কলকাতা, 30 অগস্ট: 9 অগস্ট সন্দীপ ঘোষের এক ঘণ্টা ! এই একটা ঘণ্টায় তাঁর গতিবিধি নিয়েই যাবতীয় রহস্য দানা বেঁধেছে । ঘটনার কথা হাসপাতাল থেকে ফোনে জানার পর সকাল 10টা নাগাদ আরজি করের উদ্দেশে রওনা দেন তৎকালীন অধ্যক্ষ ৷ তিনি হাসপাতালে পৌঁছন বেলা 11টায় ৷ এই একটা ঘণ্টায় তিনি ঠিক কী কী করেছিলেন, তার খোঁজখবর করতে গিয়েই অনেকগুলো প্রশ্ন উঠে এসেছে গোয়েন্দাদের মনে ৷
পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করে সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, গত 9 অগস্ট যখন আরজি কর হাসপাতালের চারতলার সেমিনার হল থেকে ওই তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়, সেই ঘটনা সন্দীপ ঘোষকে জানানোর জন্য হাসপাতালে তরফ থেকে তাঁকে ফোন করা হয়েছিল । কিন্তু সন্দীপ ঘোষের ফোন সেই সময় বেজে যায় । কেউ ফোন ধরেননি ।
ঘটনার তদন্তের সময় সন্দীপ ঘোষকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি সিবিআইয়ের গোয়েন্দাদের জানান, তিনি সেই সময় শৌচালয়ে ছিলেন । তাই ফোনটা ধরতে পারেননি ৷ সন্দীপ ঘোষ সিবিআইকে জানান, সেদিন তিনি শৌচালয় থেকে বেরিয়ে হাসপাতালে ফোন করার পরই গোটা বিষয়টি জানতে পারেন । আর তারপর সকাল 10টা নাগাদ বেলেঘাটার বাড়ি থেকে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন সন্দীপ ঘোষ । সিবিআই সূত্রের খবর, হাসপাতালে আসার সময় গাড়িতে বসে সন্দীপ ফোন করেন টালা থানার ওসিকে ৷ তাঁর কাছ থেকে গোটা পরিস্থিতি জানতে চান তৎকালীন অধ্যক্ষ ৷ তিনি ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলার নির্দেশ দেন টালা থানার ওসি-কে ৷
কিন্তু টালা থানার ওসি সন্দীপ ঘোষের ফোন পাওয়ার আগেই গোটা বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন এবং তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছেও গিয়েছিলেন । আর এখানেই সিবিআইয়ের প্রশ্ন, সন্দীপ ঘোষ কেন টালা থানার অফিসার ইনচার্জকে ফোন করে ঘটনাস্থল অর্থাৎ 'প্লেস অফ অকারেন্স' ঘিরে রাখার নির্দেশ দিলেন ? তাহলে কি সকাল 10টা পর্যন্ত ঘটনাস্থল উন্মুক্ত অবস্থায় ছিল ? সন্দীপ ঘোষ নির্দেশ দেওয়ার আগে কি সেই স্থল ঘিরে ফেলা হয়নি ? সেদিন সন্দীপ হাসপাতালে পৌঁছন বেলা 11টা নাগাদ ৷ সকাল 10টা থেকে বেলা 11টা - এই এক ঘণ্টায় ঠিক কী কী ঘটেছিল, সেই হিসেবই মেলাতে পারছেন না কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা ।
ঘটনার দিন সন্দীপ ঘোষ সকাল 10টায় বেলেঘাটার বাড়ি থেকে বেরোলেও আরজি কর হাসপাতালে পৌঁছন বেলা 11টা নাগাদ ৷ বাইপাস ধরে এই পথ গাড়িতে করে যেতে সাধারণত এক ঘণ্টার অনেক কম সময়ই লাগে ৷ তাহলে কি সেদিন রাস্তায় যানজট ছিল ? নাকি গাড়িতে বসে একাধিক ফোন করার জন্যই একঘণ্টা পর হাসপাতালে পৌঁছন প্রাক্তন অধ্য়ক্ষ ? এই প্রশ্নগুলোই ঘোরাফেরা করছে তদন্তকারীদের মনে ৷
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, এই এক ঘণ্টার মধ্যে সন্দীপ টালা থানার ওসি ছাড়াও চেস্ট মেডিসিনের এক চিকিৎসক ও নিজের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছিলেন ৷ তাঁদের প্রত্যেকের পৃথক পৃথকভাবে বয়ান রেকর্ড করেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা । তদন্তকারীদের অনুমান, ওই এক ঘণ্টার মধ্যেই তথ্য-প্রমাণ লোপাট হলেও হতে পারে । অবশ্য সেই বিষয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে এখনও কোনও প্রমাণ নেই ।
আজও সল্টলেক সিজিও কমপ্লেক্সে নির্ধারিত সময়মতো পৌঁছে যান আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ । শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা । অন্যদিকে এই ঘটনায় হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দু'জন নিরাপত্তা রক্ষীর বয়ান রেকর্ড করে তাঁদের পলিগ্রাফ পরীক্ষা করার তোড়জোড় করছে সিবিআই ।