কলকাতা, 3 জুলাই: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৷ পদ্ধতিগত ত্রুটি থাকার কারণে বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে পিছিয়ে গেল এই মামলার শুনানি ৷ পুনরায় মামলা দাখিল করতে নির্দেশ দিলেন বিচারপতি কৃষ্ণা রাও ৷ বৃহস্পতিবার হবে ওই মামলার শুনানি ৷
এ দিন বিচারপতি রাও রাজ্যপালের পক্ষে সওয়ালকারী আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদীর কাছে জানতে চান, যে সমস্ত সংবাদপত্রের বা সংবাদমাধ্যমের খবরকে ভিত্তি করে মামলা করেছেন রাজ্যপাল, তাদের এই মামলায় যুক্ত করা হয়েছে কি না? আইনজীবী জানান, সেটা করা হয়নি । তারপরই বিচারপতি মামলা পুনরায় নথিভুক্ত করতে নির্দেশ দেন ।
রাজ্যপালের তরফে আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদী এ দিন আদালতে বলেন, "সদ্য নির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছুদিন আগে রাজভবনে গিয়ে শপথ নেবেন না বলে জানান। রাজভবনে যাওয়ার বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও কয়েকদিন আগে তীর্যক মন্তব্য করেছেন রাজ্যপালকে নিয়ে । তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ রাজ্যপালকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করছেন ।" বিচারপতি রাও জানতে চান, "কিন্তু রাজ্যেপালের মানহানি করা হয়েছে সেটা আপনি শুধুমাত্র কিছু সংবাদমাধ্যমের খবরের ভিত্তিতে প্রমাণ করবেন কী করে? তারা কী এই মামলায় পার্টি?"
এর উত্তরে রাজ্যপালের আইনজীবী বলেন, "রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যা কথা বলা হচ্ছে তা ইউটিউবে রয়েছে, যেকেউ সেটা দেখতে পারে । শুনতে পারে । রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে রাজ্যপালের ওএসডি-সহ তিন জনকে 160 ধারাতে নোটিশ দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল ।" তবে বিচারপতি রাও জানান, "আপনি মামলা প্রত্যাহার করে পুনরায় নথিভুক্ত করুন । না-হলে পদ্ধতিগত ত্রুটি থেকে যাচ্ছে । আগামিকাল মামলা ফের শোনা হবে ।"
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষের আইনজীবী সঞ্জয় বসু বলেন, "রাজভবনে মহিলারা নিরাপদ বোধ করেন না ৷ এমনই মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ আমরা জানতে পেরেছি যে, মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর এবং অন্যদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করা হয়েছে । তবে সাম্প্রতিককালে রাজভবনের বিরুদ্ধে অভিযোগের দিকে তাকালে বোঝা যাবে মুখ্যমন্ত্রী অনায্য কোনও কথা বলেননি ৷ যেখানে তিনি নিজেই একজন মহিলা । "
তাঁর কথায়, "যদিও আমরা মামলার কপি এখনও হাতে পাইনি ৷ তবে মনে হচ্ছে মানহানির মামলা করে আসলে অন্যান্য রাজনৈতিক বিষয়গুলি থেকে নজর ঘোরাতে চাইছেন রাজ্যপাল ৷ যেমন তিনি নবনির্বাচিত বিধায়কদের অধ্যক্ষের কাছে শপথ নেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন । আমরা এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে ব্যবস্থা নেব ।"
গত সপ্তাহে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, মহিলারা তাঁর কাছে অভিযোগ জানাচ্ছে তাঁরা রাজ্যপালের অফিস রাজভবনে যেতে ভয় পাচ্ছেন ৷ রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে ৷ সেই কারণে মহিলারা সেখানে যেতে ভয় পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই মুখ্যমন্ত্রীর থেকে এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগ অভিপ্রেত নয়, বলে উল্লেখ করে পালটা মন্তব্য করেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ।