ব্যারাকপুর, 30 জুলাই: ফের আক্রান্ত আইনের রক্ষক! উর্দিধারী পুলিশ আধিকারিককে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল ব্যারাকপুর পুরসভার 20 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ৷ যদিও ওই ঘটনাটি এপ্রিল মাসের শেষে ঘটেছিল ৷ ট্রাফিক পুলিশের এসআই ওমকার বন্দ্যোপাধ্যায়কে মারধরের এই ভিডিয়োটি এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনারকে এবিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছেন বিজেপি নেতা কৌস্তভ বাগচি ৷
সেই সঙ্গে শাসকদলের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীদের হাত থেকে যে পুলিশেরও রেহাই নেই ৷ সেকথাও এক্স হ্যান্ডেলে মনে করিয়ে দিয়েছেন এই বিজেপি আইনজীবী-নেতা ৷ যদিও, মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে যাবতীয় ঘটনার দায় ওই পুলিশ কর্তার ঘাড়েই চাপিয়েছেন অভিযুক্ত কাউন্সিলর রমেশ সাউ ৷
বিজেপি নেতা বলেন, "লোকসভা নির্বাচনের সময় তৃণমূলের পক্ষ থেকে প্রচার করে বলা হয়েছিল ব্যারাকপুরে গুন্ডারাজ খতম করা হবে। এই তো তার নমুনা! শাসকদলের একজন জনপ্রতিনিধি নিজেই গুন্ডাদের নিয়ে গিয়ে মারধর করছে পুলিশ অফিসারকে। আমরা বারবার বলেছি, এরাজ্যে সাধারণ মানুষ থেকে বিরোধী দলের কর্মী, সমর্থক কেউই সুরক্ষিত নন। এখন পুলিশও সুরক্ষিত নয়, দেখলাম। পুলিশ কমিশনারের কাছে অনুরোধ, তৃণমূলের দলদাস হয়ে নয়, একজন পুলিশ আধিকারিক হিসেবে আপনার সহকর্মীর পাশে দাঁড়ান। নইলে, আগামিদিনেও আরও কতকিছু দেখতে হবে আপনাকে।"
ঘটনার সূত্রপাত, ওই পুলিশ কর্তার বাড়ির সামনে নির্বাচনী ব্যানার টাঙানোকে কেন্দ্র করে। 30 এপ্রিলের ওই ঘটনার আপত্তি জানালে প্রথমে কাউন্সিলরের অনুগামীদের রোষের মুখে পড়েন ট্রাফিক পুলিশের সাব ইনস্পেক্টরের স্ত্রী। তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এরপর তিনি তাঁর স্বামী ওমকার বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিষয়টি জানান ৷ খবর পেয়ে উর্দি পরেই সেখানে যান ওই পুলিশ আধিকারিক ৷ প্রথমে দু-এক কথায় শুরু হয় বচসা বাধে দুই পক্ষের মধ্যে ৷
পরে, তৃণমূল কাউন্সিলরের অনুগামীরা মারমুখী হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ। সেই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ব্যারাকপুর পৌরসভার 20 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রমেশ সাউ ও তাঁর ছেলে বিমল। অভিযোগ, বিষয়টির মীমাংসা করার বদলে উলটে শাসকদলের কাউন্সিলর, ট্রাফিক পুলিশ আধিকারিককে মারধর করার ইন্ধন দেন ৷ তাঁর সামনেই উর্দি পরা অবস্থায় পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর ওমকার বন্দ্যোপাধ্যায়ের গায়ে হাত তোলা হয় এবং তাঁকে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে ৷
বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলে তৃণমূল কাউন্সিলর ও তাঁর দলবলের এই তাণ্ডব। আর এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে ব্যারাকপুরের ইটপুল এলাকায়। এদিকে, তিন মাসের আগের এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পুলিশ অভিযুক্ত কাউন্সিলর কিংবা তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি ৷ উলটে, দু'পক্ষকে থানায় ডেকে মীমাংসা করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে ৷ স্বভাবতই প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশের ভূমিকা ৷ এনিয়ে আক্রান্ত পুলিশ আধিকারিক অথবা তাঁর পরিবারের তরফ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া না-মিললেও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন বিজেপির আইনজীবী নেতা কৌস্তভ বাগচি।
অন্যদিকে, যাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ আধিকারিককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে সেই অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলর রমেশ সাউ বলেন, "পুরসভার জমিতেই নির্বাচনী ব্যানার টাঙাতে গিয়েছিল দলের ছেলেরা। অথচ, কিছু না-জেনেই ওই পুলিশ আধিকারিকের স্ত্রী নোংরা ভাষায় গালাগালি করছিল। সেটা জানতে পেরে সেখানে আমি গিয়েছিলাম। কিন্তু, তিনি আমার সঙ্গেও ঝগড়া করা শুরু করে দেন। তখন ওঁকে বলা হয়, স্বামীকে খবর দিতে। এরপর, ওই ট্রাফিক পুলিশ কর্তা ঘটনাস্থলে এসে দলের ছেলেদের মারধর করার চেষ্টা করেন। তা নিয়ে দু'পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি বাধলে আমি ওনাকে সরিয়ে দিই। কিন্তু, তিনি বাড়ি থেকে বটি এনে সবাইকে হুমকি দিতে শুরু করেন। মারধর, হুমকি, গালিগালাজ কিছুই করা হয়নি ওঁকে, যা করার উনিই করেছেন। এটুকু বলতে পারি।"
বাড়িতে ঢুকে মহিলাকে মারধরের ভিডিয়ো ভাইরাল, গ্রেফতার তৃণমূল নেতা