কলকাতা, 6 নভেম্বর: প্রায় 18 কোটি টাকার ইঞ্জেকশন বিনামূল্যে পেয়ে সুস্থতার পথে 16 মাসের শিশু । জানা গিয়েছে, জিনঘটিত রোগে ভুগছিল পূর্ব মেদিনীপুরের ওই শিশুটি । কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হল তার চিকিৎসা । বর্তমানে ওই শিশুটি রয়েছে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে । আস্তে আস্তে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে । তবে এই শিশুটির মধ্যে দিয়ে শেষ হল ভারতে বিনামূল্যে জিন থেরাপির চিকিৎসা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশুটির ছ'মাস বয়স থেকে পরিবার তার মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা লক্ষ্য করে । সে পা ঘোড়াতে বা তুলতে পারত না । আর অল্প পা তুললে পারলেও সেটা খুব আস্তে আস্তে করত । প্রথমে পরিবার তাকে নিয়ে গিয়েছিল স্থানীয় এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে । সেখানে চিকিৎসক জিনঘটিত রোগের অনুমান করতে পেরে তাকে পাঠিয়ে দেন কলকাতায় । বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা নিশ্চিত হয় শিশুটির জিনঘটিত রোগই রয়েছে ।
এই রোগকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়, স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি(এসএমএ) । আসলে এসএমএ রোগটি অস্বাভাবিক জেনেটিক অবস্থার ফলস্বরূপ, যা শিশুদের মাংসপেশি নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি করে । এসএমএ হয় তখনই, যখন এসএমএন1 জিনের দু'টি কপি (একটি মা থেকে এবং একটি বাবা থেকে) ত্রুটিপূর্ণ থাকে । চিকিৎসা না-হলে এসএমএ সাধারণত প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে । এই রোগের চিকিৎসা খরচ সাপেক্ষও ।
স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি রোগের চিকিৎসা করাতে প্রয়োজন হয় একটি ইঞ্জেকশনের । যার নাম জোলজেনসমা । যেটির দাম 17.5 কোটি টাকা । তবে ভারতে এই থেরাপি আগেও হয়েছে । কারণ নোভার্টিজের গ্লোবাল ম্যানেজ এক্সেস প্রোগ্রামের মাধ্যমে এই থেরাপি দেওয়া হয় । কিন্তু 31 জুলাইয়ের পর তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে । শেষবার বিনামূল্যে থেরাপি নথিভুক্ত ছিল পূর্ব মেদিনীপুরের এই শিশুটির নামেই । ফলে বলা যায়, এই শিশুটি শেষ জিনঘটিত রোগে বিনামূল্যে থেরাপি করাতে পারল ।
এই বিষয় শিশুটির মা বলেন, "আমার সন্তানের এই জিন থেরাপিটি করানোর জন্য বেশ কিছু মাস ধরে একাধিক নিয়ম-কানুন আমি পালন করেছি । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে সাহায্য করেছে । বর্তমানে আমার 16 মাসের শিশুটির এই থেরাপি করানো হয়েছে ৷ সে এখন চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রয়েছে ।"
শিশুটির চিকিৎসক সংযুক্তা দে'র কথায়, "এখনও পর্যন্ত পূর্ব ভারতের তিনজন শিশু স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি রোগের থেরাপি পেয়েছে । তবে সরকারিভাবে আর কেউ পাবে না । মূলত দু'বছরের নিচে এই থেরাপি করানো সবথেকে ভালো সময় । এখনও তিন শিশু লাইনে রয়েছে । আমরা চেষ্টা করছি তাদের জন্য বিকল্প কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ।" তবে শিশুটির থেরাপির কাজে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিল আরও একটি বেসরকারি সংস্থা বলে জানা গিয়েছে ।