কলকাতা, 17 মে: সন্দেশখালির বিজেপি নেত্রী পিয়ালী ওরফে মাম্পি দাসকে গ্রেফতারি মামলায় মুখ পুড়ল রাজ্য পুলিশের ৷ সম্পূর্ণ জামিন যোগ্য মামলায় ডেকে কীভাবে এই স্থানীয় নেত্রীকে জেলে পাঠানো হল, তা দেখে বিস্মিত কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। এই ঘটনায় রাজ্য পুলিশ যে জামিন অযোগ্য ধারা যুক্ত করেছিল, তার উপরেও স্থগিতাদেশ দিল আদালত ৷ গোটা মামলার শুনানিতে রাজ্য পুলিশকে তীব্র ভর্ৎসনা করলেন বিচারপতি ৷ একই সঙ্গে, সন্দেশখালির বিজেপি নেত্রীকে অবিলম্বে মুক্ত করতে হবে বলেও নির্দেশে জানিয়েছেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত ৷ রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের ব্যাখ্যা চাইলেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত ৷
শুক্রবার মামলার শুনানিতে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত মন্তব্য করেন, "জামিন যোগ্য ধারার মধ্যে কী করে জামিন অযোগ্য ধারা দেওয়া হয় ! পুলিশ ছেড়ে দিন, ম্যাজিস্ট্রেট কী করছিলেন ? কেন কেস ডায়রি দেওয়া হয়নি ? তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট কী করছিলেন ? রাজ্য এই কোর্টকে অবজ্ঞা করতে পারে, কিন্তু সুপ্রিম কোর্টকে তো পারে না। অথচ সুপ্রিম কোর্টের একাধিক নির্দেশ আছে, ম্যাজিস্ট্রেট এমন মেকানিকালভাবে ধারা যোগ করার আবেদনে সাড়া দিতে পারে না।" এরপরই বিচারপতি কার্যত বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, "এখনও মহিলা জেলে ! কে এই সবকিছুর পিছনে আছে ? কার মাথা দিয়ে বেরোলো এই সব ? আমি উদ্বিগ্ন ম্যাজিস্ট্রেটের আচরণ দেখে। ন্যূনতম কোর্ট অর্ডারগুলো এরা জানে না ! কলকাতা হাইকোর্টের এমন ক্ষেত্রে 10টা অর্ডার দেওয়া আছে। সুপ্রিম কোর্টের এই সংক্রান্ত অর্ডার সব থানা, পুলিশ এমন কী নিম্ন আদালতেও পাঠাতে হবে।"
পিয়ালী দাসের আর্জিতে অবশ্য জামিনের আর্জি ছিল না। এফআইআর খারিজের আবেদন করেছিলেন সন্দেশখালির বিজেপি নেত্রী। আর সেই মামলাতেই ব্যাতিক্রম হিসাবে বিচারপতি নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে পিয়ালী দাসের জামিন এদিন মঞ্জুর করেন। অবিলম্বে তাঁকে ছাড়ার নির্দেশও দিয়েছেন বিচারপতি। সেই সঙ্গে, নির্দেশে হাইকোর্ট জানিয়েছে, এই ঘটনা পুলিশ সুপারের তত্তাবধানে তদন্ত চলবে। 19 জুন ফের মামলার শুনানি ৷
পিয়ালীর বিরুদ্ধে সন্দেশখালি থানায় এফআইআর দায়ের হয়। প্রথমে তাঁকে 9 মে সাক্ষী হিসাবে নোটিশ দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয় থানায়।ওইদিনই পুলিশ সন্দেশখালির মহিলাদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করে পিয়ালীর বিরুদ্ধে 195-এ ধারায়। এরপর নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করার কথা বলে পুলিশ। 14 মে পিয়ালী আত্মসমর্পণ করতে গেলে তাঁকে সাতদিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় নিম্ন আদালত। এরপরই ক্ষুব্ধ বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত বলেন, "অবিলম্বে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া উচিৎ রাজ্যের।" রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের এই বিষয়ে ব্যাখ্যাও চেয়েছেন বিচারপতি। একই সঙ্গে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত বলেন, "আদালতের কর্তব্য দেখা, কাউকে যাতে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার না করা হয়। এখানে শুধু গ্রেফতার নয়, আবার ওই মহিলাকে আরও 14 দিনের হেফাজতের আবেদনও করেছে পুলিশ !"
আরও পড়ুন
ভোট পরবর্তী হিংসা মামলা, তৃণমূল নেতাদের বাড়িতে পরপর সিবিআই হানা
14 কোটির পর শাহজাহানের আরও 12 কোটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করল ইডি