কলকাতা, 24 সেপ্টেম্বর: শ্লীলতাহানির মিথ্যে অভিযোগে গোপন জবানবন্দি তরুণীর ৷ এতেই ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্ট । শ্লীলতাহানির মিথ্যে অভিযোগের ভিত্তিতে তিন অভিযুক্তকে জেল খাটতে হয়েছে এক বছর । মঙ্গলবার তিন অভিযুক্তের জামিন মঞ্জুর করল বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ । আদালতের নির্দেশ, অবিলম্বে বিচার প্রক্রিয়ার সময় নিম্ন আদালতের বিচারককে বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে । পাশাপাশি মিথ্যা অভিযোগের তথ্য প্রমাণিত হলে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালত বিশেষভাবে ব্যবস্থা নেবে ।
মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থানা এলাকায় 2023 সালের 8 অগস্ট এক নাবালিকাকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে গিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে রাজিবুল মোল্লা-সহ 3 জনের বিরুদ্ধে । পাকসো আইনে মামলা রুজু হয় । অভিযোগের ভিত্তিতে ওই বছরের 9 অগস্ট পকসো আইনে 3 জনকে গ্রেফতার করে বহরমপুর থানার পুলিশ । সেই সময় নাবালিকার বয়স ছিল 17 বছর । 2023 সালের 17 অগস্ট কিশোরীর গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয় । জবানবন্দি দেওয়ার সময় কিশোরীর বয়স হয়ে যায় 18 বছর । গোপন জবানবন্দিতে ঘটনার বিবরণ দেন তরুণী । নিম্ন আদালতে জামিনের আবেদন খারিজ হয় তিন অভিযুক্তের । নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানায় রাজিবুল মোল্লা-সহ 3 জন ।
বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি হয় ৷ তাতে বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "গোপন জবানবন্দিতে দেখা যাচ্ছে, তরুণী ঘটনার কথা জানিয়ে জবানবন্দি দিয়েছে ।" আবেদনকারীদের আইনজীবী বলেন, "আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে ।" অন্যদিকে তরুণীর আইনজীবী বলেন, "আদালত জামিন মঞ্জুর করলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।"
বিস্মিত বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায় বলেন, "কিন্তু আপনার মক্কেল তো গোপন জবানবন্দিতে বলেছে যে, তাকে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে । অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা দায়ের রয়েছে ।" তরুণীর আইনজীবী আরও বলেন, "আমার মক্কেল যখন গোপন জবানবন্দি দিয়েছিল তখন তার উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং ভয় দেখিয়ে এই গোপন জবানবন্দি দেওয়ানো হয়েছিল তাকে ।" বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় তখন বলেন, "আপনাদের মিথ্যা গোপন জবানবন্দির জন্য 3 ব্যক্তি এক বছর অযথা জেল খাটল ? বিষয়টি এতটাই সহজ ? বিষয়কে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত মামলা হিসাবে গ্রহণ করছে ।"
আদালতের এই মামলার দীর্ঘ শুনানি হয় এ দিন ৷ এরপর এ দিন কলকাতা হাইকোর্ট বলে, সামগ্রিক বিষয়টি খতিয়ে দেখে আদালত প্রাথমিকভাবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে অভিযোগকারী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যে গোপন জবানবন্দি দিয়েছে সেটা মিথ্যা । আদালতকে বিভ্রান্ত করেছে । মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে 3 জনকে 1 বছর জেল খাটতে হল । নিম্ন আদালতের বিচারক বিচারের সময় সামগ্রিক বিষয়টি বিবেচনা করবেন । বিচার প্রক্রিয়া চলার পর নথি দেখে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ হলে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থার বিষয়টিও নিম্ন আদালত বিচার করবে । সমাজের কাছে আদালতের এই মনোভাব বা অবস্থান পৌঁছনো উচিত । আইনজ্ঞ মহলের মতে, মিথ্যা অভিযোগ করলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে আদালত শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে ।