মালদা, 24 অক্টোবর: রাজনৈতিক সংঘর্ষে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রতুয়া-1 ব্লকের ভাদো গ্রাম পঞ্চায়েতের রামপুর গ্রাম ৷ কংগ্রেস ও তৃণমূলের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আটজন ৷ এদের মধ্যে দু'জন গুরুতর জখম হয়েছেন ৷ তাঁদের মালদা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷
বাকিরা রতুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৷ সংঘর্ষে দেদার বোমাবাজি, এমনকী গুলি চালানোর অভিযোগও রয়েছে ৷ গ্রামে যায় রতুয়া থানার পুলিশ ৷ শুরু হয় ধরপাকড় ৷ বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে ৷ গ্রেফতার করা হয়েছে দু’পক্ষের দু’জনকে ৷ ঘটনার প্রেক্ষিতে গোটা এলাকা থমথমে হয়ে রয়েছে ৷ চলছে পুলিশ টহল ৷
রামপুর গ্রামে কংগ্রেস ও তৃণমূলের ঝামেলা নতুন নয় ৷ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই এলাকায় জয় পায় কংগ্রেস ৷ কংগ্রেসের বিজয় মিছিলে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ৷ এ নিয়ে সংঘর্ষ বেঁধে যায় ৷ সেই ঘটনায় ফটিকুল হক নামে এক কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয় ৷ ঘটনার প্রেক্ষিতে তখন দু'পক্ষই একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে ৷ সেই সময় পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করলেও বাকিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় ৷
ওই মামলার বেশিরভাগ অভিযুক্ত জামিন পেয়েছে ৷ তারা গ্রামে ফিরেও এসেছে ৷ তারপর থেকে ফের শুরু হয়েছে দু'পক্ষের বিবাদ ৷ সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এ দিন সকালে দু'পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয় ৷ অভিযোগ, সংঘর্ষে ছয় তৃণমূল কর্মী আহত হয়েছেন ৷ কংগ্রেসের দুই কর্মীও আহত হন ৷ আহতদের প্রথমে রতুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও দু'জনকে সঙ্গে সঙ্গে মালদা মেডিক্যালে রেফার করে দেওয়া হয় ৷ এই ঘটনায় তৃণমূলের তরফে 21 জনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে রতুয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৷
গ্রামের তৃণমূল কর্মী নাইম শেখ বলেন, "আমি সকালে কাকার বাড়ির পাশে বসেছিলাম ৷ হঠাৎ সাদিকুল এসে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ৷ ভোটের সময় যে মারামারি হয়েছিল, তার জন্যই সে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল ৷ আমাকে বাঁচাতে কাকারা বেরিয়ে এলেই মারামারি শুরু হয়ে যায় ৷ ওরা কাকাদের লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে, গুলি চালায় ৷ আমি তখন বাড়ির দিকে চলে গিয়েছিলাম ৷ কাকা আর কাকাতো ভাইয়ের গুলি লেগেছে ৷ ওদের মালদা নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷"
এ দিকে কংগ্রেস কর্মী সাবিনা খাতুনের বক্তব্য, "আজ সকালে আমার দেওর পাট বিক্রি করতে যাচ্ছিল ৷ সেই সময় দেওরের সামনে মোস্তাফা আর মালেক বোমা ফাটাতে শুরু করে৷ ওরা সব তৃণমূলের ৷ কেন বোমা ফাটাল বুঝতে পারছিলাম না ৷ ভয়ে দেওর বাড়ি ফিরে আসে ৷ ইট মেরে আমাদের বাড়ির চালা ভাঙচুরও করেছে ওরা ৷ গ্রামে পুলিশ এসেছে ৷ আমরা উপযুক্ত তদন্ত দাবি করছি ৷"
এলাকার কংগ্রেস নেতা সাদিকুল ইসলাম বলেন, "ওরা গতকাল থেকে আমাদের হুমকি দিচ্ছে ৷ আমার এক কাকাতো ভাইকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়েছে ৷ রতুয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি ৷ ভাইয়ের খুনের আসামি মোস্তাফার বাড়ি থেকে বোমা উদ্ধার হয়েছে ৷ রতুয়া থানার পুলিশ এখন সেই বোমা লুকোনোর চেষ্টা করছে ৷"
অন্যদিকে, তৃণমূলের ভাদো অঞ্চল চেয়ারম্যান নাসিম আখতার বলেন, "আমাদের ছ’জনকে রক্তাক্ত করে দিয়েছে ৷ দু’জনকে মালদা মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে ৷ বাকিরা রতুয়া হাসপাতালে ভর্তি ৷ এই ঘটনায় ওদের 21 জনের নামে রতুয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৷ ওদের সাদিকুল নামে যে ছেলেটি রয়েছে সে শুধু এই গ্রামের নয়, ভাদো অঞ্চলের কুখ্যাত দুষ্কৃতী ৷ সেকথা সবাই জানে ৷ ওর নামে একাধিক মামলা রয়েছে ৷"
রতুয়া থানার এক আধিকারিক বলেন, "এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে ৷ গ্রামে পুলিশি টহল চলছে ৷ পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে ৷ গোটা ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে ৷"