ভাটপাড়া, 13 জানুয়ারি: ডাকনাম ভূত । এক জায়গায় কখনও তাকে বেশিক্ষণ দেখা যায় না। ভূতের মতোই চোখের পলকে অবস্থান বদল করে বলে এমন নাম । কখনও শিয়ালদা স্টেশন তো পরক্ষণেই হাওড়া ময়দানের বাসস্ট্যান্ড। প্রয়োজন মতো চেহারায় বদলও এনেছিল। কিন্তু পুলিশের দক্ষতার কাছে তার সব জারিজুরি খতম। ভাটপাড়ার তৃণমূল নেতা অশোক সাউ খুনে অন্যতম অভিযুক্ত ভূত ওরফে সুমিত পাসোয়ানকে গ্রেফতার করল পুলিশ । বয়স 19 বছর ৷ সোমবার সকালে ব্যারাকপুরের জগদ্দল রেলস্টেশন চত্বর থেকে পাকড়াও করা হয় তাকে। সব মিলিয়ে তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত মোট সাতজনকে গ্রেফতার করেছে ।
সোমবার দুপুরে ধৃত সুমিত পাসোয়ান ওরফে 'ভূত'কে ব্যারাকপুর আদালতে পেশ করে পুলিশ । আদালতে ঢোকার সময় সে দাবি করে, অশোক সাউয়ের লোকজন আকাশ প্রসাদকে মেরে ফেলেছিল । ভাই'কে খুনের বদলা নিতেই অশোক সাউকে খুন করা হয়েছে। কোনও টাকা পয়সার লেনদেন হয়নি।
গত বছরের 13 নভেম্বর রাজ্যের ছয় বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিন দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হন তৃণমূল নেতা অশোক সাউ। তিনি দলের ভাটপাড়া পুরসভার 12 নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন সভাপতি ছিলেন । প্রকাশ্যে জনবহুল এলাকায় একের পর এক গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয় অশোক সাউয়ের শরীর। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি নর্থ গণেশ বিশ্বাসের নেতৃত্বে সিট গঠন করেন পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া।
তদন্তে নেমে সিটের আধিকারিকরা জানতে পারেন, 2020 সালে ভাটপাড়ার পালঘাট রোডে আকাশ প্রসাদ নামে এক সমাজবিরোধীকে পিটিয়ে মারা হয়েছিল । ওই খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে ছিলেন তৃণমূল নেতা অশোক সাউ। সেই থেকেই অশোকের উপর আক্রোশ ছিল নিহত আকাশের ভাই সুজল প্রসাদের । অভিযোগ, দাদার খুনের বদলা নিতে সুজল 2023 সালে অশোককে একবার খুনের চেষ্টাও করেছিল । যদিও, সেবার বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি ।
কিন্তু তারপরও সুজল অশোকের পিছু ছাড়েনি । এরপর, ভোটের দিন চায়ের দোকানে ঢুকে সুজল-সহ তাঁর দলবল অশোক সাউকে গুলি করে খুন করে । নিহত অশোকের পরিবারের পক্ষ থেকে জগদ্দল থানায় সুজল-সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন । তদন্ত নেমে ঘটনার পরের দিনই পুলিশ কাউসার আলি নামে এক দুষ্কৃতীকে প্রথমে গ্রেফতার করে । তাকে জেরা করে পুলিশ তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় সুজল পাসোয়ানের জড়িত থাকার কথা জানতে পারে । 16 নভেম্বর ভোররাতে টিটাগড়ের এক গোপন ডেরা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে সুজলকে ।
এরপর, ধৃত কাউসার ও সুজল পাসোয়ানকে জেরা করে পুলিশ একে একে বাকি অপরাধীদের সন্ধান পায় । খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সুজল প্রসাদকে ধরতে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয় । সেই মতো গত 18 নভেম্বর বিহার থেকে অন্যত্র গা ঢাকা দেওয়ার আগেই বর্ধমান রেল স্টেশনে পুলিশের জালে ধরা পড়ে যায় সে । তাকে জেরা করেই সিটের আধিকারিকরা ওই খুনের ঘটনায় ভূত ওরফে সুমিত পাসোয়ানের জড়িত থাকার কথা জানতে পারেন ।
গত দু'মাসে ভূত বেশ কয়েকবার বাড়িতে ফিরেছে । মায়ের সঙ্গে দেখা করেছে। কিন্তু পুলিশ পৌঁছনোর আগেই তড়িৎ বেগে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছে । রবিবার রাতে পুলিশের কাছে খবর আসে ভূত জগদ্দলে ঢুকেছে । সেইমতো সাদা পোশাকের পুলিশ চারদিকে ফাঁদ পেতে রাখে। কিন্তু ভূতকে ধরতে পারেনি । ভোররাতে ট্রেন ধরে ভূত শিয়ালদা'র দিকে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছিল । কিন্তু, স্টেশন চত্বর থেকে পুলিশ হাতেনাতে পাকড়াও করে তাকে ।