আসানসোল, 26 ফেব্রুয়ারি: উৎপাদনের নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা সংস্থা ইসিএল । একদিকে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হওয়া, জমিজট ও অনান্য নানা কারণে উৎপাদনে ঘাটতি, অন্যদিকে ইসিএলের খনি থেকে অবাধে কয়লা চুরির কারণেও ক্ষতির মুখে পড়ে ইসিএল । এবার দেওয়ালে পিঠ ঠেকে কয়লা চুরিতে রাশ টানতে নিরাপত্তায় জোর দিল এই সংস্থা । কয়লা চুরি রুখতে এবার খোলামুখ খনি এলাকায় সিসি ক্যামেরা, ড্রোন-সহ ডিজিটাল ইনট্রিগ্রেটেড সিস্টেম ব্যবহার করা হবে । শুধু তাই নয় ত্রিপুরা রাইফেল বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে এসে প্রশিক্ষিত করা হবে ইসিএলের নিজস্ব রক্ষীদের ।
খনি এলাকায় মূলত তিনরকম পদ্ধতিতে কয়লা চুরি চলে । প্রথমত, অবৈধ খাদান তৈরি করে কয়লা উত্তোলন । দ্বিতীয়ত, ইসিএলের বন্ধ বা চালু খোলামুখ খনিতে গভীর সুড়ঙ্গ (র্যাট হোল) বানিয়ে কয়লা তোলা হয় । তৃতীয়ত, ইসিএলের কয়লা ডম্পার বা রেলের পরিবহণের সময়ে কয়লা নামিয়ে নেওয়া হয় ।
রাস্তায় কয়লা নামিয়ে নেওয়া রুখতে ইসিএল এর আগে কয়লাবোঝাই ডাম্পারগুলিতে জিপিআরএস ব্যবস্থা চালু করেছিল । সেই ব্যবস্থাকে আরও স্মার্ট করে ডিজিটাল নিরাপত্তায় বিশেষ জোর দিতে চাইছে ইসিএল । পাশাপাশি কয়লা খাদানে চুরি রুখতে ড্রোন ও সিসি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা ৷
ইসিএলের সিএমডি সমীরণ দত্ত সংবাদমাধ্যকে জানান, খোলামুখ খনি চত্বরে ও ভূগর্ভস্থ খনির ডাম্পিং গ্রাউন্ড এলাকার চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে । ইতিমধ্যেই কিছু খনিতে পরীক্ষামূলক ভাবে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে । ভালো ফল মিলেছে । সব খনিতেই এমন পদক্ষেপ করা হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে । সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি এলাকার অবৈধ খাদানে নজরদারি চালাতে ব্যবহার করা হবে ড্রোন ক্যামেরা ।
তিনি আরও জানান, ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হবে পুরো এলাকায়, ফলে কেউ কোথাও অবৈধ কয়লা খাদান বা সুরঙ্গ করলেই সেই ছবি ধরা পড়বে ইসিএলের কাছে । কয়লা চুরি রোধে সাধারণ মানুষের কাছে তথ্য গ্রহণ করতে ইতিমধ্যেই আনা হয়েছে ‘খান প্রহরী’ অ্যাপ । এই অ্যাপে বিভিন্ন এলাকায় যে বেআইনি খনন হয়, তার তথ্য পাওয়া যায় এলাকাবাসীদের কাছ থেকে ।
অন্যদিকে কয়লাচুরি রুখতে নতুন করে 700 সুরক্ষা কর্মী নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ইসিএলে । যাঁদের নিয়োগ হয়েছে, তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে । পাশাপাশি ইসিএলের বর্তমান 900 সুরক্ষাকর্মী ও 100 আধিকারিকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছে ঝাড়খণ্ড পুলিশ । মিলিটারি কায়দায় এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ।
সমীরণ দত্ত বলেন, ‘‘ইসিএলের যে নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী রয়েছে, তাকে কার্যত আধা সামরিক বাহিনীর ধাঁচে সাজানো হয়েছে । পাশাপাশি ত্রিপুরা রাইফেল বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে । নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে এই রাইফেল বাহিনী প্রশিক্ষণ দেবে এবং নিরাপত্তা রক্ষীদের রাইফেলের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে ।’’
অর্থাৎ একদিকে ডিজিটাল সিস্টেমে নিরাপত্তায় জোর, অন্যদিকে সুরক্ষা বল বাড়ানো, চুরি রুখতে এখন এটাই শেষ দাওয়াই ইসিএলের । যদিও সিসিএল 2017 সালে তাদের সমস্ত গাড়িতে জিপিএস ট্র্যাকার বসায় ৷ 2019 সাল থেকে নাইট ভিশন ক্যামেরা ব্য়বহার শুরু হয় ৷ এতদিন পর কেন ইসিএলের হুঁশ ফিরল, উঠছে সেই প্রশ্নও ৷
আরও পড়ুন: