মালদা, 2 জুলাই: শেষ পর্যন্ত খোঁজ মিলল মালদায় অপহৃত ছাত্রের ৷ সোমবার রাতে তাকে উদ্ধার করেছে কালিয়াচক থানার পুলিশ ৷ এই ঘটনায় ছাত্রের জ্যাঠা-সহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ উদ্ধার হওয়া ছাত্রকে তার বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশ ৷ পাশাপাশি ধৃতদের মঙ্গলবার জেলা আদালতে পেশ করা হয়েছে ৷
পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, "এই ঘটনায় ওই ছাত্রের জ্যাঠা এমাজুদ্দিন শেখ-সহ তার দুই সহযোগী সামাউল মোমিন ও আকাশ ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ ধৃতদের আজ জেলা আদালতে পেশ করা হয়েছে ৷ উদ্ধার হওয়া ছাত্রকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে ৷"
কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকের জালালপুর হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ইনজামুল হক শুক্রবার বিকেলে বাড়ির ছাগল চরাতে গিয়েছিল ৷ তারপর সে আর বাড়ি ফেরেনি ৷ তাদের বাড়ি জালালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়নগর ডাঙ্গা গ্রামে ৷ শুক্রবার রাতে তার বাবা-মা সমস্ত আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে খোঁজ নিয়েও ছেলের সন্ধান পাননি ৷ পরদিন ইনজামুলের বাবা এনামুল হক এই ঘটনায় কালিয়াচক থানায় অপহরণের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ৷
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি 14 বছরের কিশোরের বাবার সঙ্গে তার দাদা ও বোনের পৈতৃক সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে গণ্ডগোল চলছিল ৷ এর থেকেই এনামুল হকের সন্দেহ হয়, তাঁর ছেলেকে অপহরণের ঘটনায় দাদা-বোন জড়িত থাকলেও থাকতে পারে ৷ অভিযোগপত্রে তিনি দু'জনের নামও উল্লেখ করেন ৷ পরবর্তীতে অপহরণকারীরা ছেলেকে দিয়ে ফোন করিয়ে তাঁর কাছে 60 লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে ৷ এতে তাঁর সন্দেহ আরও গাঢ় হয় ৷
ছাত্রের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার রাতেই অভিযুক্ত জ্যাঠা এমাজুদ্দিনকে আটক করে পুলিশ ৷ পরদিন তাকে দফায় দফায় জেরা করেন কালিয়াচক থানার পুলিশ অফিসাররা ৷ জেরার মুখে একসময় ভেঙে পড়ে এমাজুদ্দিন ৷ সে স্বীকার করে নেয়, সম্পত্তিগত ঝামেলার জেরে ভাইপোকে অপহরণ করেছে ৷ তার দেওয়া সূত্র ধরেই সোমবার রাতে জালালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সীমানা ঘেঁষা ছাতারগাছি গ্রামের একটি গোপন ডেরা থেকে ইনজামুলকে উদ্ধার করেন পুলিশ আধিকারিকরা ৷
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইনজামুলকে উদ্ধারের জন্য পুলিশের তরফে তিনটি তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছিল ৷ তদন্তে নেমে প্রথমেই যে ফোন নম্বর থেকে 60 লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল, সেই ফোনটিকে ট্র্যাক করার চেষ্টা করা হয় ৷ কিন্তু ফোনটি সুইচ অফ থাকায় তা সম্ভব হয়নি ৷ সম্ভবত সেটির সিমকার্ডও খুলে নেওয়া হয়েছিল ৷
অবশেষে জেলা পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের দেওয়া সূত্র ধরে স্থানীয় একটি মোবাইল ফোন সারাইয়ের দোকান থেকে এক অপহরণকারীকে গ্রেফতার করা হয় ৷ জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে নেয়, তারাই ইনজামুলকে অপহরণ করেছে ৷ তাকে জেরা করে মোথাবাড়ি থানা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় হানা দেওয়া হয় ৷ শেষ পর্যন্ত সোমবার সন্ধেয় মোথাবাড়ি থানার পুলিশের সহযোগিতায় ছাতারগাছি গ্রাম থেকে অপহৃত ওই ছাত্রকে উদ্ধার করা হয় ৷