কলকাতা, 22 অগস্ট: আনন্দপুরের ঘটনায় অবশেষে খাল থেকে উদ্ধার হল নিখোঁজ পাঁচ বছরের শিশুর দেহ ৷ বৃহস্পতিবার আনন্দপুর এলাকারই একটি খাল থেকে শিশুটির দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ ৷ জানা গিয়েছে, মৃত মহিলা রেহানা বিবির সম্পর্কে নাতি ওই শিশুটি ৷ ঘটনার দিন গাড়িতে তাঁর সঙ্গেই ছিল নাবালক ৷ পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, মহিলাকে প্রথমে ঠান্ডা মাথায় খুন করে গাড়ির চালক ৷ এরপর সেই খুনের সাক্ষী পাঁচ বছরের শিশুকে খালে ফেলে দেন অভিযুক্ত ৷
জানা গিয়েছে, রেহানা বিবির বাড়িতে ভাড়া থাকতেন ধৃত গাড়ির চালক ভিকি সাউ ৷ তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, সেই ভাড়া নিয়েই দু'জনের মধ্যে গন্ডগোল চলছিল । আর তার জেরেই খুন হতে হয় রেহানা বিবিকে বলে মনে করছে পুলিশ । তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, গাড়ির ভিতরেই লাগাতার ধারালো অস্ত্র কোপ দিয়ে খুন করা হয় মহিলাকে ।
এই ঘটনায় আর কারা কারা যুক্ত রয়েছে, তা জানতে চাইছে আনন্দপুর থানার আধিকারিকরা । ইতিমধ্যেই গাড়ির চালক ধৃত ভিকি সাউকে দফায় দফায় জেরা করেছেন তদন্তকারীরা । বৃহস্পতিবার তাঁকে আলিপুর আদালতে তোলা হয়েছে ৷ পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছে ৷
উল্লেখ্য, বুধবার আনন্দপুর থানা এলাকায় একটি ঝোপ থেকে মহিলার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল ৷ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল, মহিলার গলায় গভীর ক্ষতর চিহ্ন ছিল । একাধিক আঘাতের চিহ্ন মিলেছিল তাঁর শরীরে । ঘটনার পর দীর্ঘক্ষণ ধরে ওই মহিলার নাম পরিচয় পায়নি পুলিশ ৷ তাই তাদের তদন্তে অগ্রগতি পেতে অসুবিধা হচ্ছিল । পরে সন্ধের দিকে জানা যায়, ওই মহিলার নাম রেহানা বিবি । তিনি নারকেলডাঙ্গা থানা এলাকার বাসিন্দা । তবে তপসিয়া থানা এলাকায় আরও একটি বাড়ি রয়েছে তাঁর । সেখানে কয়েকজন ভাড়া থাকেন । প্রতিমাসে সেখানে ভাড়ার টাকা নিতে যেতেন রেহানা । সঙ্গী থাকতেন গাড়ির চালক ভিকি ।
প্রতিবারই রাত সাড়ে আটটা থেকে ন’টার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসতেন তিনি । মঙ্গলবার সেই সময় পার হয়ে গেলেও বাড়ি ফেরেননি রেহানা বিবি । ওইদিন রাত সাড়ে 11টা নাগাদ রেহানাকে ফোন করেন তাঁর বড় মেয়ে । তখন তিনি জানান, বাড়ি ফিরছেন । কিন্তু রাত বাড়লেও তিনি আর বাড়ি ফেরেন না ৷ তাই তপসিয়ার বাড়িতে যান পরিবারের সদস্যরা । সেখানে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, আটটা নাগাদ বেরিয়ে গিয়েছেন রেহানা । তপসিয়ার ভাড়াটেরাই ভিকির কথা বলেন ।
জানা গিয়েছে, এ দিকে মহিলার দেহ উদ্ধারের পর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন লালাবাজারের তদন্তকারী আধিকারিকরা । পরিবারের সদস্যরা কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজারে গিয়ে গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ ধরে কথা বলেন । তাঁদের অভিযোগ ছিল, রেহানা বিবির সঙ্গে ঘটনার সময় পাঁচ বছরের এক শিশু ছিল । ঘটনার পর থেকে ওই শিশুর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না ।
মহিলার দেহ উদ্ধারের ঘটনায় তদন্তে নেমে রাতেই ভিকি সাউকে তপসিয়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ । রাতভর চলে দফায় দফায় জেরা । তাতেই অভিযুক্ত শিশুটিকে খালে ফেলে দিয়েছে বলে জানায় ৷ এমনটাই লালবাজারের দাবি ৷ এরপরেই ওই শিশুকে খাল থেকে উদ্ধার করে আনন্দপুর থানার পুলিশ ।