কলকাতা, 26 ফেব্রুয়ারি: সন্দেশখালি মামলায় শাহজাহান শেখকে যুক্ত করল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ সোমবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি চলাকালীন ওই তৃণমূল নেতাকে এই মামলায় যুক্ত করা হয় ৷ তবে আদালত শাহজাহান শেখের নাম উল্লেখ করেনি ৷ আদালত জানিয়েছে, সন্দেশখালি মামলায় উত্তর 24 পরগনা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষকে এই মামলায় যুক্ত করা হল । উল্লেখ্য, শাহজাহান উত্তর 24 পরগনা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ৷
প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে একটা বাংলা ও একটা ইংরেজি কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে এই বিষয়টি প্রচার করতে নির্দেশ দিয়েছে ৷ সেখানে মামলায় শাহজাহানের আইনজীবীদের উপস্থিত হতে বলতে বলা হয়েছে আদালতের তরফে । কারণ, এখনও পর্যন্ত তিনি পলাতক বলে আদালত জানতে পারছে । একই সঙ্গে এ দিন প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে শাহজাহান শেখকে গ্রেফতারের উপর কোনও স্থগিতাদেশ নেই ৷ এই বিষয়টি শুনানির সময় বারবার করে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ।
মামলার শুনানির সময় আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল বলেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছু মহিলার সঙ্গে কথা বলেছি, যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন । তাঁরা বলছেন, পুলিশ তাঁদের নাকি বলেছে শাহজাহান আপনাদের ’স্বামী’ । এই আক্রান্ত মহিলারা কিভাবে পুলিশের কাছে যাবে নিজেদের নির্যাতনের কথা বলতে ?’’ একথা শুনে প্রধান বিচারপতি জানতে চান, ‘‘এসব কি সত্যি ?’’
রাজ্যের অ্য়াডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত জানান, 18 ডিসেম্বর 2023 পর্যন্ত 43টি এফয়াইয়ার দায়ের হয়েছিল । তার মধ্যে 42টিতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে । এই সমস্ত এফআইআর গত চার বছর ধরে দায়ের হয়েছে । রাজ্য প্রশাসন বসে নেই, সেটা বলার চেষ্টা করেন তিনি । পাশাপাশি জানান, জমি দখলের অভিযোগে 7টি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল । সবগুলোতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে । 22 ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত 15 জন গ্রেফতার হয়েছে ।
প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘গত চার বছরে গ্রেফতার হয়নি ? এখন সব গ্রেফতার হচ্ছে, যখন মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে ?
এখন সরকার বলছে জমি ফেরত দেওয়া হবে ! চার বছর লেগে গেল কেন এই সমস্ত মামলায় চার্জশিট দিতে, তা আদালতের বোধগম্য নয় ।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রত্যেকের নিজস্ব আত্মপরিচয়, গোপনীয়তা আছে । নিজেদের সুরক্ষার ব্যাপার আছে । তাঁরা জেলা লিগাল সার্ভিস কতৃপক্ষের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানাবেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন । ডিএলএসএ ডিস্ট্রিক্ট লিগাল এড সার্ভিস অথিরিটি (জেলা লিগাল সার্ভিস কতৃপক্ষ)-কে ক্যাম্প করতে বলছি ৷’’
এই মামলায় এর আগে হাইকোর্ট আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়কে আদালত বান্ধব হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন ৷ তিনি এ দিন আদালতে জানান, টিভি চ্যানেলের রিপোর্ট থেকে জানতে পারছি একজন সাংসদ বলেছেন যে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ তদন্তে স্থগিতাদেশ দিয়ে রাখার জন্য তাঁকে (শাহজাহান) গ্রেফতার করা যাচ্ছে না ৷ তখন এজি বলেন, ‘‘বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত ইডির আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনায় সিবিআই ও রাজ্য পুলিশের সিট গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন । সেই তদন্তের উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে রেখেছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ ।’’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘কিন্তু আমরা শাহজাহানকে গ্রেফতারের উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে রাখিনি ।’’ এর পর তিনি বলেন, ‘‘এসপি, ওসি, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ, আমরা মামলায় যুক্ত করছি । হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে একটা বাংলা ও একটা ইংরেজি কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে এই বিষয়টি প্রচার করতে জানাব ।’’
এ দিন এজি আদালতে বলেন, ‘‘144 ধারা জারি থাকাকালীন রাজ্যের শাসক দলের কোনও নেতা 2 নম্বর ব্লকে (সন্দেশখালি) কেউ যাননি । 144 ধারা জারি করা হয়েছিল সন্দেশখালি 2 নম্বর ব্লকের কিছু জায়গায় ।’’ অন্যদিকে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল আবেদন করেন, প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ্য পুলিশের তদন্তও স্থগিত থাকবে । এই ব্যাপারে আদালত ব্যাখ্যা করে বলে দিক । সেই সময় আবারও প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমরা কোথাও গ্রেফতারের উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে রাখিনি ।’’
তাছাড়া রাজনৈতিক নেতাদের সন্দেশখালি যাওয়ার ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘এতে মানুষের ভালোও হতে পারে । খারাপও হতে পারে ।’’ সিঙ্গল বেঞ্চ ও ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের সুবিধা যেন কেউ না নেয়, সেটাও উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম । আগামী 4 মার্চ এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৷ সেদিন সন্দেশখালির বাসিন্দাদের উদ্বেগ নিয়ে আদালতকে বান্ধবকে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে হাইকোর্ট ৷
আরও পড়ুন: