হাওড়া, 24 মার্চ: সোমবার বাঙালির দোলযাত্রা উৎসব । আর সেই উৎসব উদযাপন করতে সাধারণ মানুষ ভেষজ আবিরের উপরেই ভরসা রাখছেন । স্মার্টফোনের যুগে এখন অধিকাংশ লোকই অতীতের থেকে বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হয়েছেন । আমবাঙালিরা রং খেলার ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্যের দিকটি বিবেচনা করছেন ।
25 মার্চ দোলপূর্ণিমায় ছোট থেকে বড় সকলেই রং খেলায় মাতবেন । আর এই রং থেকে তাদের গায়ের চামড়ায় যাতে কোনওরকম রোগ না জন্মায়, তাই আগেভাগেই সচেতন সাধারণ মানুষ । ক্রেতা, বিক্রেতা উভয়েই বলছেন এখন দোকানে ভেষজ আবিরের চাহিদাটাই বেশি । মাঝের কিছু বছরে কেমিক্যাল মিশ্রিত জলে গোলা রং ও বালি মিশ্রিত আবিরের বাজার থাকলেও ফের সম্পুর্ণ ভেষজ আবিরের চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে । ক্রেতারা আবির কিনতে গিয়ে আগে ভেষজ আবির চাইছেন । বেশ কয়েক বছর আগে দোলপূর্ণিমার দিনেই রং খেলায় নামতেন সকলে । কিন্তু বর্তমান যুগে দোলযাত্রার অনেক আগে থেকেই বাঙালি বসন্ত উৎসবটা বেশ প্রাধান্য দিয়ে অনেক আগে থেকেই স্কুলে-কলেজে-অফিসে পালিত হচ্ছে । রবি ঠাকুরের গানে আবির উড়িয়ে চলে উৎসব পালন । তাই এখন বিক্রেতারা দোলযাত্রার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই রংয়ের পসরা সাজিয়ে বসেন কিছু লাভের আশায় ।
তেমনই হাওড়া চুনাভাটি এলাকায় দেখা গেল নানা রঙের পিচকারি, টুপি, মুখোশ-সহ নানা রঙের আবির এবং রং নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা । আবির বিক্রেতা বিপ্লব ভট্টাচার্য জানান, তিনি প্রত্যেক বছর রঙের পসরা সাজিয়ে বসেন অনেক আগে থেকেই ৷ এখনও হাতে একদিন আছে ৷ যদিও বিক্রি কিছুটা কমের দিকেই ৷ তবে বর্তমান সময়ে ভেষজ আবিরকেই বেছে নিচ্ছে নতুন প্রজন্ম ৷ তাই এ বার তিনি ভেষজ আবির বেশি পরিমাণে মজুত করেছেন এবং ভেষজ রং বিক্রি করছেন । অতীতের তুলনায় বর্তমানে ভেষজ আবিরের চাহিদা যথেষ্টই বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতারা ।
দোলের জন্য আবির কিনতে এসে গ্রাহক সঞ্জয় মিত্র জানান, তিনি বাড়ির জন্য ভেষজ রঙ কিনছেন স্বাস্থ্যের দিকটি বিবেচনা করে । তিনি বলেন, "অতীতে ভেষজ আবির দিয়েই দোল পালন করা হত । যদিও মাঝে কেমিক্যাল মিশ্রিত রং ঢুকে পড়েছিল । যদিও ফের ভেষজ আবির কেনার প্রবণতা বাড়ছে । আমি বাড়ির জন্য এই ভেষজ আবির কিনেছি । এটা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।"
রং বিক্রেতা বিপ্লব ভট্টাচার্য বলেন, "ভেষজ আবিরের চাহিদা অবশ্যই বেড়েছে । মাঝে এর চাহিদা না থাকলেও এখন ক্রেতারা দোকানে এসে প্রাকৃতিক রঙের আবির চাইছেন । এর পেছনে মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা মুখ্য ৷ আগে বালি মেশানো আবির ছিল, এখন উঠে গিয়েছে । যত ভালো মানের আবির হবে, ততই তার চাহিদা বাড়বে । পিচকারি ছাড়াও আমি বেলুন, মুখোশ, রঙিন চুল ও 12 রঙের ভেষজ আবির রাখি । প্রতি দোলের আগে আমার এই দোকান খোলা থাকে ।"
দোলের আগে যে দারুণ কেনাকাটা চলছে সেটা বলা না গেলেও, সাধারণ মানুষ তাদের পকেটের রেস্তো দেখে সেভাবেই কিনছেন । গত বছরের তুলনায় সামান্য দাম বাড়লেও অনেকে আছেন যাঁরা ভেষজ আবিরের বদলে টাকা বাঁচাতে স্থানীয় রঙ কিনছেন বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতারা । রমজান মাসে দোলের আবহে ভোটের বাজারকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দল ও তাদের প্রার্থীদের জনসংযোগে এই ভেষজ আবিরের উপরেই ভরসা রাখছেন সবাই । বসন্ত ও ভোটের আবহে সাধারণ মানুষের কোন রং এখন মনে ধরে সেটাও একটা আলোচ্য বিষয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের ।
আরও পড়ুন: