ETV Bharat / state

পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু, 12 বছরের লড়াই শেষে আড়াই কোটি ক্ষতিপূরণ পেল পরিবার - RECORD COMPENSATION IN ACCIDENT

রাজ্যে তথা দেশে সম্ভাব্য প্রথম ৷ পথ দুর্ঘটনায় আড়াই কোটির ক্ষতিপূরণ পেল মৃতের পরিবার ৷ লোক আদালতের নির্দেশে ঘাতক গাড়ির বিমা কোম্পানি দেবে টাকা ৷

insurance company compensation
পথ দুর্ঘটনায় আড়াই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পেল পরিবার (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 15, 2024, 8:35 PM IST

দুর্গাপুর, 15 ডিসেম্বর: পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীর । এরপর 12 বছরের দীর্ঘ লড়াই বাবা-মা ও স্ত্রীর ৷ অবশেষে ঘাতক গাড়ির বিমা কোম্পানি থেকে আড়াই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পেল মৃতের পরিবার ৷ শনিবার দুর্গাপুরে জাতীয় লোক আদালত ওই পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয় ৷ সম্ভাব্য এত বিপুল পরিমাণ টাকার ক্ষতিপূরণ রাজ্যে প্রথম ।

মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তির নাম আশিসকুমার বড়াল ৷ তিনি ওড়িশার ভুষণ স্টিল লিমিটেডে একজন প্রজেক্ট ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিলেন ৷ ঘটনার সূত্রপাত 2012 সালে ৷ 17 জানুয়ারি তিনি কোম্পানির কাজে বাইরে গিয়েছিলেন ৷ অন্যদের সঙ্গে কোম্পানির গাড়ি করেই ফিরছিলেন আশিস ৷

আশিসের পরিবারের আইনজীবী আয়ুব আনসারী (ইটিভি ভারত)

পথে ওড়িশার ঢেঙ্কানল জেলার বালিমি থানার অন্তর্গত 55 নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আশিসের গাড়িটি ৷ আশিসকুমার বড়াল আদতে দুর্গাপুরের বাসিন্দা ৷ তিনি ঘটনায় গুরুতর আহত হন ৷ পরে তাঁর মৃত্যু হয় । এরপরেই ঘাতক গাড়ির ইন্সুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করেন আশিসের পরিবার ।

ওই মামলায় নিষ্পত্তি হতে 12 বছর লেগে গেল ৷ এর কারণ, একদিকে ভুষণ স্টিল লিমিটেডে হাত বদল হয়ে অধিগ্রহণ করেন টাটা স্টিল লিমিটেড ৷ যার ফলে মামলায় প্রয়োজনীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র অমিল হয়ে পড়ে । কিন্তু মামলাকারীদের আইনজীবী আয়ুব আনসারী পরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করে আদালতে দাখিল করেন ৷

insurance company compensation
ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি (নিজস্ব ছবি)

তবে মামলার নিষ্পত্তি হওয়ায় আগেই আশিসের বাবা বয়সজনিত কারণে মারা যান । ভবিষ্যতে মামলাটি নিষ্পত্তিতে আরও বেশি সময় লাগার আশঙ্কা করেন আইনজীবী ৷ এরপরেই তিনি দুর্গাপুরে ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড (মোটর) টিপি হাবের ইনচার্জ অভিনব ও তাঁর টিমের কাছে বারবার দরবার করেন ৷

insurance company compensation
আশিসকুমার বড়ালের মা (নিজস্ব ছবি)

দুর্গাপুর মহকুমা আদালতের বিচারক মহম্মদ রফিক আলম সাহেবকে নিয়ে গঠিত হওয়া জাতীয় লোক আদালতের বেঞ্চে আশিসের পরিবারের কথা বিবেচনা করে উভয়পক্ষের সম্মতিক্রমে মামলাটির নিষ্পত্তি হয় ৷ জাতীয় লোক আদালতের বিচারক আড়াই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন মৃতের পরিবারকে । ওই টাকা আগামী একমাসের মধ্যে দিতে হবে বিমা কোম্পানিকে ৷ অনাদায়ে 6 শতাংশ হারে সুদ প্রদান করার আদেশ দিয়েছে আদালত ।

শনিবার সারা দেশ জুড়ে জাতীয় লোক আদালত অনুষ্ঠিত হয় । যার মাধ্যমে বহুদিন জমে থাকা বিভিন্ন ধরনের মামলার নিষ্পত্তি হয় । সেসময় দুর্গাপুর মহকুমা আদালতেও জাতীয় লোক আদালত অনুষ্ঠিত হয় । সেখানে নজীরবিহীনভাবে ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবত জমে থাকা মামলায় আদালত আড়াই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ দেয় ।

আশিসের পরিবারের আইনজীবী আয়ুব আনসারী বলেন, "একসময় মামলায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে না পারায় খুবই দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই ৷ কিন্তু আরটিআই করে শেষমেশ মামলায় নতুন করে জট খুলে যায় ৷ আর তারই মাঝে আশিসবাবুর বাবার মৃত্যু হয় এবং মাও অনেক অসুস্থ ৷ সেকারণে দেরি না করে আদালতের সাহায্য নিয়ে ইন্সুরেন্স কোম্পানির কাছে দরবার করা হয় ৷ শেষে লোক আদালতের মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তি করা হয় ৷ ওই পরিবার আর্থিক সাহায্য পাবে তাতে ভালো লাগছে ৷ তবে আশিসবাবুর বাবা বেঁচে থাকলে এই রায় দেখতে পারতেন । অর্থ কোনোদিন কোনও ক্ষেত্রে মানুষের পরিপূরক হতে পারে না ৷ তবে একমাত্র অসহায় সম্বলহীন পরিবারের কিছুটা সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে ।"

insurance company compensation
আশিসকুমার বড়ালের পরিবার (নিজস্ব ছবি)

অপরদিকে ন্যাশানাল ইন্সুরেন্স কোম্পানির টিপি হাব (মোটর) দুর্গাপুরের ইনচার্জ অভিনব ও কলকাতা হেড অফিসের ইনচার্জ বিকে সত্যপ্রকাশের কথায়, "ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স কোম্পানি সব সময় অসহায় সম্বলহীন পরিবারের পাশে থাকার অঙ্গীকার করে ৷ ভারতে প্রথম এত বেশি পরিমাণ অর্থ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি মোটর দুর্ঘটনায় নিহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিল । আজকের লোক আদালতের নির্দেশের পর দুর্গাপুর টিপি হাবে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আশিসবাবুর পরিবারের হাতে চেক তুলে দেওয়া হয় ৷"

আশিসের স্ত্রী সুশ্বেতা বড়াল বলেন, "2012 সালে দুর্ঘটনায় আমার স্বামীর মৃত্যু হয় ৷ সেসময় আমরা দিল্লিতে থাকতাম ৷ আজ আমরা কোম্পানির থেকে ক্ষতিপূরণ পেলাম ৷ কিন্তু আমি স্বামীকে হারিয়েছি ৷ আমার মেয়ে 5 বছর বয়সে বাবাকে হারায় ৷ সেই ক্ষতি কোনোদিন পূরণ হবে না ৷ টাকা দিয়ে তো নয়ই ৷ তাই ক্ষতিপূরণের কথা ভাবিনি ৷ তাই যে টাকা পেয়েছি, সেটা নিয়ে লোভ ছিল না ৷ আমার স্বামীর মতো ভালো মানুষ হয় না ৷ ও অনেক কিছু করতে পারত ৷ কিন্তু সেটা আর হল না ৷"

দুর্গাপুর, 15 ডিসেম্বর: পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীর । এরপর 12 বছরের দীর্ঘ লড়াই বাবা-মা ও স্ত্রীর ৷ অবশেষে ঘাতক গাড়ির বিমা কোম্পানি থেকে আড়াই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পেল মৃতের পরিবার ৷ শনিবার দুর্গাপুরে জাতীয় লোক আদালত ওই পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয় ৷ সম্ভাব্য এত বিপুল পরিমাণ টাকার ক্ষতিপূরণ রাজ্যে প্রথম ।

মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তির নাম আশিসকুমার বড়াল ৷ তিনি ওড়িশার ভুষণ স্টিল লিমিটেডে একজন প্রজেক্ট ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিলেন ৷ ঘটনার সূত্রপাত 2012 সালে ৷ 17 জানুয়ারি তিনি কোম্পানির কাজে বাইরে গিয়েছিলেন ৷ অন্যদের সঙ্গে কোম্পানির গাড়ি করেই ফিরছিলেন আশিস ৷

আশিসের পরিবারের আইনজীবী আয়ুব আনসারী (ইটিভি ভারত)

পথে ওড়িশার ঢেঙ্কানল জেলার বালিমি থানার অন্তর্গত 55 নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আশিসের গাড়িটি ৷ আশিসকুমার বড়াল আদতে দুর্গাপুরের বাসিন্দা ৷ তিনি ঘটনায় গুরুতর আহত হন ৷ পরে তাঁর মৃত্যু হয় । এরপরেই ঘাতক গাড়ির ইন্সুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করেন আশিসের পরিবার ।

ওই মামলায় নিষ্পত্তি হতে 12 বছর লেগে গেল ৷ এর কারণ, একদিকে ভুষণ স্টিল লিমিটেডে হাত বদল হয়ে অধিগ্রহণ করেন টাটা স্টিল লিমিটেড ৷ যার ফলে মামলায় প্রয়োজনীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র অমিল হয়ে পড়ে । কিন্তু মামলাকারীদের আইনজীবী আয়ুব আনসারী পরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করে আদালতে দাখিল করেন ৷

insurance company compensation
ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি (নিজস্ব ছবি)

তবে মামলার নিষ্পত্তি হওয়ায় আগেই আশিসের বাবা বয়সজনিত কারণে মারা যান । ভবিষ্যতে মামলাটি নিষ্পত্তিতে আরও বেশি সময় লাগার আশঙ্কা করেন আইনজীবী ৷ এরপরেই তিনি দুর্গাপুরে ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড (মোটর) টিপি হাবের ইনচার্জ অভিনব ও তাঁর টিমের কাছে বারবার দরবার করেন ৷

insurance company compensation
আশিসকুমার বড়ালের মা (নিজস্ব ছবি)

দুর্গাপুর মহকুমা আদালতের বিচারক মহম্মদ রফিক আলম সাহেবকে নিয়ে গঠিত হওয়া জাতীয় লোক আদালতের বেঞ্চে আশিসের পরিবারের কথা বিবেচনা করে উভয়পক্ষের সম্মতিক্রমে মামলাটির নিষ্পত্তি হয় ৷ জাতীয় লোক আদালতের বিচারক আড়াই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন মৃতের পরিবারকে । ওই টাকা আগামী একমাসের মধ্যে দিতে হবে বিমা কোম্পানিকে ৷ অনাদায়ে 6 শতাংশ হারে সুদ প্রদান করার আদেশ দিয়েছে আদালত ।

শনিবার সারা দেশ জুড়ে জাতীয় লোক আদালত অনুষ্ঠিত হয় । যার মাধ্যমে বহুদিন জমে থাকা বিভিন্ন ধরনের মামলার নিষ্পত্তি হয় । সেসময় দুর্গাপুর মহকুমা আদালতেও জাতীয় লোক আদালত অনুষ্ঠিত হয় । সেখানে নজীরবিহীনভাবে ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবত জমে থাকা মামলায় আদালত আড়াই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ দেয় ।

আশিসের পরিবারের আইনজীবী আয়ুব আনসারী বলেন, "একসময় মামলায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে না পারায় খুবই দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই ৷ কিন্তু আরটিআই করে শেষমেশ মামলায় নতুন করে জট খুলে যায় ৷ আর তারই মাঝে আশিসবাবুর বাবার মৃত্যু হয় এবং মাও অনেক অসুস্থ ৷ সেকারণে দেরি না করে আদালতের সাহায্য নিয়ে ইন্সুরেন্স কোম্পানির কাছে দরবার করা হয় ৷ শেষে লোক আদালতের মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তি করা হয় ৷ ওই পরিবার আর্থিক সাহায্য পাবে তাতে ভালো লাগছে ৷ তবে আশিসবাবুর বাবা বেঁচে থাকলে এই রায় দেখতে পারতেন । অর্থ কোনোদিন কোনও ক্ষেত্রে মানুষের পরিপূরক হতে পারে না ৷ তবে একমাত্র অসহায় সম্বলহীন পরিবারের কিছুটা সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে ।"

insurance company compensation
আশিসকুমার বড়ালের পরিবার (নিজস্ব ছবি)

অপরদিকে ন্যাশানাল ইন্সুরেন্স কোম্পানির টিপি হাব (মোটর) দুর্গাপুরের ইনচার্জ অভিনব ও কলকাতা হেড অফিসের ইনচার্জ বিকে সত্যপ্রকাশের কথায়, "ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স কোম্পানি সব সময় অসহায় সম্বলহীন পরিবারের পাশে থাকার অঙ্গীকার করে ৷ ভারতে প্রথম এত বেশি পরিমাণ অর্থ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি মোটর দুর্ঘটনায় নিহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিল । আজকের লোক আদালতের নির্দেশের পর দুর্গাপুর টিপি হাবে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আশিসবাবুর পরিবারের হাতে চেক তুলে দেওয়া হয় ৷"

আশিসের স্ত্রী সুশ্বেতা বড়াল বলেন, "2012 সালে দুর্ঘটনায় আমার স্বামীর মৃত্যু হয় ৷ সেসময় আমরা দিল্লিতে থাকতাম ৷ আজ আমরা কোম্পানির থেকে ক্ষতিপূরণ পেলাম ৷ কিন্তু আমি স্বামীকে হারিয়েছি ৷ আমার মেয়ে 5 বছর বয়সে বাবাকে হারায় ৷ সেই ক্ষতি কোনোদিন পূরণ হবে না ৷ টাকা দিয়ে তো নয়ই ৷ তাই ক্ষতিপূরণের কথা ভাবিনি ৷ তাই যে টাকা পেয়েছি, সেটা নিয়ে লোভ ছিল না ৷ আমার স্বামীর মতো ভালো মানুষ হয় না ৷ ও অনেক কিছু করতে পারত ৷ কিন্তু সেটা আর হল না ৷"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.