অশোকনগর, 2 জুলাই: রান্নাবান্না থেকে থাকা, খাওয়া। এমনকী মশারি টাঙিয়ে ঘুমানো। সবকিছুই চলছে স্কুলঘরে। এক ঝলক দেখে মনে হতে পারে, সংসার পেতে বসেছে তারা। সরকারি সম্পত্তি দখল করে স্কুলই এখন হয়ে উঠেছে ঠিকা শ্রমিকদের সংসার ৷ শিক্ষাঙ্গনে এমন অসামঞ্জস্য পূর্ণ ছবি ধরা পড়েছে উত্তর 24 পরগনার অশোকনগরে।
কেন স্কুলের এই পরিস্থিতি, তার সন্ধান করতে গিয়ে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য ৷ জানা গিয়েছে, একসময় পড়ুয়াদের পঠনপাঠন এবং কোলাহলে ভরে থাকত নিত্যানন্দ জিএস এফপি প্রাইমারি স্কুল। কিন্তু, এখন সেসব অতীত। প্রায় বছর কুড়ি হল, পড়ুয়ার অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রাইমারি স্কুলটি ৷
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বহু জায়গায় জানিয়েও এই স্কুলটি চালু করা যায়নি। এমনকী স্থানীয় পৌরসভার পক্ষ থেকে কোনও উৎসাহ দেখা যায়নি ৷ স্থানীয়দের অভিযোগ, পৌর-প্রশাসনের অবহেলার কারণেই পুনরায় স্কুলটিকে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে প্রাইমারি এই স্কুলটি জরাজীর্ণ, ভগ্নদশায় পরিণত হয়েছে। অশোকনগর পৌরসভার 7 নম্বর ওয়ার্ডে এই স্কুলেই নির্মাণ শ্রমিকরা রীতিমতো সংসার পেতে বসেছেন ৷
যদিও, সরকারি সম্পত্তি বেদখল হয়ে যাওয়ার অভিযোগ মানতে চাননি অশোকনগর পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রবোধ সরকার। তিনি বলেন, "ওই প্রাইমারি স্কুলটি বহু বছর ধরে বন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে ওখানে যাঁরা থাকছেন, তাঁরা সাময়িকভাবে হয়তো থাকছেন । পাকাপাকি বসবাস করার কোনও খবর নজরে আসেনি ৷ আমরা সবসময় চেষ্টা করে এসেছি সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করার। জেলার স্কুল পরিদর্শকের সঙ্গে কথা বলে বন্ধ ওই স্কুলে কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্র করা যায় কি না, দেখছি।"
বন্ধ স্কুলঘর দখল করে সেখানে যাঁরা বসবাস করছেন তাঁদের অধিকাংশেরই বাড়ি ঝাড়খণ্ডে। যাঁরা নির্মাণ শ্রমিকের কাজের জন্য এরাজ্যে এসেছেন।এরকমই এক শ্রমিক মুন্না কর্মকার বলেন, "স্কুলে থাকা উচিত নয় মানছি। কিন্তু ঠিকাদারই তো থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে এখানে। স্কুলঘরের অবস্থা তো খুব খারাপ। বৃষ্টি হলে টালির ছাউনি দিয়ে জল পড়ে। কষ্ট করেই থাকতে হয়। স্কুলটি মেরামত করে পুনরায় পড়াশোনা ব্যবস্থা করা উচিত। তাহলে এলাকার বাচ্চাদের উপকার হবে।"
এদিকে, স্কুলঘরে রান্নাবান্না থেকে থাকা-খাওয়া। সবকিছুই যে চলছে, তা মেনে নিয়েছেন রাস্তার কাজে নিযুক্ত অপর এক নির্মাণ শ্রমিক কবিতা রায়।তাঁর কথায়,"সবে আমি চারদিন হয়েছে এখানে এসেছি। রান্নাবান্না করেই এখানে খেতে হয় আমাদের। কি করব আর ৷"
অন্যদিকে, পুরনো স্কুলের এই অ-ব্যবস্থা দেখে ক্ষুদ্ধ স্থানীয় বাসিন্দা থেকে স্কুলের প্রাক্তনীরা। দীপক গুহ নামে স্কুলের এক প্রাক্তনী বলেন, "একসময় এই প্রাইমারি স্কুলে প্রচুর ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করত । আমি নিজেও এখানে পড়াশোনা করেছি। কিন্তু, পড়ুয়ার অভাবে স্কুলটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সরকারি জায়গায় নির্মাণ শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থা, এটা ঠিক নয়। সেখানে পুনরায় পঠনপাঠন চালু হোক, সেটাই চাই। আর সেটা করতে অসুবিধা হলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র হোক সেখানে ৷"