বেআইনি চাকরি পেয়েছে তাদের বেতন ফেরত দিতে হবে।
5. বেআইনি চাকরি পাওয়াদের প্রয়োজনে হেফাজতে নিয়ে জেরা করবে ৷
6. বেআইনি ভাগে সুপার নিউমরারি পোস্ট করে চাকরি পাওয়াদের হেফাজতে নিতে পারবে সিবিআই।
7. চার সপ্তাহের মধ্যে জেলাশাসকরা বেআইনি নিয়োগ পাওয়াদের চিহ্নিত করে টাকা ফেরানোর ব্যাবস্থা করবে।
8. নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া করতে হবে সিবিআইকে।
9. সুপার নিউমারারি পদে নিয়োগ ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত নিয়ে সিবিআই তদন্ত। কার বা কাদের মদতে হয়েছে। প্রয়োজনে হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে পারবে সিবিআই।
10. এত পরিমাণ বেআইনি হয়েছে যেখানে কে আসল, আর কে বেআইনি নিয়োগ পেয়েছে, তার পৃথক করা দুঃসাধ্য। এমনকি রাজ্যকে তাগাদা দিলেও রাজ্য এই ব্যাপারে কোনও তথ্য দেয়নি।
11. যে কোম্পানিকে ওএমআর ও স্ক্যানিং দেওয়া হয়েছিল তাদের কোনো টেন্ডার হয়নি।
আরও পড়ুন: