কলকাতা, 5 অগস্ট: রেশন দুর্নীতি থেকে পাচার কাণ্ড, সবকিছুতেই নাম রয়েছে বারিক বিশ্বাসের । একদা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ট্রাকের চালক বারিক বিশ্বাস কীভাবে এত জমি, বাড়ি, গাড়ি-সহ বিপুল সম্পত্তির মালিক হলেন ?
তা জানার জন্য গত শুক্রবার বারিককে সল্টলেক সিজিও কমপ্লেেক্সে ইডি দফতরে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিলেও তিনি হাজিরা দেননি । হাজিরা দেওয়ার জন্য তিনি কিছুটা সময় চেয়েছেন । তবে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটর তরফ থেকে সাফ জানানো হয়েছে, তাঁকে সময় দেওয়া হবে না । ফলে আজ-কালের মধ্যেই বারিক বিশ্বাসকে ফের ইডির তরফ থেকে নোটিশ পাঠিয়ে সল্টলেক সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি দফতরে ডেকে পাঠানো হবে বলে জানা গিয়েছে ।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দাদের দাবি, বারিক বিশ্বাস গরু পাচার কাণ্ডের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন । ফলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । বেশ কয়েকবার তাঁকে নোটিশ দেওয়ার পরও তিনি না আসায়, তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা।
বারিক বিশ্বাসের নামে ভুয়ো সংস্থার হদিশ পেয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা । মূলত গরু পাচার এবং রেশন দুর্নীতির কোটি কোটি টাকার লভ্যাংশ বারিক এই সব ভুয়ো সংস্থায় খাটাতেন বলে দাবি ইডির ।
এর আগে বারিক বিশ্বাসের বাড়ি এবং ফ্ল্যাটে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে একাধিক নথিপত্র উদ্ধার করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা । জানা গিয়েছে, 2011 থেকে 2014 সালের মধ্যে বারিক বিশ্বাসের জীবনে আমূল পরিবর্তন আসে । এই বারিক বিশ্বাস উত্তর 24 পরগনার ব্যবসায়ী বলে পরিচিত, তিনি বর্তমানে সংশোধনাগরে থাকা বাকিবুর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ।
এছাড়াও বারিকের সঙ্গে ধীরে ধীরেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে রাজ্যের তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের । আর তারপরেই একজন ছাপোসা ট্রাকচালক থেকে তিনি হয়ে ওঠেন কোটি কোটি টাকার মালিক । বর্তমানে বারিক বিশ্বাসের একাধিক জেলায় অফিস এবং বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে । তার মধ্যে রাজারহাট ও নিউটাউনেই বিভিন্ন ফ্ল্যাট রয়েছে তাঁর ।
বারিক বিশ্বাসের ব্যবসা মূলত হোটেল, পরিবহণ, রিয়েল এস্টেট বলে জানতে পারেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা । ফলে এমন একটি চরিত্রকে এই দুর্নীতির ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা ।
গত সপ্তাহে বারিক বিশ্বাসের অফিস এবং ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কয়েকটি অভিজাত গাড়ির সন্ধান পেয়েছেন তদন্তকারীরা । আর এখানেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দাদের প্রশ্ন, এককালে যিনি বাংলাদেশ সীমান্তে ট্রাক চালিয়ে রুটি রুজি উপার্জন করতেন, কীভাবে তিনি কোটি কোটি টাকার উপর বসে রয়েছেন ?
বারিক বিশ্বাসকে যে সব প্রশ্নগুলি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা করতে চান সেগুলি হল,
1. তাঁর সঙ্গে বাকিবুর রহমানের পরিচয় কে করিয়ে দিল ?
2. কীভাবে তাঁরা দুর্নীতির ব্লু প্রিন্ট বা নীল নকশা সাজালেন ?
3. জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে তাঁর আলাপ কীভাবে হয় ?
4. গরু পাচারের বিষয়ে তিনি কী জানেন ?
5. জীবনের প্রথম অংশে সীমান্তে তিনি কোন কোন গরু পাচারকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন ?
6. উত্তর 24 পরগনার বেতাজ বাদশা বলে পরিচিত শেখ শাহজাহানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কী ?
7. রেশন দুর্নীতির কীভাবে বিস্তার হয়েছিল ?
8. কোন কোন প্রভাবশালীরা এর সঙ্গে যুক্ত ?
খুঁজে না পাওয়া এমন একাধিক প্রশ্নের উত্তর এবার বারিক বিশ্বাসের মুখ থেকে শুনতে চান কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা । ফলে বারিক বিশ্বাসকে আর সময় না-দিয়ে ইডি দফতরে ডেকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা ।