মালদা, 22 অক্টোবর: আরজি করের তরুণী চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় আন্দোলনকারীদের গণধোলাই দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন মালদার জেলা তৃণমূল সভাপতি আবদুর রহিম বকসি ৷ এই অভিযোগের পালটা জেলা তৃণমূল সভাপতিকে বেনজির ভাষায় আক্রমণ করলেন সিপিআই(এম) নেতা শতরূপ ৷ মঞ্চ থেকে তিনি সরাসরি প্রশ্ন তুললেন, "ধর্ষক তোর বাড়ির কেউ হয় ?"
রহিম বকসিকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, "পুলিশের কোলে বসে গণধোলাইয়ের ভয় দেখাচ্ছেন ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলছি, সাহস থাকলে এক বেলার জন্য পুলিশকর্মীদের কর্মবিরতিতে পাঠান ৷ তারপর রহিম বকসি আসুন গণধোলাই দিতে ৷ মানুষ ডুগডুগি বাজাবে আর রহিম বকসি দাঁড়িয়ে বাঁদর নাচ নাচবে ৷" শতরূপের এমন মন্তব্যকে অবশ্য পাগলের প্রলাপ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতা আবদুর রহিম ৷ বাম নেতার এহেন মন্তব্যে রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন, তাহলে কি বামেরাও কুকথার রাজনীতিতে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে ?
আরজি করের ঘটনায় বিচারের দাবিতে সোমবার হরিশ্চন্দ্রপুরে রাতের দখল নেওয়ার ডাক দেয় সিপিআই(এম)-এর সব শাখা সংগঠন ৷ সঙ্গে ছিল গণসংগীত ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি ৷ এই কর্মসূচিতে অংশ নিতেই মালদায় যানন শতরূপ ৷ হাজির ছিলেন নিরাপদ সরকার, কনীনিকা বোস ঘোষ, মোনালিসা সিনহা, জামিল ফিরদৌস, অম্বর মিত্রদের মতো নেতা-নেত্রীরাও ৷ লাল ঝান্ডার ডাকে রাতের দখল কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন স্থানীয়রাও ৷
এদিন বক্তৃতা দেওয়ার রাখতে গিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি আবদুর রহিম বকসিকে বেলাগাম আক্রমণ করেন শতরূপ ৷ তিনি বলেন, "আরজি কর ইস্যুতে যাঁরা বিচার চাইছেন, তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে বসে বলছেন, দুর্গাপুজো এসেছে ৷ এক মাস অনেক প্রতিবাদ হয়েছে ৷ এবার উৎসবে ফেরা হোক ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোষা বাঁদরগুলো গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে৷ তার মধ্যে একটা আবদুর রহিম বকসি ৷"
শতরূপ আরও বলেন, "ক’দিন আগে তিনি একটি মিটিংয়ে বলেছে, আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদ করে যাঁরা রাস্তায় নেমেছেন, তাঁদের গণধোলাই দেওয়া হবে ৷ ওই মঞ্চে আবার সাবিত্রী মিত্রের মতো নেত্রী বসে রয়েছেন ৷ কেন ? আরজি করে তিলোত্তমার ধর্ষকদের কেউ কি তাঁর বাড়ির লোক ?”
শতরূপের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আবদুর রহিম বকসি ফোনে বলেন, "ওই পাগলের কথার আর কী উত্তর দেব ? রাজ্যের মানুষ ওদের ছুড়ে ফেলে দিয়েছে ৷ একটা আসনেও জিততে পারে না ৷ জনপ্রতিনিধি হতে পারে না ৷ এসব কথা বলে মানুষকে নিজেদের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করছে ৷ এসব কথার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না ৷”
সিপিআই(এম)-এর রাজ্য কমিটির এই সদস্যের বক্তব্য, "আরজি করের ঘটনায় যাঁদের নাম বেরিয়ে এসেছে, তারা কেউ পলিগ্রাফ বা নার্কো টেস্টে রাজি হচ্ছে না ৷ তাঁরা নাকি সবাই ধোয়া তুলসীপাতা ৷ সব নাকি সঞ্জয় রায়ের দোষ ৷ ধৃত সন্দীপ ঘোষ হাসপাতালের ওষুধ বিক্রি থেকে শুরু করে মৃতদেহের সঙ্গে নোংরা ভিডিয়ো বানিয়েও বিদেশের সঙ্গে ব্যবসা করত ৷"
কলকাতা ফেরার পথে শতরূপ ঘোষ তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে বলেন, "আমি কোনও ভুল কিছু বলিনি ৷ আমি বলেছি, বিচারের দাবিতে যাঁরা রাস্তায় নেমেছে, রহিম বকসি তাদের গণধোলাইয়ের ভয় দেখাচ্ছে ৷ পুলিশ পাশ থেকে সরে গেলে দেখা যাবে গণধোলাই কে খায় ৷ শুধু এক বেলার জন্য পুলিশ কর্মবিরতিতে যাক ৷ তিলোত্তমার ধর্ষণের ঘটনায় নিশ্চয়ই রহিম বকসির পরিবারের কেউ জড়িত ? নইলে তাঁর এত গাত্রদাহ কেন ?” আবাস যোজনা নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, "এটা কেন্দ্রের যোজনা ৷ সব মানুষকে বাড়ি তৈরির করে দেওয়ার মতো টাকা রাজ্যের নেই ৷ অথচ, তৃণমূল এই প্রকল্পকে নিজেদের বলে চালাচ্ছে ৷ এবার মানুষ এই প্রকল্পের টাকা না পেলে কিন্তু একটা তৃণমূল নেতার বাড়িও আস্ত থাকবে না ৷"