সোনারপুর (দক্ষিণ 24 পরগনা), 4 জানুয়ারি: ‘‘মা-বাবা ঘরে আছে’’, আড়াই বছরের ছেলেটি শুধু এটুকুই বলতে পেরেছিল ৷ তার পর ঘরে উঁকি দিয়ে বাড়িওয়ালা যা দেখেন, তাতে তিনি রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে যান ৷ কারণ, ঘরের মধ্যেই ঝুলছে আড়াই বছরের ওই শিশুর বাবার দেহ ৷
শনিবার সকালে ঘটনাটি ঘটে দক্ষিণ 24 পরগনার সোনারপুরের মথুরাপুরে ৷ সমরকুমার মণ্ডল নামে ওই বাড়িওয়ালা ওই শিশুর বাবার দেহ ঘরে ঝুলতে দেখে পুলিশে খবর দেন ৷ তার পর সোনারপুর থানা থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় ৷ ঘরে ঢুকে চমকে যান পুলিশকর্মীরাও ৷ কারণ, বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ওই শিশুর মায়ের দেহও ৷
সাতসকালে দম্পতির রহস্যমৃত্যুকে কেন্দ্র করে হইচই পড়ে যায় এলাকায় ৷ পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় ৷ পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম শশধর হালদার (34) ও পায়েল হালদার (24) ৷ শশধর ও তাঁর স্ত্রী পায়েলের বাড়ি কুলপি থানা এলাকায় । মাস কয়েক আগে মথুরাপুরে ভাড়াবাড়িতে থাকতে শুরু করেন তাঁরা । শশধর ট্রেনে হকারি করেন ।
বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার পলাশচন্দ্র ঢালী জানান, পায়েল হালদারকে গলা কেটে খুন করা হয়েছে মনে করা হচ্ছে ৷ খুন সম্ভবত করেছেন পায়েলের স্বামী শশধরই ৷ তার পরই তিনি চরম পদক্ষেপ করেন৷ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে ৷
তবে ওই দম্পতির মধ্যে যে গোলমাল দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল, তা স্পষ্ট হয়েছে পায়েল হালদারের বাবা পরেশচন্দ্র সরদারের বক্তব্যে ৷ তিনি জানান, আগেও মেয়ে-জামাইয়ের মধ্যে অশান্তি হয়েছে ৷ পুলিশেও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল ৷ পুলিশ জামাইকে গ্রেফতারও করেছিল ৷ পরে ছাড়া পেয়ে আবার মেয়ের সঙ্গে মিটমাট করে নেয় ৷ তার পর একসঙ্গে সংসার শুরু করে ৷ তাঁর অনুমান, জামাই মেয়েকে খুন করেছে ৷ সঙ্গে আরও কারও যোগ থাকতে পারে ৷
সত্যিই কি তাই ? কী বলছেন শশধর-পায়েলের বাড়িওয়ালা এবং প্রতিবেশীরা ? প্রতিবেশী সঞ্চিতা ঘোষ জানান, সকাল থেকেই বাচ্চাটা কাঁদছিল ৷ তাঁদের মনে হয়েছিল যে শীতের কারণে মা-বাবা হয়তো টের পাচ্ছে না ৷ কিছুক্ষণ পর বাচ্চাটা দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে ৷ তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে, সে জানায় যে মা-বাবা ঘরে আছে ৷
বাড়িওয়ালা সমরকুমার মণ্ডল জানান, তিনি শিশুটিকে জিজ্ঞাসা করেন যে মা-বাবা কোথায় ? ছেলেটি জানায় যে মা-বাবা ঘরে আছে ৷ তাঁর সন্দেহ হয় ৷ তাই তিনি দরজা থেকে উঁকি দিয়ে দেখেন যে ঘরে ঝুলছে শশধরের দেহ ৷ তার পর পুলিশে খবর দেন ৷