স্বরূপনগর, 16 অক্টোবর: ফের কাঠগড়ায় সিভিক ভলান্টিয়ার ! এবার উত্তর 24 পরগনার স্বরূপনগরের স্বরূপদহ সীমান্তে ভিন রাজ্যের যুবতীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল স্থানীয় এক সিভিক ভলান্টিয়ার এবং ভিলেজ পুলিশের বিরুদ্ধে । মেয়ের সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন যুবতীর বাবা-ও । শুধু তাই নয়, মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে যুবতীর ব্যক্তিগত ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে ওই দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে হাকিমপুর বিথারী পঞ্চায়েত এলাকায় । ঘটনার পরেই তৎপর হয় বসিরহাট জেলা পুলিশ ।অভিযোগ পেয়ে বুধবার ভোরে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে । তাঁদের তিনদিনের জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত । গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ।
জানা গিয়েছে, বছর 24-এর ওই যুবতী বেঙ্গালুরুতে থাকেন তাঁর বাবার সঙ্গে । সেখানেই তিনি কর্মরত । এখানকার দুর্গাপুজোয় সামিল হতে সম্প্রতি বাবা-মেয়ে দু'জনেই পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন । ঘুরতে ঘুরতে তাঁরা মঙ্গলবার রাতে চলে আসেন ভারত-বাংলাদেশের স্বরূপনগরের স্বরূপদহ সীমান্তে ।অভিযোগ, সীমান্ত এলাকায় তাঁরা ঘোরাঘুরি করছেন দেখে সন্দেহ হয় কর্তব্যরত এক সিভিক ভলান্টিয়ার এবং ভিলেজ পুলিশের । এরপর তাঁরা ভিন রাজ্যের ওই দু'জনের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখতে চান । তাঁদের দাবি, বাবা-মেয়ে দু'জনের কেউই প্রয়োজনীয় নথিপত্র দেখাতে পারেননি । সেই কারণে সীমান্তের পাশের একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় দু'জনকেই ! এরপরই যে অভিযোগ উঠেছে, তা মারাত্মক ।
যুবতীর বাবা দাবি করেন, "রাস্তার পাশ থেকে জোর করে তাঁদের গাড়িতে তুলে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরের একটি নির্জন এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয় ।সেখানে দু'কিলোমিটারের মধ্যে কোনও জনবসতি ছিল না । এরপর ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয় ওরা । আমরা ওদের বারবার বলেছি, এখানে ঘুরতে এসেছি আমরা । তা সত্ত্বেও কোনও কথা শোনেনি । উলটে মেয়ের মোবাইল কেড়ে নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেয় । কাছে নগদ টাকা যা ছিল, তা তো নিয়েছেই । সঙ্গে মোবাইলের ইউপিআই অ্যাপ থেকে প্রায় 38 হাজার টাকা নিয়ে নিয়েছে ওঁরা।"
বাবার সুরে সুর মিলিয়েছেন নির্যাতিতা যুবতীও । তাঁর কথায়, "প্রথমে দু'জন এসে অভব্য আচরণ করছিল । তারপর আরও দু'জন যোগ দেয় তাতে । ওরা যৌনসঙ্গমে মিলিত হওয়ার প্রস্তাব দেয় আমাকে । তা না-হলে টাকা দিতে হবে বলে জানায় । বারবার ওদের বলতে শোনা গিয়েছে, টাকা না-দিলে বড়বাবু কিছুতেই মানবেন না । ভয়ে শেষ পর্যন্ত টাকা জোগাড় করে দিতে বাধ্য হই আমরা । এই ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে ভাবতে পারেনি । খুব আতঙ্কে রয়েছি।"
এদিকে এই ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই স্বরূপনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন যুবতীর বাবা । সেই অভিযোগ পেয়ে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার জসিমুদ্দিন সর্দার এবং ভিলেজ পুলিশ মোহিত সর্দারকে গ্রেফতার করা হয়েছে । ধৃতদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ ।
এই বিষয়ে বসিরহাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার হোসেন মেহেদি রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ দু'জনকে গ্রেফতার করেছে । আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে । ওই যুবতীর গোপন জবানবন্দি নেওয়া হবে বসিরহাট মহকুমা আদালতে । সেইমতো বুধবার সেখানে পাঠানো হয় ।"
ধৃত দু'জনকে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে বুধবার তাঁদের বসিরহাট মহকুমা আদালতে পেশ করে পুলিশ । আদালত ধৃতদের তিনদিনের জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে ৷