ব্যারাকপুর, 22 এপ্রিল: ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের লড়াই সবদিক থেকেই হাইভোল্টেজ ৷ সেখান থেকে এবার তৃণমূল প্রার্থী করেছে পার্থ ভৌমিককে। বিপরীতে বিজেপির অর্জুন সিং ৷ দু’জনেরই ব্যারাকপুর অঞ্চলে বেশ দাপট ৷ একজন রাজ্যের মন্ত্রী অন্যজন বিদায়ী সাংসদ ও বিজেপি নেতা ৷ এই দুই নেতার বিরুদ্ধে সিপিএমের হয়ে ভোট যুদ্ধে সিপিএম ভরসা রেখেছে টলিউডের পরিচিত মুখ অভিনেতা দেবদূত ঘোষের উপর।
ধারেভারে এই বাম প্রার্থীর থেকে তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী এগিয়ে থাকলেও কড়া টক্কর দিতে নির্বাচনী লড়াইয়ে কোনও খামতি রাখছেন না প্রার্থী দেবদূত ঘোষ। জোর কদমে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন টলিউডের তারকা প্রার্থী ৷ একদা বাম-দুর্গ ব্যারাকপুরে সেই আধিপত্য সিপিএম ফিরে পাবে কি না তা না বললেও, ব্যারাকপুরে বামেদের ফলাফল ভালো হবে বলে আশাবাদী বাম প্রার্থী দেবদূত ঘোষ ।
ইটিভি ভারত: আপনার বিরুদ্ধে যে দু'জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাঁরা দু'জনেই ব্যারাকপুরের ভূমিপুত্র! আপনি কিন্তু সেখানকার বাসিন্দা নন! আপনি কি সেই লড়াই করতে পারবেন ?
দেবদূত ঘোষ: আপনি যাঁদের ভূমিপুত্র বললেন। তাঁদের উদ্দেশ্যে আমি পালটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে চাই । রচনা বন্দোপাধ্যায় থেকে শুরু করে নরেন্দ্র মোদি, লকেট চট্টোপাধ্যায়-সহ যাঁরা এবারের নির্বাচনে হুগলি এবং বেনারস থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৷ তাঁরা কি সকলেই ভূমিপুত্র ? এই লড়াইটা দেশের সাধারণ এবং খেটে খাওয়া মানুষের জন্য আইন প্রণয়ন করার লড়াই । লোকসভা নির্বাচনে কিছু জয়ী প্রতিনিধিরা সাংসদ নির্বাচিত হয়েও একদিনও সংসদে যাননি । মানুষের হয়ে কথা বলেননি। তাঁরা রিলস বানাতে ব্যস্ত ছিলেন । তাঁরা মানুষের জন্য কী আদায় করে আনবেন ? এটা বুঝতে হবে।
এখানেই থেমে থাকেননি অভিনেতা ৷ তিনি বলেন, "আমি প্রায় দু'দশক ধরে টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে অসংগঠিত শ্রমিকদের হয়ে কাজ করে চলেছি । এদের আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি । এঁরা একেবারে সাধারণ ঘর থেকে কাজ করতে এসেছন । এই সমস্ত অসংগঠিত শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে একদিকে যেমন লড়াই করতে হয়েছে আমাদের তেমনই তাঁদের দাবি দাওয়া আদায়ে সংগঠনও তৈরি করতে হয়েছে ।"
সিপিএমের এই প্রার্থী সন্দেশখালি প্রসঙ্গেই বলেন, "আমি সেখানে কোনও পার্টির তরফে যাইনি । গিয়েছিলাম এককভাবে। মুখে গামছা বেঁধে মা-বোনেদের সঙ্গে সেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলেছি ৷ সন্দেশখালিতে ভূমিপুত্র বলে আপনি যা়ঁদের সম্পর্কে আলোচনা করছেন,তাঁদের কে গিয়েছেন? গিয়ে তো ক্ষমা চেয়ে উল্টে পালিয়ে এসেছেন!ক্ষমা করে দিন....!সেই ভিডিয়ো আমি দেখেছি।সন্দেশখালির মানুষের কষ্ট আমরা জানি। বামফ্রন্ট জমির পাট্টা দিয়েছিল । সেই জমিতে জল ঢুকিয়ে ক্ষতিপূরণ কিংবা জলকর দেওয়ার বদলে সেখানকার বাসিন্দাদের কাছ থেকেই উল্টে কাটমানি নিয়ে পকেট পুড়েছেন শাসক নেতারা।এই তো পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি!
ইটিভি ভারত: আপনি বলছেন সাধারণ মানুষের বঞ্চনার বিরুদ্ধে বামপন্থীরা লড়াই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে! সেই লড়াই আন্দোলন কী ভোটবাক্সে প্রতিফলন ঘটবে ?
দেবদূত ঘোষ: বামপন্থীরা চিরকালই লড়াই আন্দোলন করে এসেছে। এখান থেকে রেণু চৌধুরী,মহম্মদ ইসমাইল, তড়িৎবরণ তোপদারের মতো বামপন্থী নেতাদের সাংসদ করে পার্লামেন্টে পাঠিয়েছেন ব্যারাকপুরের মানুষ। সাধারণ মানুষের কষ্ট-যন্ত্রণা লাঘব করতে পারে একমাত্র বামপন্থীরাই। উদাহরণ স্বরূপ ইউপিএর প্রথম সরকারের আমলে 100 দিনের কাজের প্রস্তাব পাশ হয়েছিল বামপন্থী সাংসদদের চাপেই । এখন আমরা চাই, সেই কাজ বাড়িয়ে বছরে অন্তত 300 দিন করা হোক। তা না হলে গরিব মানুষ বাঁচবে কীভাবে ?
ইটিভি ভারত: আপনার বিপরীতে বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংয়ের দল বদলকে কীভাবে দেখছেন আপনি?
দেবদূত ঘোষ: এই সমস্ত দলগুলো এবং তাঁর প্রতিনিধিদের কথা শুধু ভেবে দেখুন! যাঁদের ভোট নিয়ে আমি জিতে এলাম তাঁদেরই বঞ্চনা করে আমি চলে গেলাম অন্য দলে। আবার সেই দল গিয়ে যখন টিকিট পেলাম না তখন ফের চলে গেলাম অন্য দলে। সাধারণ মানুষ এসব পছন্দ করেনা। তাঁরা চান কাজ। আরও চান মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাঁচতে।
ইটিভি ভারত: দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়তে প্রচারে কোন কোন ইস্যুকে হাতিয়ার করে লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছেন ?
দেবদূত ঘোষ: ইস্তাহারে আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি সাধারণ মানুষ এবং খেটে খাওয়া মানুষের জন্য আমরা কী চাই ৷ গরিব মানুষকে মাসে 26 হাজার ও 60 বছরের বয়স্কদের মাসে 6 হাজার টাকা দিতে হবে । এছাড়া, ইস্তাহারে নারী সুরক্ষার দিকে বিশেষভাবে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে । একশ্রেণির মানুষের উপর্জন বাড়ছে, আর এক গরিবশ্রেণি দেনার দায়ে ডুবছে । 500 টাকা বা 1 হাজার টাকা এমকী দেড় হাজার টাকা দিয়েই বা কী হবে ৷ প্রয়োজনে সংসদে দাবি আদায় করে তা প্রণনয় করতে হবে আইনে ৷ কোনও দয়ার দান নয় ৷ লক্ষ্মীর ভান্ডারকে আমরা আইনে রূপান্তরিত করব ।
ইটিভি ভারত: বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীও তো বলছেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা বাড়িয়ে তিনগুণ করবে?
দেবদূত ঘোষ: বিজেপি প্রতিশ্রুতি পূরণ করার বদলে শুধু ভাঁওতা দিয়েছে । এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কৃষকের পাশে দাঁড়াতে উৎপাদিত পণ্যের সহায়ক মূল্য দেড়গুণ দামে কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এক টাকা দিয়েও সেই সমস্ত সেই উৎপাদিত পণ্য কেনা হয়নি । ফলে, ঋণ শোধ করতে না পেরে অনেক কৃষক আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ৷ এই তো দেশের অবস্থা। রাজ্যের অবস্থাও তাই।
ইটিভি ভারত: তাহলে আপনি বলছেন ব্যারাকপুর কেন্দ্রে লড়াই এবার জোরদার হবে?
দেবদূত ঘোষ: এত মানুষের সমর্থন দেখে ভরসা পাচ্ছি । এই কেন্দ্রের প্রার্থী আমি শুধু একা নয়! পার্টির সকলেই। প্রার্থী হওয়ার জন্য একটা মুখের প্রয়োজন হয়। বাকি শরীর,হৃদয় সবকিছুই পার্টির কর্মীরা। তাঁরা যদি মানুষের দাবি আদায় করতে পারে তাহলে মানুষ বাঁচবে!
আরও পড়ুন: