জলপাইগুড়ি, 18 অক্টোবর: উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে থেকে আসা হাতিই এখন মাথাব্যথার কারণ পশ্চিমবঙ্গে বন দফতরের ৷ সন্ধে নামতেই ধান ক্ষেত-সহ শস্য ও বাগান তছনছ করে দিচ্ছে হাতির দল ৷ জানা গিয়েছে, অসম থেকে শতাধিক হাতি এই রাজ্যে ঢুকে পড়েছে বলে জানিয়েছে বন দফতর ৷
হাতি তাড়াতে দিশেহারা অবস্থা বক্সা টাইগার রিজার্ভের বনকর্মীদের ৷ বিশেষ করে আলিপুরদুয়ার জেলার বাংলা-অসম সীমানার কুমারগ্রাম এলাকা দিয়ে হাতির দল এ-রাজ্যে ঢুকেছে ৷ আলিপুরদুয়ার জেলার বক্সা টাইগার রিজার্ভের নর্থ রায়ডাক রেঞ্জে 80-100টি হাতি ঢুকেছে বলে জানা গিয়েছে বন দফতর সূত্রে ৷ সারাদিন লোকালয় সংলগ্ন জঙ্গলে থাকছে হাতির দল ৷ আর সন্ধে নামতেই জঙ্গল থেকে লোকালয়ে চলে আসছে ৷
সম্প্রতি কার্তিকার জঙ্গল থেকে তুরতুরী গ্রামপঞ্চায়েতের তুরতুরী ও ধওলাঝোরা গ্রামে ঢুকে পড়ে অসংখ্য হাতি ৷ অন্ধকারে বিঘার পর বিঘা ধানের জমি, সুপারি গাছ নষ্ট করছে হাতির দল ৷ আর কিছুদিন পরেই ধান কাটবেন কৃষকরা ৷ কিন্তু, তার আগেই জমিতে ধান নষ্ট করে দিচ্ছে হাতি ৷ পাশাপাশি, এলাকার কয়েকশো সুপারি গাছ উপড়ে দিয়েছে হাতির পাল ৷ বন দফতরের তরফে দাবি করা হয়েছে, হাতির হানায় বিগত কয়েক দশকের তুলনায় এ-বছর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ফসলের ৷
হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ, বারবার হাতির হানায় তাঁরা আতংকিত ৷ হাতি ঢুকলে বন দফতরকে বারবার ডাকলেও, সময় মতো তারা আসে না ৷ হাতির পাল ধান, সুপারি বা অন্যান্য ফসলের ক্ষতি করলেও, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের আবেদন করা হয়, তবে তা পাওয়া যায় না-বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা ৷ হাতির অত্যাচারে ধান ছাড়া অন্য কোনও ফসল ফলাতে পারেন না কৃষকরা ৷ ধানের উপরই নির্ভরশীল তাঁদের জীবন ৷ প্রতিদিন বিঘার পর বিঘা শস্য হাতি নষ্ট করায় সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন ধওলাঝোরার কৃষকরা ৷
এলাকার বৃদ্ধ কৃষক অমূল্য পাল হাতির অত্যাচারে দিশেহারা ৷ তিনি বলেন, "রাতে প্রায় একশো হাতি এসেছিল ৷ আমার কয়েক বিঘা জমির ধানের ফসল খেয়েছে ও নষ্ট করেছে ৷ বড় বড় সুপারি গাছ উপড়ে ফেলে দিয়েছে ৷ এমন অবস্থায় আমি দিশেহারা ৷ বিগত ছয় বছর ধরে সুপারি গাছ বড় করলাম ৷ এখন সব উপড়ে দিল ৷ সময় মতো ক্ষতিপূরণও পাই না ৷ হাতি এলে বন দফতরকে বারবার ডাকা হলেও, তারা সময় মতো আসে না ৷ যখন আসে তখন সব শেষ হয়ে যায় ৷ আমরা ক্ষতিপূরণ চাই ৷ এইভাবে ফসলের ক্ষতি হলে, আমরা কীভাবে সংসার চালাব ? কীভাবে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করাব ?"
ধওলাঝোড়ার কৃষক সুমঙ্গল মজুমদার জানান, "বিঘার পর বিঘা আমার ধানের জমি সব নষ্ট করে দিয়েছে হাতি ৷ বন দফতরের কাছে সার্চ লাইট চাওয়া হলেও, তা পাওয়া যায় না ৷ ক্ষতিপূরণের আবেদন করলেও, তা পাওয়া যায় না ৷"
বক্সা টাইগার রিজার্ভের নর্থ রায়ডাক রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার শ্যামল মণ্ডল বলেন, "হাতির সমস্যা এবার অনেক ৷ সবচেয়ে বেশি ক্ষতি এবার হয়েছে ৷ সন্ধে থেকে সকাল পর্যন্ত হাতি তাড়াতে হচ্ছে ৷ আমাদের গাড়ির সংখ্যা কম ৷ কর্মীর সংখ্যা কম ৷ হাতি গ্রামে ঢুকে যাচ্ছে, ক্ষতি করছে ৷ আমরা যতটা সম্ভব ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করছি ৷ কিছু এখানকার হাতি আছে ৷ পাশাপাশি, উত্তর-পূর্ব ভারতের অসম থেকে কুমারগ্রাম, কুমারগ্রাম থেকে রায়ডাক হয়ে চুনিয়ায় যায় ৷ এই পথেই হাতি আসে আবার চলেও যায় ৷ উত্তর-পূর্ব ভারতের হাতি এখন আমাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷"