মালদা, 25 জানুয়ারি: তদারকি সরকারের জমানায় এখনও স্বাভাবিক নয় বাংলাদেশের পরিস্থিতি ৷ সাম্প্রতিক সময়ে যার প্রভাব পড়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ৷ এ কথা মাথায় রেখে প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে সীমান্তে জারি রয়েছে লাল সতর্কতা ৷
বিএসএফ-এর তরফে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভারত-বাংলা সীমান্তে 10 দিনের 'ওপস অ্যালার্ট' মহড়া শুরু হয়েছে ৷ মালদার সুকদেবপুর ও সবদলপুর বিওপিকে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে ৷ ইতিমধ্যে সীমান্তে জওয়ানের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে ৷ প্রয়োজনে রাতে অতিরিক্ত জওয়ান নিয়োগ করা হবে ৷ প্রতিটি সীমান্ত চৌকিতে অন্তত চারজন করে জওয়ান নিযুক্ত করা হয়েছে ৷ 24 ঘণ্টা বর্ডার পেট্রোলিং চলছে ৷ দিনে ও রাতে জলপথেও চলছে বিশেষ নজরদারি ৷
কাঁটাতারের ওপারে ভারতীয় জমির ফসল নষ্টের অভিযোগে সরব হয়েছেন এপারের কৃষকরা ৷ সেই জমিতে চাষ করতে গিয়ে বাংলাদেশিদের হামলার শিকারও হয়েছেন তাঁরা ৷ এসব নিয়ে ক’দিন আগেই মালদায় উত্তপ্ত হয়েছিল কালিয়াচক 23 নম্বর ব্লকের সুকদেবপুর সীমান্ত ৷ তার উপর ওপার বাংলায় এখন যুদ্ধের জিগির ৷ সে দেশের নাগরিকদের একাংশের সঙ্গে তাতে মদত দিচ্ছেন কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও ধর্মগুরুও ৷ এসব কারণে রবিবার প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে সজাগ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ৷ শুধু মালদা কিংবা গৌড়বঙ্গের তিন জেলা নয়, সম্পূর্ণ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে জারি করা হয়েছে 'রেড অ্যালার্ট' ৷ আগামী 31 জানুয়ারি পর্যন্ত এই অ্যালার্ট জারি থাকবে বলে জানিয়েছেন মালদায় কর্মরত এক বিএসএফ আধিকারিক ৷
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এক আধিকারিক জানান, “বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের মোকাবিলায় আমরা তৈরি রয়েছি ৷ সীমান্তে লাল সতর্কতা জারি রয়েছে ৷ চলছে নাকা চেকিং ৷ সন্দেহভাজন কাউকে দেখলেই তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ৷ এই মুহূর্তে কাঁটাতারের পাশাপাশি কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না ৷ ভারতীয় কৃষকদের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে জমিতে যেতে দেওয়া হচ্ছে৷ তবে বিকেল তিনটের মধ্যে তাঁদের ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ তাঁদের নিরাপত্তার জন্য জওয়ানরা কাঁটাতারের ওপারে ভারতীয় ভূখণ্ডে পাহারা দিচ্ছেন ৷ আগামী 31 জানুয়ারি পর্যন্ত এভাবেই চলবে ৷”
মালদার যে দু'টি সীমান্ত এলাকায় সম্প্রতি উত্তেজনা ছড়িয়েছে, সেই সুকদেবপুর ও সবদলপুর গ্রাম দু'টি বাখরাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে ৷ ওই পঞ্চায়েতের প্রধান আবদুর রহিম ইটিভি ভারতকে জানান, “10 জানুয়ারি থেকেই সীমান্তে বিএসএফ-এর নিরাপত্তা অনেক বেড়ে গিয়েছে ৷ স্থানীয় মানুষজনকেও কাঁটাতারের ধারে যেতে দেওয়া হচ্ছে না ৷ শুধুমাত্র ভারতীয় কৃষকদের জমিতে যাওয়ার জন্য ছাড় দেওয়া হচ্ছে ৷ এর মধ্যে সীমান্তে নতুন করে কোনও ঝামেলা হয়নি ৷ পুলিশও সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় নিয়মিত টহলদারি চালাচ্ছে ৷ আশা করা যাচ্ছে, প্রজাতন্ত্র দিবস নির্বিঘ্নেই পার হবে ৷”
পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব জানিয়েছেন, “প্রজাতন্ত্র দিবসকে কেন্দ্র করে গোটা জেলাতেই নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে ৷ সমস্ত হোটেল ও লজগুলিতে নজরদারি চালানো হচ্ছে ৷ ট্রেন, বাস, স্টেশন, শপিং মল, বাসস্ট্যান্ড, বাজার সহ ভিড়প্রবণ জায়গাগুলিতে চলছে বিশেষ তল্লাশি ৷ গোটা জেলায় সাদা পোশাকের পুলিশ মানুষের ভিড়ে মিশে নিজেদের কাজ করে যাচ্ছেন ৷ সীমান্ত এলাকার থানাগুলিকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷”
পূর্ব রেলের মালদা ডিভিশনের ম্যানেজার মণীশকুমার গুপ্তাও জানান, “প্রজাতন্ত্র দিসবকে কেন্দ্র করে এই ডিভিশনের সমস্ত স্টেশন এবং রেল লাইনে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে ৷ সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে প্রতিটি বড় স্টেশনে নজরদারি চালানো হচ্ছে ৷ 24 ঘণ্টা লাইন দেখাশোনা করছেন রেলকর্মীরা ৷ আরপিএফ-এর তরফে স্নিফার ডগ দিয়ে স্টেশনে তল্লাশি চলছে ৷”